আমড়া। বাংলাদেশের মৌসুমী একটি ফল। বরিশালেই এই আমড়ার চাষ সবচেয়ে বেশি। সুস্বাদু এ ফলটির চাহিদার ৮০ শতাংশ জোগান দিচ্ছে দক্ষিণের বিভাগ বরিশাল। তাই বরিশালের আমড়া হিসেবেই এর খ্যাতি দেশজুড়ে।
সম্প্রতি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় ভবিষ্যতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বরিশালের আমড়ার পরিচিতি এবং চাহিদা আরও বাড়বে, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
বরিশালের আমড়া শুধু সুস্বাদু একটি ফলই নয়, এটি এই অঞ্চলের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্বতন্ত্র স্বাদ, পুষ্টিগুণ ও বহুমুখী ব্যবহার বরিশালের আমড়াকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জনপ্রিয় করে তুলেছে। বরিশালের অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা আত্মীয়স্বজনের কাছে এই আমড়া পাঠান। অন্য অঞ্চলের মানুষও বরিশালের আমড়াকে স্বাদ ও গুণগত মানে আলাদা করে চেনেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ি বরিশালের তথ্য অনুযায়ী, বিভাগে ১ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আমড়া চাষ হয়। যেখান থেকে ২৪ হাজার ৬৮৪ মেট্রিক টন আমড়া উৎপাদন হয়। যা হেক্টরপ্রতি ১৩ দশমিক ৩০৭ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ফলনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আমড়া উৎপাদন হয় পিরোজপুরে ৮ হাজার ৬৭৭ মেট্রিক টন, পর্যায়ক্রমে ঝালকাঠিতে ৪ হাজার ৫৭৮ মেট্রিক টন, পটুয়াখালীতে ৩ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন, বরিশালে ৩ হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন, ভোলায় ২ হাজার ৮৯০ মেট্রিক টন ও বরগুনায় ১ হাজার ২৫৫ মেট্রিক টন।
তবে চাষের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি আমড়া চাষ হয় ঝালকাঠিতে ৬০২ হেক্টর জমিতে, এরপর পর্যায়ক্রমে পিরোজপুরে ৪৬৩ হেক্টর জমিতে, পটুয়াখালীতে ৩১৫ হেক্টর জমিতে, বরিশালে ২৮২ হেক্টর জমিতে, ভোলায় ১৩১ হেক্টর জমিতে ও বরগুনায় ৬২ হেক্টর জমিতে। বরিশাল জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমড়া উৎপাদন হয় বানারীপাড়া, মেহেন্দিগঞ্জ, মুলাদী ও বাকেরগঞ্জে।
চাষিরা জানান, পেয়ারার মৌসুম শেষেই আমড়ার মৌসুম শুরু হয়, সাধারণত ভাদ্র মাস থেকে শুরু হয়ে চলে দুই মাস। এখন পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় মাত্র তিন ঘণ্টার ব্যবধানে বরিশালের আমড়া পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানীতে। এছাড়াও সড়কপথে সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোর, রাজশাহীসহ দেশের বড় বড় শহরে পাইকার ও ফড়িয়াদের মাধ্যমে পৌঁছে যাচ্ছে বরিশালে উৎপাদিত আমড়া।
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার আমড়া চাষি শরিফুল ইসলাম বলেন, তার কয়েক একর জমিতে প্রায় ৩ হাজার আমড়া গাছ আছে। এসব গাছ থেকে গত মৌসুমে ৪ হাজার মণ আমড়া ৬০ লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করেছেন তিনি। আবহাওয়া পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবছরও তিনি ভালো ফলন পাবেন বলে জানান।
বরিশাল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাম্মৎ মরিয়ম বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মাটি ও পানি আমড়া চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। বিশেষ করে বরিশালের ঝালকাঠী, পিরোজপুর ও পটুয়াখালীতে সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু আমড়ার ফলন হয়। এই অঞ্চলের চাষিরা সারা দেশের আমড়ার চাহিদার প্রায় ৮০ ভাগ পূরণ করে থাকেন। আমড়া এখন চাষিদের জন্য একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
তিনি আরও বলেন, জিআই স্বীকৃতি পাওয়ায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে বরিশালের আমড়ার পরিচিতি ও চাহিদা বাড়বে। এই স্বীকৃতি দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
গত ৩০ এপ্রিল শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের হাতে আমড়ার জিআই নিবন্ধনের সনদ তুলে দেন।