অযৌক্তিক ভ্যাট বৃদ্ধি প্রত্যাহারের দাবি রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির

অযৌক্তিক হারে ভ্যাট বৃদ্ধি ও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) নির্ধারণের এই সিদ্ধান্ত অন্যায় ও অযৌক্তিক, এই বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি।

বৃহস্পতিবার (০৯ জানুয়ারি) রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ভ্যাট ও এস. ডি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এবং রেস্তোরাঁ সেক্টরের সংকট প্রসঙ্গে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি দীর্ঘদিন যাবত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। আমাদের দীর্ঘদিনের আলোচনা ও প্রচেষ্টার পর ধাপে ধাপে ভ্যাটের হার ১৫% থেকে ৫% করা হয়েছিল যার ফলে ভ্যাট আহরণও বহুগুনে বৃদ্ধি পায়। বিগত অর্থ বছরে ভ্যাটের হার কমানোর ফলে ভ্যাট আদায় ১৯% বেড়েছে যা এনবিআর চেয়ারম্যান মহাদয় বলেছেন। আমরা ভ্যাট ৩৭% নির্ধারণের দাবি জানিয়ে আসছিলাম, যাতে করে মানুষের ভ্যাট দেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ও সরকারের ভ্যাট আদায় আরও বাড়ে। আমরা মনে করি ৭০% রেস্তোরাঁ এখনো ভ্যাটের আওতার বাহিরে।

ইমরান হাসান বলেন, জনজীবনের কথা চিন্তা না করে যদি শুধু আইএমএফের শর্ত পূরণের জন্য ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে, এটি আমাদের জন্য হবে দুর্ভাগ্যজনক। বর্তমানে দেশের অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতিতে হঠাৎ করে ভ্যাটের হার তিনগুণ বৃদ্ধিতে আমরা আতঙ্কিত, দিশাহীন ও শংকিত যে রেস্তোরাঁ সেক্টরের এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা কতদিন এভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন। উদ্বেগের বিষয় হলো সরকার প্রশাসনকে উল্টো পিরামিড বানিয়ে যেভাবে ব্যয় বাড়িয়ে চলেছে, তা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, বর্তমানে সরকারি হিসেবে দেশে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩ শতাংশের মতো কিন্তু বাস্তবে তা ৩০ শতাংশের উপরে। জীবন-জীবিকার সমন্বয়ে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা আজ দিশেহারা। এছাড়া মাঠ পর্যায়ে ভ্যাটের নানাবিধ অন্যায়, জুলুম, অত্যাচার আমরা সহ্য করে ব্যবসা পরিচালনা করছি। বর্তমান বাজারে নিয়ন্ত্রণহীন ভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ভোক্তার ক্রয় সীমার বাহিরে চলে যাচ্ছে। তার উপরে অধিকাংশ রেস্তোরাঁর ভোক্তাই মধ্যবিত্ত, কর্মজীবী, শ্রমজীবী তাই ভ্যাট বৃদ্ধিতে ভোক্তার উপর উঠবে বাড়তি দামের বোঝা অপরদিকে রেস্তোরাঁ হবে ক্রেতা শূন্য।

তিনি আরো বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বহুবার সরকারকে জানিয়েছি যে, সরকারের একার পক্ষে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় তাই রেস্তোরাঁ খাতের সকলকে একটি কমপ্লায়েন্স এর আওতাভুক্ত করে, নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে রেস্তোরা সেক্টরে কর্মরত ৩০ লক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ট্রেনিং, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে দক্ষ জনবল তৈরীতে সরকারি কার্যকর উদ্যোগের প্রয়োজন। বর্তমানে ১২টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থার তদারকিতে কার্যক্রম পরিচালনা করায় আমরা ব্যবসায়িকভাবে নানাবিধ হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছি। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি যেকোন ১ টি মন্ত্রণালয়/ অধিদপ্তর/ সংস্থার মাধ্যমে ওয়ানস্টপ সার্ভিস চাই।
এতে করে সরকার ও সমিতির ঐক্য প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের সকল রেস্তোরাঁ, স্ট্রিট ফুড ও সকল খাদ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। সকল রেস্তোরাঁ ও রেস্তোরাঁ সেক্টরকে ই.এফ.ডি মেশিনের আওতায় আনা সম্ভব হবে এতে করে অসম প্রতিযোগিতা দূর হবে এবং সরকারের রাজস্ব আদায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বহুগুনে বৃদ্ধি পাবে। অন্যদিকে ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি বা নবায়নেও এখন সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে উদ্যোক্তাদের, এ বিষয়েও সরকারের হস্তক্ষেপ চাই আমরা।

এক প্রশ্নের উত্তরে সংগঠনের মহাসচিব বলেন, আমরা চাই সবার আগে এনবিআরের সংস্কার হোক। কখনই এনবিআরের চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না, কেউ ৫৩ বছরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু করেনি। এফবিসিসিআইয়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের নিয়ে মাথা ব্যাথ্যা নেই। যখন যে সরকার আসে তাদের আগাবহ হিসেবে কাজ করে। অন্তর্বর্তী সরকার করের আওতা না বাড়িয়ে কিংবা কর ফাঁকি রোধ করার ব্যবস্থা না করে সরল রাস্তার সমাধান হিসেবে ভ্যাট বাড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। অপরদিকে আমাদের মতো যারা সকল ধরনের নিয়ম-কানুন মেনে ভ্যাট ট্যাক্স প্রদান করে ব্যবসা পরিচালনা করে উল্টো তাদের উপর অন্যায় ভাবে বাড়তি ভ্যাট ট্যাক্সের বোঝা চাপাতে এনবিআর বেশি আগ্রহী।

বর্তমানে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেস্তোরাঁ ব্যবসার উপর ৫% থেকে বর্ধিত ভ্যাট ১৫% করা হচ্ছে এবং সম্পূরক শুল্ক (এসডি) নামে পূর্বে আরও একটি ১০% করের বোঝা সাধারণ মানুষের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি বর্ধিত ভ্যাট ১৫% ও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ১০% করা হয় তবে সাধারণ ভোক্তাকে মোট ২৫% কর প্রদান করতে হবে। এ অবস্থায় ভোক্তার নিকট হতে কোনভাবেই এই ২৫% বাড়তি কর আদায় করা সম্ভব হবেনা। উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে ব্যবসা পরিস্থিতি খারাপ যাচ্ছে এবং বর্ধিত ভ্যাট আরোপিত হলে সামনে আরো খারাপ হবে। রেস্তোরাঁ সেক্টরের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও ভোক্তার উপর অযৌক্তিক হারে ভ্যাট বৃদ্ধি ও সম্পূরক শুল্ক (এসডি) নির্ধারণের এই সিদ্ধান্ত অন্যায় ও অযৌক্তিক, এই বর্ধিত ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি আরো বলেন, বর্ধিত হারে ভ্যাট আরোপের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না হলে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষার্থে, জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে আগামীতে মানববন্ধন করবে।প্রতিকি হিসেবে ১ দিনের জন্য সারা দেশের রেস্তোরাঁ সমূহ বন্ধের কর্মসূচি গ্রহন করা হবে, তাতেও যদি সরকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে তাহলে সারাদেশে অনিদিষ্ট কালের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেয়া হবে।