ধরাছোঁয়ার বাইরে স্বর্ণ চোরাচালানের ৮৩ সিন্ডিকেট

সোনা চোরাচালান থামছে না, প্রায় প্রতিদিনই পাচার হয়ে আসা সোনা ধরা পড়ছে বিভিন্ন বিমানবন্দরে। যত সোনা ধরা পড়ছে, তার কয়েকগুণ বেশি সোনা পাচার হয়ে যাচ্ছে বলে ধারণা শুল্ক গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের। দেশের অবৈধ সোনার এ বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বাজুসের সাবেক সভাপতি এনামুল হক দোলনের নেতৃত্বে ৮৩টি চক্র।
মূলত দোলনের নিয়ন্ত্রণেই পাচার হচ্ছে সোনার চালান। তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাকারবারের তথ্য দিয়েছে দুবাই ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। নজরদারিতে রেখেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তলব করা হয়েছে ব্যাংক হিসাব। গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। স্বর্ণ চোরাচালানের মূল হোতা এনামুল হক খান দোলন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না স্বর্ণ পাচার।
চোরাচালানে জড়িত সন্দেহে রাজধানীর ধনাঢ্য স্বর্ণ ব্যবসায়ী এনামুল হক খান দোলনকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভার্স নামের একটি স্বর্ণালংকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি।
তার বিরুদ্ধে দুবাইভিত্তিক স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। চোরাচালানের রহস্য উন্মোচনের জন্য দোলনকে তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে মজুদ সব স্বর্ণের হিসাব জমা দিতে ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, দোলন রাজধানীর চোরাই স্বর্ণালংকার ব্যবসার মূল হোতা। বায়তুল মোকাররম মার্কেট ঘিরে তার অবৈধ স্বর্ণালংকার ব্যবসার শাক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে।
চোরাকারবারের মাধ্যমে তিনি অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন। প্রশাসনের নাকের ডগায় দীর্ঘদিন তিনি অবৈধ কারবার চালিয়ে গেলেও এতদিন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. শহীদুল ইসলাম বলেন, এনামুল হক খানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগ আসে।
অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তার বিদেশ ভ্রমণসহ আনুষঙ্গিক সব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।
সরেজমিন রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মার্কেটে দেখা যায়, নিচতলা ও দোতলায় সারি সারি স্বর্ণালংকারের দোকান।
চাকচিক্যময় ও আলো ঝলমলে দোকানগুলোতে থরে থরে সাজিয়ে রাখা বিভিন্ন ডিজাইনের স্বর্ণালংকার। দোতলায় ১৫/এ নম্বরের দোকানটির দরজা মাত্র দুই ফুট। আশপাশের দোকানের কর্মচারীরা জানান, এটির মালিক এনামুল হক দোলন। নিচতলায় শারমিন জুয়েলার্স নামে তার মূল শোরুম।
দেখা যায়, অন্য সব দোকান থেকে ‘ডায়মন্ড অ্যান্ড ডিভার্স’ একেবারেই ভিন্ন। বায়তুল মোকাররম মার্কেটের অন্য সব দোকান স্বচ্ছ কাচঘেরা হলেও ছোট এই দোকানটির কাচের দরজায় ব্লাইন্ড পেপার সাঁটানো।
ফলে বাইরে থেকে ভেতরের কিছুই দেখা যায় না। দোকানে ঢুকে দেখা যায়, ভেতরে কোথাও স্বর্ণালংকারের ডিসপ্লে নেই। কয়েকটি টেবিলের ওপর দাঁড়িপাল্লা, নিক্তি ও মিটার রাখা।
