মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পর মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এরই মধ্যে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ খসড়া তৈরি ও প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞা থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে যারা সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেননি তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।
বর্তমানে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় বলা আছে, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতার ঘোষণায় সাড়া দিয়ে ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ হতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে যে সকল ব্যক্তি বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাঁরাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গণ্য হবেন।’
খসড়ায় বীর মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, যাঁহারা ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরে গ্রামে-গঞ্জে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করিয়াছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হইয়া হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের এ দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করিয়াছেন এইরূপ সকল বেসামরিক নাগরিক উক্ত সময়ে যাঁহাদের বয়স সরকার কর্তৃক নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল এবং সশস্ত্র বাহিনী, মুক্তি বাহিনী, বিএলএফ ও অন্যান্য স্বীকৃত বাহিনী, পুলিশ বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রেজিমেন্ট (ই পিআর), নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স ও আনসার সদস্য তাঁহারা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে গণ্য হইবেন…।’
শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বাদ দিয়ে খসড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার আকাঙ্খায় হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী এবং তাহাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ।’
একইসঙ্গে যারা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেননি তাদের ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে।
‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীর’ সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে বা প্রবাসে অবস্থান করিয়া মুক্তিযোদ্ধাগণকে উদ্দীপিত করা এবং মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনকে ত্বরান্বিত করিবার প্রয়াসে সংগঠকের ভূমিকা পালন, বিশ্বজনমত গঠন, কূটনৈতিক সমর্থন অর্জন এবং মনস্তাত্ত্বিক শক্তি অর্জনের প্রেক্ষাপটে নিম্নবর্ণিত যেসকল বাংলাদেশের নাগরিকগণ প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা করিয়াছেন।’
সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ না নিয়ে এর আগে যারা বীর মুক্তিযোদ্ধার সনদ পেয়েছেন নতুন এই আইনের মাধ্যমে তাদের সনদ বাতিল হয়ে যাবে। তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা থেকে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারেন। তবে তাদের বিষয়ে নতুন করে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এখনো সেই সিদ্ধান্ত নেয়নি।
সংজ্ঞা পরিবর্তন হলে কয়েক হাজার মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে বাদ পড়বেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করে তা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই খসড়ার ওপর মতামত জানাতে পারবেন জনসাধারণ।