একাদশে ভর্তিযোগ্য আসন ৩৩ লাখ, শূন্য থাকবে ২০ লাখ

সারা দেশে ৯ হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে মোট আসন রয়েছে ২২ লাখ। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে রয়েছে প্রায় ৯ লাখ আসন এবং সরকারি-বেসরকারি পলিটেকনিকে রয়েছে আরও ২ লাখ ৪১ হাজার আসন। সামগ্রিকভাবে একাদশে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে প্রায় ৩৩ দশমিক ২৫ লাখ। অথচ এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৪২৬ জন শিক্ষার্থী।

এতে দেখা যাচ্ছে, প্রায় সাড়ে ২০ লাখ আসন শূন্য থাকছে, যা শিক্ষার্থীর ঘাটতিতে ভুগতে থাকা বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য কঠিন বার্তা। আবার প্রতি বছর এসএসসি পাশ করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ আর একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় না। এ বছরও যদি সেটা হয় তাহলে খালি আসনের সংখ্যা আরও বাড়বে। শিক্ষা বোর্ড জানিয়েছে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহেই শুরু হবে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হবে ভালো মানের ২৫০ কলেজে। এরমধ্যে বেশি ভর্তিযুদ্ধ হবে রাজধানীর ৩০টি কলেজে। তিনটি ধাপে আবেদন ও মাইগ্রেশন প্রক্রিয়া শেষ করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ক্লাস শুরুর পরিকল্পনা করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর।

আরও পড়ুনঃ আজ শুরু হচ্ছে একাদশ শ্রেণির ক্লাস

চলতি ২০২৫‑২৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণির ভর্তিতে জুলাই কোটা যুক্ত করার সুপারিশ করেছে আন্তঃশিক্ষা সমন্বয় বোর্ড। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি-সংক্রান্ত নীতিমালায় এ সুপারিশ করা হয়েছে। নীতিমালায় মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রয়োজনীয়তা নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কলেজ পরিদর্শক বলেন, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের সংখ্যা কলেজ পর্যায়ে নেই বললেই চলে। নাতি-নাতনিদের কোটা উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়েছে। তাই এটি পরিবর্তনের সময় এসেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা শিক্ষা বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘জুলাই কোটা রাখার বিষয়ে ইতিবাচক তারা। দ্রুত সময়ের মধ্যে আলোচনা করে একাদশ শ্রেণির ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে।’

নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, জুলাইয়ে যারা সক্রিয়ভাবে আন্দোলনে অংশ নিয়ে আহত হয়েছেন, তাদের অনেকেই এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় থেকেও কেউ কেউ এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও মানসিক ট্রমার তারা হয়তো ভালো ফল করতে পারেনি। এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে কয়েক বছরের জন্য একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে জুলাই কোটা রাখা হতে পারে। পরবর্তী সময় এই কোটা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।

২০২৪ সালে প্রণীত সর্বশেষ নীতিমালা অনুযায়ী, একাদশ শ্রেণিতে বর্তমানে মেধা কোটায় ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানো হয়। অর্থাৎ, সবার জন্য ৯৩ শতাংশ আসন উন্মুক্ত। বাকি ৭ শতাংশ বিভিন্ন কোটায় ভর্তি করানো হয়। যার মধ্যে ৫ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য। বাকি ২ শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন ২৮টি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য রাখা হয়।

জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কলেজ ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে। এ বছর এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩২ জন। কিন্তু শিক্ষা বোর্ড ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ২৫০টি মানসম্মত কলেজে আসন রয়েছে মাত্র ১ লাখের মতো। ফলে, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ইচ্ছেমতো কলেজে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সিংহভাগই স্বপ্ন দেখে রাজধানীর নির্দিষ্ট নামীদামী কয়েকটি কলেজে ভর্তি হতে। কিন্তু রাজধানীতে পছন্দের ৩০টি কলেজে আসনসংখ্যা রয়েছে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার। বিশেষ করে নটর ডেম, হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ, ভিকারুননিসা, রেসিডেনশিয়াল, রাজউক, ধানমন্ডি আইডিয়াল ইত্যাদির আসন সংখ্যা খুবই সীমিত। রাজধানীর শীর্ষ কলেজগুলোর মধ্যে ঢাকা কলেজে ১ হাজার ২০০টি, নটর ডেম কলেজে ৩ হাজার ২৭০টি, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ১ হাজার ৭০৪টি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২ হাজার ৩৭৬টি, হলি ক্রস কলেজে ১ হাজার ৩৩০টি, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে ২ হাজার ২০০টি, শহীদ বীর-উত্তম লে. আনোয়ার গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১ হাজার ১২০টি, ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে ১ হাজার ১৪টি, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১ হাজার ১৬৫টি, বিএএফ শাহীন কলেজে ১ হাজার ২২০টি, ঢাকা সিটি কলেজে ৩ হাজার ৭৬২টি, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজে ১ হাজার ৯৮০টি, ঢাকা কমার্স কলেজে ৪ হাজার ৭০০টি, বাংলাদেশ নেভি কলেজে ৯৫০টি এবং শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ৮৮০টি আসন রয়েছে।

জানা গেছে, গত বছর দেখা গেছে, প্রায় সাড়ে ৮ হাজার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থী প্রথম ধাপে কোনো কলেজ পায়নি। পরে তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় ধাপে অপেক্ষাকৃত কম মানের কলেজে ভর্তি হয়। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তারা বলেন, গত বছর অন্তত ২২০টি কলেজে কোনো শিক্ষার্থীই ভর্তি হয়নি। এই সংকট শিক্ষার মান এবং অবকাঠামোগত পরিকল্পনার অভাবকে সামনে নিয়ে এসেছে।

নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি করবে নটর ডেম, হলিক্রস ও সেন্ট যোসেফ: কেন্দ্রীয় ভর্তির আওতায় না থেকেও প্রতিবারই নিজস্ব নিয়মে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে কয়েকটি মিশনারি কলেজ। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত পিউস রোজারিও সাংবাদিকদের বলেন, আমরা হাইকোর্টের অনুমতি নিয়ে নিজস্ব ভর্তি পদ্ধতি অব্যাহত রেখেছি। এ বছরও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। হলিক্রস ও সেন্ট যোসেফ কলেজও তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