এলোমেলো ছড়িয়ে আছে কয়েকটি চেয়ার। ৩-৪টি মাঝারি আকারের টেবিল পাতা। দেখে বোঝা যায়, বাইরে স্বর্ণের দোকানের সাইনবোর্ড থাকলেও ভেতরের চেহারা ভিন্ন। সাজসজ্জা দেখে মনে হয়, এটা একটা অফিস।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে ডায়মন্ড ডিভার্স নামের দোকানটি ‘বাংলা গোল্ড’ নামে পরিচিত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় গোল্ড হাউসের দরজা বন্ধ রাখা হয়।
ভেতরে নিক্তি বা মিটার নয়, রীতিমতো বড় দাঁড়িপাল্লায় স্বর্ণালংকার মাপজোখ করা হয়। এখানে ভরিতে নয়, স্বর্ণালংকারের পাইকারি বেচাকেনা হয় কেজি হিসাবে।
শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কেজি বা মণ হিসাবে স্বর্ণ বেচাকেনা করলেও এই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের আমদানি খাতা প্রায় শূন্য।
কয়েক বছরের রেকর্ড খুঁজেও তাদের ১০ কেজি স্বর্ণ আমদানির তথ্য পাওয়া যায়নি। আমদানি না করেও শারমিন জুয়েলার্সের জমজমাট পাইকারি ব্যবসার খোঁজ করতে গিয়ে দুবাইভিত্তিক চোরাচালানের খবর পাওয়া যায়।
এরপর এনামুল হক দোলনের ভ্রমণ-তথ্য চেয়ে পুলিশের বিশেষ শাখায় চিঠি দেয়া হয়। জবাবে ইমিগ্রেশন পুলিশ দোলনের বিদেশ ভ্রমণ সম্পর্কে যে তথ্য পাঠায় তা রীতিমতো বিস্ময়কর।
এতে দেখা যায়, অজ্ঞাত কারণে দোলন প্রায় প্রতি সপ্তাহে যাচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যে। তার নিয়মিত গন্তব্য মধ্যপ্রাচ্যের লাসভেগাসখ্যাত অভিজাত শহর দুবাই। এমনকি সপ্তাহে ২-৩ বারও সেখানে যাতায়াত করেছেন তিনি।
চলতি বছর জানুয়ারিতে শুল্ক গোয়েন্দার পক্ষ থেকে ইমিগ্রেশন পুলিশকে লেখা এক চিঠিতে বলা হয়, শারমিন জুয়েলার্স, ৬৭ বায়তুল মোকাররম ঢাকা-এর স্বত্বাধিকারী এনামুল হক খানের ব্যবহৃত সব পাসপোর্টে বিদেশ ভ্রমণের তথ্য প্রয়োজন।
এতে বিগত তিন বছরের ভ্রমণ-তথ্য চাওয়া হয়। এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জানুয়ারি এবং ৭ জুলাই পাঠানো পৃথক প্রতিবেদনে দোলনের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য পাঠানো হয়।
ইমিগ্রেশন পুলিশের এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অনুযায়ী এনামুল হক খানের পাসপোর্ট নম্বর বিএন-০৯৭৩৫৬৬, বিএক্স-০৭৩৪৫২৫, বিএইচ-০৮৯৩৯৯৪ এবং বিসি-০১৪৪১৫২-এর মাধ্যমে গমনাগমনের তথ্য এতদসঙ্গে প্রেরণ করা হল।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল থেকে ২০১৮ সালের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ১৮ মাসে এনামুল হক তার বিএন-০৯৭৩৫৬৬ নম্বর পাসপোর্ট ব্যবহার করে ৩৬ বার বিদেশে যান। এর মধ্যে ২৬ বারই গেছেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
এ ছাড়া বিএক্স-০৭৩৪৫২৫ নম্বর পাসপোর্টে গত বছর ১১ নভেম্বর থেকে চলতি বছর ২৪ জুন পর্যন্ত বিদেশ যান ১৪ বার। এর মধ্যে মাত্র চারবার গেছেন ভারত এবং থাইল্যান্ডে। বাকি ১০ বার যান সংযুক্ত আরব আমিরাত।
প্রতিবারই তিনি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দুবাই ভ্রমণ করেন। এক বা দুই দিনের মধ্যেই তিনি ফিরে আসেন। তবে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে দোলন সতর্ক হয়ে যান। তিনি দুবাই ভ্রমণের রেকর্ড লুকাতে ভিন্ন রুট বেছে নেন।
