পাতাবাহার জাতীয় গাছ সৌন্দর্য না মৃত্যু ফাঁদ

নগর জীবনের ব্যস্ততার মাঝে এক চিলতে সবুজের স্পর্শ এনে দেয় ছোট্ট টবের গাছ। বিশেষ করে ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দা, ছাদ বা সিঁড়ির কোণায় পাতাবাহার জাতীয় গাছের উপস্থিতি হয়ে উঠেছে সৌন্দর্য ও শৌখিনতার প্রতীক। তবে এসব গাছের সৌন্দর্য যতই মন কাড়ুক না কেন, ভুল তথ্য বা ভীতিকর গুজব থেকে সাবধান থাকা জরুরি।

সম্প্রতি একটি দাবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যেখানে বলা হয়—পাতাবাহার জাতীয় গাছ বিশেষ করে ডিয়েফেনবাকিয়া গাছের পাতা গিলে ফেললে শিশুদের মৃত্যু হতে পারে মাত্র এক মিনিটে, আর প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যু ঘটতে পারে ১৫ মিনিটের মধ্যে। এমনকি হাত দিয়ে গাছ ধরার পর সেই হাত চোখে গেলে অন্ধত্ব হতে পারে বলেও দাবি করা হয়েছে।

তবে এই ভীতিকর দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের ফার্মাকোলজি বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পিটসবার্গ পয়জন সেন্টারের সাবেক পরিচালক অ্যাড ক্রেনজেলেক এই বিষয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ফ্যাক্টচেকিং সংস্থা Snopes-কে তিনি জানান, “ডিয়েফেনবাকিয়া বা একই গোত্রের অন্য গাছগুলো বিষাক্ত হলেও প্রাণঘাতী নয়।” তার ভাষায়, “আমি আমার ক্যারিয়ারে হাজারো বিষক্রিয়ার কেস পর্যালোচনা করেছি, কিন্তু কখনও এই গাছকে প্রাণঘাতী হিসেবে দেখিনি।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, এই গাছের পাতায় ক্যালসিয়াম অক্সালেট নামে একটি রাসায়নিক উপাদান থাকে, যা ত্বক বা মুখের ভেতরে লাগলে জ্বালা, ব্যথা এবং ফোলা সৃষ্টি করতে পারে। শিশুদের জন্য এটি অস্বস্তিকর এবং বিপজ্জনক হলেও তাৎক্ষণিক মৃত্যু ঘটায় না। চোখে লাগলেও সাময়িক জ্বালা হতে পারে, তবে অন্ধত্বের আশঙ্কা নেই।

সতর্কতা জরুরি, আতঙ্ক নয়: বিশেষজ্ঞদের মতে, গাছের পরিচর্যায় সবসময়ই সচেতনতা অবলম্বন করা উচিত। যেকোনো গাছ ছোট শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তবে গুজব বা ভীতিকর তথ্য ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরি না করে বৈজ্ঞানিক তথ্য যাচাই করে নেওয়াই হলো সঠিক পথ।

সৌন্দর্যের পাশাপাশি সচেতন থাকুন, তবে অপ্রমাণিত ভয়কে বিশ্বাস করে প্রকৃতির প্রতি অনাস্থা গড়ে তুলবেন না।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