তেলে তেলেসমাতি, দাম বাড়ানোর পরও মিলছে না সয়াবিন

বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানো হয়। এরপর ১৬ ডিসেম্বর দাম সহনীয় রাখতে সয়াবিন তেল আমদানি, উৎপাদন ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট অব্যাহতি দেয় সরকার। তবুও চাহিদা মাফিক পণ্য না পাবার অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের। আর তাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে কারওয়ান বাজারসহ রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, কোথাও চাহিদা মাফিক সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে, কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। কোথাও দোকানি বলে দিচ্ছেন— তেল নেই। আবার কোথাও কোথাও অতিরিক্ত দামেও এই ভোজ্যতেল বিক্রির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

কাওরান বাজারের মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের এক বিক্রেতা বলেন, আমাদের এখানে সয়াবিন তেল সরবরাহে কোন সমস্যা নাই। আমরা যা চাচ্ছি তাই পাচ্ছি। একই কথা বলেন, কাওরান বাজারের মেসার্স বন্ধু স্টোর, লক্ষ্মীপুর স্টোরসহ আরও কিছু বিক্রেতা।

এর সত্যতাও পাওয়া গেল আব্দুর রহমান নামের এক ক্রেতার কাছ থেকে। কোন সমস্যা ছাড়াই দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনেছেন বলে জানান তিনি।

তবে ভিন্ন চিত্র মিরপুর, বাংলামোটর ও পুরান ঢাকার নবাবপুরে। এসব এলাকার খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আগের মত সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভরা (এসআর) আসছে না। আসলেও অর্ডার নিচ্ছে সীমিত। তাই বাধ্য হয়ে পাইকারি বাজার থেকে তাদের তেল সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

বাংলামোটর নিউ স্কাটন রোডের পেট্রল পাম্প গলির রিপন স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী রিপন মিয়া বলেন, আগে প্রতি সপ্তাহেই এসআর আসতো অর্ডার নিতে, নিতে না চাইলে জোরাজুরি করতো অর্ডার দিতে। কিন্তু এখন উল্টো আমাদের জোরাজুরি করতে হচ্ছে। তাও চাহিদা মতো অর্ডার নিচ্ছে না।

একই কথা বলেন মহসিন স্টোরের স্বত্তাধিকারী মোফাজ্জল হোসেন। তিনি বলন, আগে প্রতিদিন অর্ডারের জন্য আসতো, কিন্তু এখন এসআরের দেখাই মিলে না।

রাজধানীর মিরপুরের শেওড়াপাড়ার এক খুচরা দোকানদার নাম প্রকাশ না করে বলেন, অর্ডার নিতে কোম্পানির লোক ঠিকভাবে আসছে না। তাই এখন তেল পেতে সমস্যা হচ্ছে। তেল পেলে বিক্রি করছি।

তেল নিয়ে এমন তেলেসমাতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রাজিব ব্যাপারী। সদ্য মাস্টার্স শেষ করে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করছেন তিনি। থাকেন একটি মেসে। তাই অধিকাংশ সময় সয়াবিন তেল কিনতে হয় ১ বা ২ লিটার বোতলের। কিন্তু এনিয়ে প্রায়শই হয়রানির মুখে পড়তে হচ্ছে তাকে।

রাজিব ব্যাপারী বলেন, দুই/তিন দোকান ঘুরে ১ লিটার বোতলের কোন সয়াবিন তেল পাইনি। গত সপ্তাহেও এমন হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে। সরকার যদি ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারে তাহলে আগের সরকারের সঙ্গে পার্থক্য কোথায়? সরকারের উচিত এসব বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরকার যেহেতু ব্যবসায়ীদের কাছে নতি স্বীকার করে দাম বাড়িয়েছে। তবে দাম বাড়ানোর শর্ত হিসেবে তো বাজারে সয়াবিন তেল সরবরাহ ঠিক থাকার কথা।

তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের ডিমান্ড ছিলো দাম বাড়ানো, সরকার ৮ টাকা দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের ছিলো। এখন কোনটাই না করে সরকার নিরব ভূমিকা পালন করছে।

তিনি আরও বলেন, তাদের (ব্যবসায়ীদের) কর্মকাণ্ডে মনে হয়, তারা আরও সংকট তৈরি করবে। আগে যেমন বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেছেন, মজুত আছে যথেষ্ট সরবরাহ লাইনে সমস্যা। যদি সরবরাহ লাইনে সমস্যায় থাকে এতদিন কেন লাগবে ঠিক করতে?

সরকারকে সতর্ক করে দিয়ে এস এম নাজের হোসাইন বলেন, সরবরাহের বিষয়গুলো সরকারকে দেখতে হবে।

৯ ডিসেম্বর সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ায় সরকার। এর ফলে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৫৭ টাকা। খোলা পাম তেলের লিটারও ১৪৯ টাকা থেকে বেড়ে ১৫৭ টাকা হয়েছে। এ ছাড়া বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম এখন ৮৬০ টাকা।