অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের অনেকেই আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চান বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, এই সরকার গঠিত হয়েছে জনরায়ে, জনগণের ইচ্ছায়। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে, আমরা ধীরে ধীরে হতাশ হচ্ছি।
তিনি বলেন, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের কৃতি সন্তান, বিশ্বব্যাপী তার পরিচিতি। বিদেশে বাংলাদেশের ফেইস, তার চেয়ে যোগ্য ব্যক্তি আমরা এই মুহূর্তে পেতাম না। তিনি (ইউনূস) ক্ষমতায় থাকতেও চান না, আগেও তাকে অফার করা হয়েছিল, থাকেন নি। এখনো যে তিনি খুব ইনজয় করছেন, তা মনে হয় না। কিন্তু একটা কথা আমার বলতে হচ্ছে, তার টিম সিলেকশনটা ঠিক হয় নি। তিনি যাদের সঙ্গে নিয়েছেন, তাদের অনেকের আজীবন ক্ষমতায় থাকার ইচ্ছা আছে। হয়তো প্রকাশ করতে পারেন না, কিন্তু ভাবভঙ্গিতে এমনই মনে হয়।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে মঙ্গলবার বাংলাদেশ লেবার পার্টি আয়োজিত ‘গণ-অভ্যুত্থান জন-আকাঙ্ক্ষা: রাষ্ট্র মেরামতে প্রস্তাবনা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় হাফিজ এসব কথা বলেন।
সরকারের সমালোচনা করে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রফেসর ইউনূস একেকজন উপদেষ্টাকে চারটা-পাঁচটা করে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে এদের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এই ব্যাপারে তাকে চিন্তা করতে হবে। অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্য থেকে ভালো দের নিয়ে দায়িত্ব দেন। দরকার হলে যে ছাত্ররা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন করেছে, তাদের থেকে আরও লোক নেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের টিমে খেলে এসেছেন অতীতে, তাদের আর মন্ত্রিপরিষদে আমরা দেখতে চাই না।
সংস্কারের জন্য কত সময় লাগতে পারে এমন প্রশ্ন রেখে মেজর হাফিজ বলেন, যে ছয়টি কমিশন করা হয়েছে, এদের প্রজ্ঞাপন করতেই ছয় দিনের বেশি সময় লেগেছে, যেটা দুদিনের বেশি লাগার কথা না। ধীরে ধীরে সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে যাচ্ছে। পতিত শক্তি আবার ফিরে আসতে চায়। আনসার বাহিনী পর্যন্ত ক্যু করতে চায়, এমনই দুর্বল একটা সরকার।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান কাজ একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার অনেক কথা বলে, কিন্তু একটা কথা তাদের মুখ থেকে শোনা যায় না যে নির্বাচন কবে হবে। কবে ইলেকশন কমিশন গঠন হবে। অরাজনৈতিক এবং বিজ্ঞ লোকদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে আইন যদি পরিবর্তন করতে হয়, তাহলে তা দ্রুত করা যায়।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের আর রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তারা যে ক্ষতি করেছে বাংলাদেশের। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর আমরা মনে করেছিলাম সুন্দর একটা দেশ আমরা পাব। গণতন্ত্র চিরদিন থাকবে বাংলাদেশের বুকে, কোনো বৈষম্য থাকবে না। মানবিক মর্যাদা, সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার অবিলম্বে প্রতিষ্ঠা হবে। কিন্তু যতই দিন গেছে, ততই আস্তে আস্তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দূরে সরে গেছে। আমরা পেয়েছি একটা একদলীয় রাষ্ট্র বাকশাল।
রাষ্ট্র মেরামতের ২৩ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, রাষ্ট মেরামতের জরুরী উপদেষ্টা পরিষদের সংস্কার করা। ডক্টর ইউনুসকে সামনে রেখে খুনি হাসিনার প্রেতাত্মারা সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপতৎপরতায় লিপ্ত। আমরা রাজনৈতিক ও নির্বাচনি সংস্কৃতির সংস্কার চাই। মৌলিক সংস্কারের দায়িত্ব জনগণের নির্বাচিত সরকারের। তাই পরপর ২ বারের বেশি একই ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে উচ্চ কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন। সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবসরের ৫ বছরের মধ্যে নির্বাচনের অংশ গ্রহণ বেআইনি ঘোষণা। জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী দল বা জোটকে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কাস্টিং ভোটের ৫১% ভোট প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে, অন্যথায় নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান।
অ্যাডভোকেট জোহরা খাতুন জুইয়ের সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে রাষ্ট্র সংস্কারের ২৩ দফা তুলে ধরেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম। আলোচনায় অংশ নেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, জানিপপের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। সাবেক যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এলবার্ট পি কস্তা, ওলামা দলের মাওলানা শাহ নেছারুল হক, লেবার পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এস এম ইউসুফ আলী, যুগ্ম মহাসচিব নুরুল ইসলাম সিয়াম, ইউরোপ লেবার পার্টির সমন্বয়কারী মো. রাকেশ রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব হেলাল উদ্দিন চৌধুরী, মহিলা সম্পাদিকা নাসিমা নাজনিন সরকার, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শেখ মিজানুর রহমান, দফতর সম্পাদক মোঃ মিরাজ খান, মহানগর সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।