এখন তিনি প্রায়ই কলকাতা হয়ে দুবাই যাতায়াত করছেন। দোলনের বিদেশ ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্য হাতে পাওয়ার পর শুল্ক গোয়েন্দার অনুসন্ধানে উঠে আসে তিনি দুবাইয়ের স্থায়ী আবাসিক কার্ডধারী।
এ জন্য দুবাই বিমানবন্দরে তিনি বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকেন। ফলে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা এড়িয়ে সহজেই সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যাতায়াত করতেন পারেন।
সূত্র জানায়, চোরাই স্বর্ণের ব্যবসা করে অঢেল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছেন দোলন। ঢাকায় একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট ছাড়াও তার ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের অর্থ রয়েছে।
গ্রামের বাড়ি নরসিংদীতেও তিনি পাঁচ তারকা হোটেল স্টাইলে অভিজাত বাংলো বানিয়েছেন। এই বাড়ি নির্মাণের জন্য যাবতীয় ফিটিংসহ গৃহসজ্জার উপকরণ আনা হয় দুবাই ও ইতালি থেকে।
নরসিংদী শহর থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে মনোহরদী উপজেলার কাচিকাটা ইউনিয়নের খারাব গ্রামে এনামুল হক দোলনের বিশাল বাংলো।
বিলাসবহুল অত্যাধুনিক বাংলোটির সামনে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা প্রহরা থাকে। চারদিকে লেকবেষ্টিত নিরাপত্তাঘেরা বাড়িটি দেখতে প্রতিদিনই উৎসুক মানুষের ভিড় জমে।
বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, চারদিকে প্রাচুর্যের উপকরণ ছড়ানো। দামি সোফায় সাজানো ড্রয়িং রুম। একদিকে ডাইনিং হল। ছাদে মূল্যবান ঝাড়বাতি লাগানো।
লেকঘেঁষা সীমানাপ্রাচীর তৈরি করা হয়েছে পুরু স্বচ্ছ কাচ দিয়ে। একদিকে আছে বারবিকউ চুল্লি। বাংলো স্টাইলের দোতলা বাড়ির ছাদে বসার বিশেষ ব্যবস্থা।
সামনের ফাঁকা জায়গায় বিদেশি ঘাস দিয়ে প্রশস্ত লন বানানো হয়েছে। ঘাসের মাঝ দিয়ে মার্বেল পাথরে বানানো হাঁটার পথ। সব মিলিয়ে অপরূপ শৈল্পিক বাড়ি।
অজপাড়াগাঁয়ে এমন অভিজাত বাড়ি নিয়ে স্থানীয়দের মুখে মুখে নানা ধরনের গল্প চাউর। স্থানীয়রা জানান, এখানে প্রায়ই দামি দামি গাড়ির বহর নিয়ে অপরিচিত লোকজন আসে।
মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে নামিদামি শিল্পী এনে নাচ-গানের আড্ডাও বসানো হয়। তবে সেসব আড্ডায় সাধারণের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। স্বর্ণ ব্যবসায়ী দোলন এলাকায় ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী হওয়ায় তার কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন কেউ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, খোরশেদ আলম নামের এক সহযোগীর মাধ্যমে দুবাইসহ কয়েকটি দেশে হুন্ডি ব্যবসা ও সোনা চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করেন দোলন।
বাড়ির কেয়ারটেকার বলেন, এখানে প্রতি মাসেই মালিক তার পরিবার ও ব্যবসায়িক বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরতে আসেন। ১-২ দিন থেকে চলে যান।
