ডিমে চাঙাভাব, খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা ডজনে

রাজধানীর বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম হঠাৎ কমে যাওয়ায় বেড়েছে চাহিদা ও বেচাকেনা। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা কমে যাওয়ায় অনেক দোকানে এখন ডজনপ্রতি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকায়। এদিকে চাহিদার পাশাপাশি সরবরাহও সমানতালে বাড়তি থাকায় ডিমের বাজারে অনেকটাই চাঙাভাব ফিরে এসেছে। তবে বাজার সংশ্লিষ্টরা সতর্ক করছেন, দামে ভারসাম্য না থাকলে ভবিষ্যতে বাজার আবার অস্থির হতে পারে।

শুক্রবার (১১ জুলাই) সকালে রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে দেখা এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

খুচরা পর্যায়ে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। তবে কিছু দোকানে পরিচিত ক্রেতাদের কাছে ১০৫ টাকায়ও বিক্রি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতি পিসে দাম পড়ে ৮ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ৯ টাকা ৫০ পয়সা।

বাজার বিশ্লেষণ ও পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বর্তমানে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা থেকে ১১৫ টাকার মধ্যে। এটি ঈদের আগে ছিল ১২৫ থেকে ১৩৫ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি পর্যায়ে প্রতি পিস ডিমের দাম এখন ৮ টাকা থেকে ৮ টাকা ৮০ পয়সা।

ডিম কিনতে আসা সরকারি কর্মকর্তা আফসার উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে প্রোটিনজাত পণ্যের মধ্যে ডিমই সবচেয়ে সাশ্রয়ী। আগে প্রতি সপ্তাহে এক ডজন নিতাম, এখন ২ ডজন নিচ্ছি। কারণ দাম এখন নাগালের মধ্যে।’ তিনি বলেন, ‘১০৫ টাকা ডজনে ডিম পেয়ে খুশি। দাম কম থাকলে ঘরে পুষ্টিকর খাবার রাখা সহজ হয়।’

গৃহিণী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমাদের পরিবারে সকালের নাশতায় ডিম নিতেই হয়। আগে দাম বেশি থাকায় মাঝে মাঝে বিকল্প ভাবতে হতো, এমনকি অনেক সময় ডিম কেনা বাদ দিতে হতো। এখন ১০৫ টাকায় ডজন পাচ্ছি—এটা আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের জন্য স্বস্তির খবর। আমি আজই তিন ডজন কিনেছি, সেগুলো ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখব।’

তিনি আরও বলেন, ‘ডিম এমন একটা পণ্য, যেটা বাচ্চা থেকে বয়স্ক—সবাই খেতে পারে। আগে আমরা এক ডজন নিতাম সপ্তাহে, এখন ২ ডজন নিয়ে রাখছি। কারণ এটা প্রোটিনের সহজ উৎস, রান্নাও ঝামেলাহীন।’

ডিম বিক্রেতা নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘ঈদের পর দাম কমতেই বিক্রি বেড়ে গেছে। আগে দিনে ৩ হাজার ডিম বিক্রি করতাম, এখন ৫ হাজারের কাছাকাছি যাচ্ছে। পরিচিতদের ডজন ১০৫ টাকায় দিচ্ছি। লাভ কম, কিন্তু বিক্রি ভালো হচ্ছে।’

তিনি জানান, ‘গত সপ্তাহেও প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছে ১২৫ টাকায়, এখন খুচরা বাজারে ১১৫ টাকা। কেউ বেশি নিলে দাম আরও একটু কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

রামপুরা বাজারের এক ডিম সরবরাহকারী জানান, ‘পাইকারিতে এখন প্রতি ডিম ৮ থেকে ৮ টাকা ৮০ পয়সায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় চাহিদা বাড়ায় সরবরাহও বাড়াতে হচ্ছে। অনেক ছোট দোকান এখন আগের চেয়ে দ্বিগুণ অর্ডার দিচ্ছে।’

নাসির উদ্দিন নামক আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘বিক্রি বাড়ছে, এটা ভালো। তবে খামারিরা যেন প্রাপ্য দাম পান, সে দিকটাও দেখতে হবে। না হলে খামারিরা বাঁচবে না, আবার কয়েক মাস পর ডিমের সংকট তৈরি হবে।’

গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতি ডজন ডিমের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করেছিল ১৪২ টাকা, অর্থাৎ প্রতি পিস ১১ টাকা ৮৫ পয়সা। যদিও সেই দাম বাজারে স্থায়ী হয়নি, বরং মাঝে মাঝেই ওঠানামা করেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজারে দাম কিছুটা কমলেও চাহিদা ও বিক্রি বাড়ায় সামগ্রিক চিত্র স্বস্তিদায়ক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।