বাংলাদেশসহ দ.এশিয়ায় ভয়াবহ সব বন্যা

কয়েক সপ্তাহ ধরে টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। বন্যায় প্রাণহানি ও অবকাঠামোগত ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কা প্রতি বছর বর্ষায় ক্ষতির মুখে পড়ে, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই দুর্যোগ এখন আরও তীব্র, অনিয়ন্ত্রিত এবং ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে।বিশেষজ্ঞদের মতে, শিল্পায়ন, বন উজাড়, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার এবং যানবাহনের দূষণ এই পরিবেশগত দুরবস্থার মূল কারণ। হিমালয়ের হিমবাহ দ্রুত গলে যাওয়াও পাকিস্তান ও ভারতের জন্য বড় বন্যার ঝুঁকি তৈরি করেছে। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

২০২০ সালের পর দক্ষিণ এশিয়ায় বড় বন্যার তালিকা নিচে দেয়া হলো। ২০২২ সালের পাকিস্তানের ইতিহাসের ভয়াবহতম বন্যা হয়। দেশের এক-তৃতীয়াংশ পানির নিচে চলে যায়। এতে প্রাণহানি এক হাজার ৭০০ জনের বেশি, বাস্তুচ্যুত হয় দশ লাখের বেশি মানুষ। এতে আর্থিক ক্ষতি হয় ৩২ বিলিয়ন ডলার। এসময় দক্ষিণ সিন্ধুতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭–৮ গুণ বেশি বৃষ্টিপাত হয়।

২০২৪ সালের বাংলাদেশের ৩৪ বছরে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে এক কোটি ৮০ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর বাস্তুচ্যুত হয় পাঁচ লাখেরও বেশি। মৃত্যু হয় কমপক্ষে ২০ জনের। রাস্তা, কৃষি, মাছ ও গবাদি পশু খাতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। টানা ভারী বৃষ্টিপাত এবং নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ৬৪ জেলার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১১টি। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নোয়াখালীসহ দক্ষিণের জেলাগুলো।

২০২২ সালের মে মাসে ভারত-বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ৯০ লাখের বেশি মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রাণহানির সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় তিন শতাধিক।

২০২১ সালের ভারতের মহারাষ্ট্রে ভূমিধস ও বন্যায় মৃত্যু ছাড়িয়ে যায় ২৫০ জন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল কমপক্ষে ৫৩৯ মিলিয়ন ডলার। রাজ্যের ৩০ জেলা পানিতে তলিয়ে যায়।

২০২০ সালের আসামে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৫০ লাখের বেশি মানুষ। প্রাণহানি ছাড়িয়ে যায় ১৫০ জন। পাঁচ হাজার ৪৭৪ গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষের সংখ্যা ছাপিয়ে যায় এক লাখ ৫০ হাজারের বেশি। একই বছরের অক্টোবরে হায়দরাবাদ ও অন্ধ্রপ্রদেশে ভয়াবহ বন্যায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়।

২০২৪ সালের মে মাসে আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশে আকস্মিক বন্যায় ১৭০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। আহত হয় দুই শতাধিক মানুষ। দশ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়।

২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নেপালের ভয়াবহ বন্যায় মৃত্যু হয় দুইশতাধিক মানুষের। কাঠমান্ডু শহর ডুবে যায়। বাগমতী নদীর পানি উপচে পড়ে। ২০২৩ সালের শ্রীলঙ্কার ৫০ বছরের মধ্যে ভয়াবহতম বন্যায়মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ২৪০ জন।

বাস্তুচ্যুত পরিবারের সংখ্যা এক লাখ ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যায়। কলম্বো সরকার আন্তর্জাতিক সহায়তার আবেদন করে। ২০২৪ সালের শ্রীলঙ্কায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত ও হঠাৎ বৃষ্টিতে ১৬ জন প্রাণ হারায়। ২৫ জেলার মধ্যে ২০টি তলিয়ে যায় এবং কোথাও কোথাও ৪০০ মিমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।

মুম্বাই, করাচি, ঢাকা, লাহোর, কলকাতা, চেন্নাই, কলম্বো-দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব বড় শহরই রেকর্ড বৃষ্টিপাত ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বর্ষাকালীন দুর্যোগ এখন আর শুধুমাত্র ‘প্রাকৃতিক’ মাত্র নেই, বরং জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানবসৃষ্ট বিপদে রূপ নিচ্ছে।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