সূত্র জানায়, বিদেশ থেকে চোরাই পথে বাংলাদেশে স্বর্ণালংকার আনা হয় যাত্রীদের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায়। চোরাচালান জগতে এ পদ্ধতিকে ‘প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার’ বলা হয়।
দুবাই ছাড়াও সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকেও স্বর্ণালংকার আনতে ‘প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার’ ব্যবহার করা হয়। মূলত আকাশপথেই স্বর্ণালংকার চোরাচালান হয়ে থাকে।
এ পদ্ধতির প্রথম ধাপে দুবাই অথবা সিঙ্গাপুরের বড় বড় স্বণালংকারের দোকানে বিভিন্ন ডিজাইনের গহনা পছন্দ করে রেখে আসে চোরাচালানিরা। এরপর ট্রাভেল এজেন্টদের মাধ্যমে ঢাকা অভিমুখী যাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
স্বর্ণের গহনা বহনের শর্তে যাত্রীদের বিমান টিকিটের ওপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। কাউকে কাউকে ডিসকাউন্টের বাইরে অতিরিক্ত নগদ টাকাও দেয় ট্রাভেল এজেন্ট।
এভাবে প্রতি যাত্রীকে ১০০ গ্রাম বা ১০ ভরি স্বর্ণালংকার বহন করতে দেয়া হয়। বহনে সুবিধা থাকায় নারী যাত্রীদের দেয়া হয় ৩০ ভরি পর্যন্ত। এভাবে স্বর্ণালংকার এনে ডিসকাউন্টে টিকিট বা নগদ অর্থ পাওয়ায় যাত্রীদের অনেকেই খুশি থাকেন।
দুবাই, সিঙ্গাপুর গেলে অনেক যাত্রী নিজে থেকে যোগাযোগ করে স্বর্ণালংকার এনে চোরাকারবারিদের কাছে দেন। জানা গেছে, বিদ্যমান আইনের ফাঁকফোকর কাজে লাগিয়ে যাত্রীদের মাধ্যমে স্বর্ণ চোরাচালান হচ্ছে।
শুল্ক আইনের ব্যাগেজ রুলস অনুযায়ী ভরিপ্রতি শুল্কের পরিমাণ দুই হাজার টাকা। তবে একজন যাত্রী নিজে ব্যবহারের জন্য বিদেশ থেকে ১০ ভরি পর্যন্ত স্বর্ণালংকার বিনা শুল্কে নিয়ে আসতে পারেন।
এ জন্য কোনো ধরনের শুল্ক বা কর দিতে হয় না। ব্যাগেজ রুলের এই ফাঁক কাজে লাগাচ্ছে চোরাচালানিরা। কারণ একজন যাত্রীর মাধ্যমে ১০ ভরি করে স্বর্ণ আনা গেলেও ২০ হাজার টাকা নিট লাভ থাকে।
এভাবে প্রতিবার একটি বিমানের মাত্র ১০ জন যাত্রীকে ম্যানেজ করতে পারলেও ১০০ ভরি স্বর্ণালংকার আনা যায়। যার শুল্ক দাঁড়ায় দুই লাখ টাকা। এ টাকার পুরোটাই চলে যায় চোরাকারবারির পকেটে।
ফলে লাভজনক এই ব্যবসায় একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন সক্রিয়। ট্রাভেল এজেন্টের ছদ্মবেশে স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে দুবাই, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে।
এমনকি এ দেশগুলোর এয়ারপোর্টের বাইরে যাত্রী ধরার জন্য চোরাকারবারিদের এজেন্টরা রীতিমতো লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, এনামুল হক খান দোলন দুবাই এবং সিঙ্গাপুর সিন্ডিকেটের সহায়তায় দুবাই ও সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে আগমনকারী বিভিন্ন যাত্রীর মাধ্যমে স্বর্ণ ও স্বর্ণালংকার দেশে পাঠান এবং বিধিবহির্ভূতভাবে মূল্য পরিশোধসহ বিদেশে অর্থ পাচার করেন। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে এনামুল হক খান দোলনের মানি লন্ডারিংয়ের সুনির্দিষ্ট তথ্য দিয়েছে দুবাইয়ের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তার বিরুদ্ধে দুবাইভিত্তিক স্বর্ণ চোরাচালান সিন্ডিকেটে জড়িত থাকার তথ্য দিয়েছে দুবাইয়ের অর্থ পাচার প্রতিরোধ ইউনিট। গত বছর ডিসেম্বরে এনামুল হক খান দোলন, তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
