সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াচ্ছে থাইল্যান্ড

২০৩৬ সালের মধ্যে তার মোট জ্বালানির ৩০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে পাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে থাইল্যান্ড। চীনের সস্তা প্রযুক্তির সহায়তায় ইতিমধ্যে দেশটি সৌরশক্তিতে অনেকখানি এগিয়ে গেছে৷উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডের সিরিন্দহর্ন বাঁধের উপর অবস্থিত সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম। ভাসমান এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বছরে ৩৬ হাজার পরিবারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য যথেষ্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। তানোম মুংফিয়া সেখানে কার্যক্রম পরিচালনা করেন এবং কয়েক বছর আগে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সবকিছু মসৃণভাবে চলছে।

তিনি জানান, শুধুমাত্র এই দ্বীপেই ১৪০ মিটার প্রস্থ এবং ৫০০ মিটার দীর্ঘ এলাকা জুড়ে প্রায় ২০ হাজার সৌর প্যানেল আছে। এই ধরনের মোট সাতটি দ্বীপে প্রায় এক লাখ ৪৪ হাজার ৪২০টি প্যানেল আছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রক্ষণাবেক্ষণে যেন পরিশ্রম কম হয় সেভাবেই এটি তৈরি করা হয়েছে। পরিষ্কারের কাজটি করে বৃষ্টি, আর প্যানেলগুলি পানির অপচয় কমাতে সাহায্য করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে শীর্ষস্থানে যাওয়ার চেষ্টা করছে থাইল্যান্ড। কর ছাড়, প্রণোদনা এবং সবজায়গায় এই জাতীয় ছোট সোলার লাইট দেখা যাচ্ছে। এমনকি রাস্তায় বাতি জ্বালাতেও এখন সৌরশক্তি ব্যবহার হচ্ছে। সৌরশক্তি নিয়ে যারা কাজ করছে তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা। ঠিক একটা সেলফোনের মতো। নতুন মডেল বের হলে তার প্রতি আর আগ্রহ থাকে না। আর পুরনো মডেলটা কেউ কিনবে না। ব্যাপারটা একইরকম।

আপনি যদি দ্রুত বিক্রি করতে না পারেন, তাহলে পুরনো মডেলটা স্টকে পড়ে থাকবে। প্রতি তিন মাসেই এমনটা হয়ে থাকে, বলেন গ্রিন এনার্জির সিইও পল সান্তাউই। থাইল্যান্ডে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ প্যানেল এখনও চীন থেকে আমদানি করা হয়, কিংবা থাইল্যান্ডে পরিচালিত চীনা কোম্পানিগুলো তৈরি করে থাকে। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পিপিএম সোলার কোম্পানি তার কৌশল পরিবর্তন করছে। একটি সত্যিকারের স্থানীয় সাপ্লাই চেন তৈরি করতে তারা থাই টিভি নির্মাতা থেকে শুরু করে ফ্রিজ প্রস্তুতকারকদের খুঁজছে। তারপরও বর্তমানে তাদের কাঁচামালের ৭০ শতাংশ চীন থেকে আসছে।

পিপিএম সোলারের সিইও কৃত্তিন পর্নপিলায়লাক বলেন, ভবিষ্যতে কোনো যন্ত্রাংশ চীনে তৈরি বা কাঁচামাল চীন থেকে আসছে কিনা, তা বিবেচ্য হবে না। বিবেচ্য হবে, ঐ কোম্পানির মালিক কে, ঐ কোম্পানির কাঁচামাল কোথা থেকে আসছে। ফলে আমরা যদি যাচাই করতে পারি এবং নিশ্চিত হতে পারি যে, থাই উৎপাদক ও থাই সাপ্লাই চেন আমাদের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী কাজ করতে পারছে, আমাদের যত পণ্য দরকার তা দিতে পারছে, তাহলে সেই পণ্যটি নিশ্চিতভাবেই কর হ্রাস পাওয়ার উপযুক্ত হবে।

বর্তমানে যে শুল্ক ব্যবস্থা আছে, সেটি খুব একটা কার্যকর নয়। থাইল্যান্ডের অনেক কোম্পানি যারা নিয়ম মেনে চলে তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর। এই বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ব্যাপক শুল্কের বিপরীত প্রভাব পড়ে- যা মার্কিন অর্থনীতিকে সাহায্য করার চেয়ে বেশি ক্ষতি করে। কারণ, যেটা ঘটবে তা হলো, একবার খুব বেশি শুল্ক বাধা তৈরি হলে, দেশীয় বাজারে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হবে যেখানে সেই কোম্পানিগুলি বিশ্বাস করবে যে, তারা সুরক্ষিত, এবং তাদের আর নতুন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করতে হবে না, বা বিশ্ববাজারের জন্য নিজেদের আর প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে হবে না।

এটা হয়ত শুরুতে মার্কিন কোম্পানিগুলিকে সাহায্য করবে, কিন্তু মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে এটা তাদের জন্য খুব কঠিন হবে, বলে মনে করেন থাইল্যান্ডের থাম্মাসাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিরোট আলী। পিপিএম সোলার আপাতত নিজ দেশের দিকে বেশি মনোযোগী হচ্ছে। তাদের প্যানেলগুলো শিগগিরই বাড়িঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে। আগামী দশ বছরে সৌরশক্তি ক্ষমতা দ্বিগুণ করতে চায় থাইল্যান্ড। ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনেরও পরিকল্পনা করছে দেশটি। ততদিন পর্যন্ত দেশটি সূর্যের আলো কতখানি গ্রহণ করতে পারবে তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে। সূত্র: ডয়চে ভেলে

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