গভীর আকুতিপূর্ণ মিনতি, অসীম অনন্ত প্রেমময় আল্লাহর নিকট নিজেকে আত্মসমর্পণ ও অশ্রুসিক্ত আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো পবিত্র হজের পর মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ তাবলিগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমার শুরায়ী নেজামের তত্ত্বাবধানে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপ।
ইজতেমা ময়দানের বিদেশি নিবাসের পূর্ব পাশের মঞ্চ থেকে এসব লাখো মানুষের কাঙ্ক্ষিত আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলীগ জামায়াতের বিশিষ্ট বুজুর্গ আলেমে দ্বীন হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের আহমেদ।
আজ রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টা ১১ মিনিট থেকে শুরু করে ৯টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত প্রথমে ১২ মিনিট আরবিতে ও পরে বাংলায় ১২ মিনিটসহ ২৪ মিনিট স্থায়ী আবেগঘন আখেরি মোনাজাতে সমগ্র বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, মুক্তি, সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি, নিরাপত্তা, ইহ ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনা করে, বিভেদ ভুলে ঐক্যের আহ্বানে মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে কাকুতি মিনতি জানানো হয়। গভীর ভাবাবেগপূর্ণ পরিবেশে ‘আমীন, আলাহুম্মামীন’ ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় টঙ্গীর আকাশ-বাতাস।
রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র বাংলাদেশের প্রায় কয়েক লক্ষাধিক মুসল্লি ছাড়াও আখেরি মোনাজাতে অংশ নিয়েছেন বিশ্বের অর্ধশতাধিক বিদেশি রাষ্ট্রের প্রায় ২ সহস্রাধিক ধর্মপ্রাণ মুসলমান।
আরো পড়ুন
মোনাজাতে অযুত কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে রাহমানুর রাহীম আলাহর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব। সবাই যেন কিছু সময়ের জন্য আল্লাহর প্রেমে দিওয়ানা হয়ে ভুলে গিয়েছিল হিংসা-বিদ্বেষ ও ভেদাভেদ। আমীর-ফকির, মনীব-ভৃত্য, ধনী-গরিব, নেতাকর্মী নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশা ও গোষ্ঠীর মানুষ পরওয়ারদেগার আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে নিজ নিজ কৃতকর্মের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন।
বিশাল জনসমুদ্র থেকে মধ্যাহ্নের আকাশ কাপিয়ে ধ্বনি উঠে-‘ইয়া আল্লাহ, ইয়া আল্লাহ’। আখেরি মোনাজাতের সময় মুঠোফোন, বেতার, ওয়ারলেস সেট, ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া এবং স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরো লাখ লাখ মানুষ এক সঙ্গে হাত তুলেছেন ক্ষমাশীল পরওয়ারদিগারের শাহী দরবারে। গুনাহগার, পাপী-তাপী বান্দা প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা চেয়ে কান্নায় চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছেন।
আরো পড়ুন
সকাল থেকে দিক নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখো মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে বেলা ৯টা ৫ মিনিটে।
জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে আবেগঘন পিনপতন নীরবতা। যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তুলেন আল্লাহর দরবারে। আখেরি মোনাজাতকে ঘিরে লাখ লাখ মুসলমান যেন ভেঙে পড়েছিলেন টঙ্গীতে। রাজধানী ঢাকা ছিল প্রায় ফাঁকা। টঙ্গী, গাজীপুর, উত্তরাসহ চারপাশের এলাকার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা, মার্কেট, বিপনীবিতান, অফিসসহ সব কিছু ছিল বন্ধ।
এ ছাড়া হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মা ও বোনেরা এ আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। সবাই প্রাণান্তকর চেষ্টা ছিল দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের সঙ্গে মোনাজাতে শরীক হয়ে নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা। ২০ মিনিটের মোনাজাতে মাওলানা জুবায়ের আহমেদ প্রথম ৯ মিনিট মূলত পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। শেষ ১১ মিনিটে বাংলা ভাষায় দোয়া করেন।