জানা গেছে এনামুল হক দোলনের নেতৃত্বে চোরাচালান অব্যাহত রেখেছে সারাদেশের ৮৩ চক্র। বায়তুল মোকাররমে দোলনের অন্যতম সহযোগী খান জুয়েলার্সের মিলন, বিশ্বনাথ ও চুন্নু। চক্রের খুলনার সাদিয়া আক্তার, হাম্মাম আল হাবিব, রসুল আমিন জুব্বা, পিয়াস আল মারহাবি, রামাতুল ফারাজি, আনসার উল্লাহ জসিম। ভারতের সিন্ডিকেটে আছেন সুরেশ, আসিফ আহমেদ, অজিত, গোবিন্দ, বিজন হালদার, লক্ষণ, গোপাল, কৃষ্ণ কুমার দাস, জুলহাস, রাতুল বাবু, কুমারজি, শ্যামল সাহা ও রামপাল। সিঙ্গাপুরের সিন্ডিকেটে আছেন সিন্ডিকেট এনডি ও স্টিফেন। পাকিস্তানি সিন্ডিকেটে আছেন আজমল হেলাল, মোহাম্মদ আলী, গিয়াস হাজারী, সোলায়মান, আবদুর রহিম জিন্নাহ, আসিফ মোর্শেদী, রাজ্জাক ও হামজা। নেপালি সিন্ডিকেটে আছেন গৌরাঙ্গ রোসান। বিদেশে বাংলাদেশি সিন্ডিকেটে আছেন মতিয়ার রহমান খলিল, রেজাউল করিম, মোহাম্মদ আলী, মাসুদ করিম, মিন্টু, হামীম, সোনা রফিক, নাছির, গোল্ডেন মনির, নিজাম, রেজাউল, রবিউল, দেলোয়ার ও এমরান হোসেন। আবু, আলমগীর, আজম ওরফে হুন্ডি আজম, ইব্রাহিম, জাহিদ, নেজাম, জসিম প্রকাশ সিএনজি জসিম, আজগর, রহিম, ওসমান, আজম, ফয়েজ, পংকজ, শাহজাহান, সাত্তার, বিধান, কৃষ্ণ, মৃদুল, শচীন, জসিম, আতিক, আসিফ ও মামুন। এছাড়াও রুহুল আমিন, রেজাউল করিম, মো. ওলিউর রহমান, মো. নাসির উদ্দিন, মো. শাহজালাল, আরিফ মিরাজী, আবু হায়াত জনি, রবিউল আলম রাব্বী, জাহিদুল ইসলাম, নাজমুল হোসেন, নাসির, রমজান, আলমগীর, মেহেদী, নুরুল ইসলাম, কফিল উদ্দিন, আবু তাহের ও কামরুল ইসলাম।
জানা যায়, সোনা পাচার সিন্ডিকেটে দোলনের অন্যতম আরেক সহযোগী ফিরোজ আলম। তিনি প্রায়ই দুবাই আসা-যাওয়া করেন। এছাড়া আলোচিত পাচারকারীদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ আনিস ও মোহাম্মদ ওয়াহেদুজ্জামান। তাদের বাসা সায়েদাবাদ। একাধিকবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন তারা। বর্তমানে তারা সিঙ্গাপুর অবস্থান করছেন। আরেকজন আবদুল আউয়াল। তার সঙ্গে শাসক দলের একাধিক নেতার যোগাযোগ রয়েছে। আরেক সিন্ডিকেট সদস্য ফারুক আহম্মেদ বর্তমানে অবস্থান করছেন দুবাই। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি সোনা পাচার করছেন। এর বাইরে সোহেল রানা, সুমন সারোয়ার, খলিল রহমান, মনির আহম্মেদ, ওয়ায়েদউল্লাহ, মিরপুরের সাইফুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জের মঞ্জুর হোসেন, পল্লবীর সামসুল হুদা, মুন্সীগঞ্জের ইসলাম শেখ, রাজবাড়ীর মোহাম্মদ হানিফ, মুন্সীগঞ্জের মোহাম্মদ রুবেল, বেবিচকে কর্মরত শরীয়তপুরের মিজান, শরীয়তপুরের রফিকুল ইসলাম, গফরগাঁওয়ের আনসার উল্লাহ জসিম, ফরিদপুরের ইদ্রিস মোল্লা, ভারতীয় নাগরিক রূপসাহা, গোপাল বিজন, বিজন হালদার, লক্ষ্মণ সেন, গোবিন্দ বাবু, লালু জয়দেব, গওহর প্রসাদ, সঞ্জীব, রামপ্রসাদ, মিন্টু, সুমন চ্যাটার্জি, রিয়াজ, তপন সাহা, ডালিম, মোনায়েম, ফারুক, বসাক চ্যাটার্জি ও স্বপন সাহা বাংলাদেশে সোনা পাচারের সঙ্গে জড়িত। তাদের পূর্ণাঙ্গ প্রোফাইল আছে তদন্তকারী সংস্থাগুলোর কাছে।

আরও পড়ুনঃ