বিদ্যুৎ লাইনে জটিলতা, ঋণ খেলাপি, তারল্য সংকট, কাঁচামাল সংকটসহ নানা জটিলতার কারণে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (আরএসআরএম) প্রায় চার বছরেরও বেশি সময় ধরে কারখানা ও উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে আরএসআরএমের শেয়ার কিনে হাজারের অধিক বিনিয়োগকারী ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিষয়টি সমাধানে কোম্পানিটির কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা কারও কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। এই পরিস্থিতেও গত কিছুদিন ধরে বেড়েই চলেছে কোম্পানিটির শেয়ারের দর।
গেল সপ্তাহের লেনদেন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) শেয়ার দরবৃদ্ধির শীর্ষ তালিকার ৪ নম্বরে অবস্থান নেয় কোম্পানিটি। গত ছয় কার্যদিবসে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৩ টাকা বা ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ। দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধ থাকা আরএসআরএমের মতো কোম্পানির শেয়ারদরের এমন বৃদ্ধিকে অস্বাভাবিক মনে করেন বাজার বিশেষজ্ঞরা।
চট্টগ্রামভিত্তিক রতনপুর গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেড (আরএসআরএম) ২০১৪ সালের পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয়। পুঁজিবাজার থেকে প্রিমিয়ামের মাধ্যমে বড় অর্থ সংগ্রহ করা কোম্পানিটি লোকসানকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে ২০২০ সালের শেষের দিকে কাঁচামাল সংকটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এর পর আর কারখানার উৎপাদন চালু করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি।
উৎপাদন বন্ধ থাকায় কোম্পানিটি সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। লোকসানের কারণে কোনো লভ্যাংশের সুপারিশ করেনি কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ। ২০২১-২২ হিসাববছরে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট লোকসান ছিলো প্রায় ৩৮ কোটি টাকা।
এছাড়াও, বেসরকারি ট্রাস্ট ব্যাংকের করা ঋণখেলাপির এক মামলায় গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের অর্থঋণ আদালত আরএসআরএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাকসুদুর রহমানকে বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। এ মামলায় মাকসুদুর রহমানসহ মোট চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়। অপর তিন অভিযুক্ত ব্যক্তি হলেন কোম্পানিটির পরিচালক মো. আলাউদ্দিন এবং মাকসুদুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান ও মারজানুর রহমান। এই চারজনের বিরুদ্ধেই আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন। ফলে সেই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি মাকসুদুর রহমানকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা–সংক্রান্ত আদালতের সেই আদেশে বলা হয়, আরএসআরএমের এমডি মাকসুদুর রহমানের কাছে দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। তিনি জাতীয় সংসদে উত্থাপিত ২০ শীর্ষ ঋণখেলাপির মধ্যে অন্যতম।
২০২০ সালের পর আরএসআরএম বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি। বর্তমানে এটি দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে শ্রেণিভুক্ত। দীর্ঘদিন ধরে বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ায় এবং কোম্পানির উৎপাদন বন্ধ থাকায় ২০২৩ সালের অক্টোবরে কোম্পানিটিতে চারজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এর আগে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি রতনপুর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান মেসার্স রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস লিমিটেডের (আরএসআরএম) কাছ থেকে ২০১ কোটি টাকা খেলাপি আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তুলতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েছিলো সোনালী ব্যাংক। পত্রিকায় প্রকাশ করা সেই নিলাম বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিলো- মেসার্স রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলসের কাছে সোনালী ব্যাংকের ২০১ কোটি ৪৩ লাখ ৫২ হাজার ৮৬৫ টাকা পাওনা খেলাপি হয়েছে। এই পাওনার বিপরীতে চট্টগ্রামের বায়েজিদ এলাকায় গ্রুপটির কারখানাসহ ১০০ শতক জমি বন্ধক রয়েছে। দীর্ঘদিনেও ঋণ পরিশোধ না করায় অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ (সংশোধন ২০১০) এর ১২ ধারার বিধান মোতাবেক প্রতিষ্ঠানটির স্থাপনাসহ এসব স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত নেয় সোনালী ব্যাংক।
ডিএসই হতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২০ ফেব্রুয়রি কোম্পানিটির শেয়ারের দর ছিলো ৯ টাকা ৪০ পয়সা য বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) লেনদেন শেষে বেড়ে দাঁড়ায় ১২ টাকা ৪০ পয়সায়। অর্থাৎ গত ছয় কার্যদিবসে ‘জেড’ ক্যাটাগড়িতে তালিকাভুক্ত আরএসআরএমের শেয়ারদর বেড়েছে ৩ টাকা বা ৩১ দশমিক ৯১ শতাংশ।