দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও অদক্ষতাকে লালন করেছি, সেটাই পুঁজিবাজারকে ইতিবাচক হতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা পুঁজিবাজারকে ভীষণভাবে সংকুচিত করে ফেলায় তা অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা ক্লাবে ‘পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, ডিএসইর পরিচালক মো. শাকিল রিজভী ও মিনহাজ মান্নান ইমন, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, গত ১০ বছরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা মূল্যের দুর্বল আইপিও বাজার এসেছে। আমাদের ভালো কোম্পানি আছে, তবে সেটা একেবারেই নগণ্য। বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা ১০ বছরে অর্ধেকে নেমে এসেছে। সক্রিয় বিনিয়োগকারী আরো অনেক কম। তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে সক্ষমতা পরিমাপের অন্যতম একক হলো বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ। বর্তমানে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। কর্পোরেট বন্ডের পরিমাণ যদিও ১ শতাংশ বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে তা ০.৫১ শতাংশের বেশি নয়। বাজারে নতুন আইপিও, কর্পোরেট বন্ড ও মিউচুয়াল ফান্ড আমাদের অগ্রাধিকারে আছে। ডিএসইর চেয়ারম্যান আরো বলেন, কোম্পানিগুলোকে যদি আমরা সক্ষম করতে না পারি, তাহলে হয়ত আমরা আবারো ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণে চলে যাব। কোম্পানিগুলোকে সক্ষম করতে হলে কিছুটা সময় লাগবে। ডিএসইকে সামনে এগিয়ে নিতে দক্ষ মানবশক্তি লাগবে। আমরা নেতৃত্বের গুণাবলীসম্পন্ন লোকবল নিয়োগ দিচ্ছি। আমরা আশা করছি, বাজারে বিনিয়োগকারীরা আবার ফিরে আসবে। আইটি সিকিউরিটি অডিটটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডিএসই ওয়েবসাইটটাকে আমরা রিভাইব করছি। বিশেষ করে, কীভাবে আইপিওকে ডিজিটালাইজ করা যায়। বন্ড মার্কেটেও পরিচালনা সমস্যা। আমরা বিএসইসির সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করছি।
মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ে কাজ করছি যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। ইনসাইডার ট্রেড এবং ম্যানুপুলেশন কীভাবে রোধ করা যায়, তা নিয়ে কাছ করছি। মার্কেট ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে রিসার্চ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বাজারে রিসার্চের মাত্রা খুবই কম। এটা কীভাবে বাড়ানো যায়, তা নিয়ে কাজ করছি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ডিএসইর সুরক্ষা যদি আইনগত হয়, তাহলে আমরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারব। সিসিবিএল থাকবে, এমনটা আমরা চাই না। বিএসইসি, ডিএসই, সিসিবিএল এ বিষয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। জনবল নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা অবশ্যই দক্ষতাকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নির্দেশে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে ডিএসই সাবেক প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও) মো. জিয়াউল করিমকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে ডিএসই’র চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, মো. জিয়াউল করিমের অভিযোগের যথার্থতা আমরা পাইনি। সিটিও নিয়োগের যে প্রক্রিয়া আছে, সেটি চলমান। যারা অদক্ষ, খারাপ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) আমাদের চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে না। আমরা সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করছি।
ডিএসইর পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন বলেন, ডিএসই যদি প্রভাবমুক্ত থাকতে পারে, তাহলে পুঁজিবাজারে ইতিবাচক কাজ করার সুযোগ রয়েছে। ১৫ বছরের অনিয়মের বিচার-বিশ্লেষণ করা দরকার। আপনাদের কাছ থেকে কিছু তথ্য উঠে এসেছে। তবে সামগ্রিকভাবে সকল অনিয়মের তথ্য উঠে আসছে না। আপনারা সহযোগিতা করলে অনিয়মের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া আমাদের জন্য সহজ হয়। আপনারা তুলে নিয়ে আসুন, আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
ডিবিএর চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, পুঁজিবাজারে যে পেশার গ্রুপগুলো হয়েছে। আমাদের দেশে সেগুলো পুরোপুরি কাজ করেছে, এমন কোন ভালো অতীত নেই। তবে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার চাপের ফলে বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ দেখা গেছে। এটা বাজারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। বিকেন্দ্রীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিকেন্দ্রীকরণের পরিবর্তে সবকিছু এফআইডি নির্ভর করা হচ্ছে। অনেক কিছুই প্রাইমারি রেগুলেটরের হাত থেকে নিয়ে মন্ত্রণালয় কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যার ফলে আমরা বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি।