পতন কেটে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফেরার ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশের শেয়ারবাজার। গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া ৫ কার্যদিবসের মধ্যে ৪ কার্যদিবসেই শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। এতে সপ্তাহজুড়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়ছে অধিক সংখ্যাক প্রতিষ্ঠান। ফলে বেড়েছে মূল্যসূচক। একই সঙ্গে বেড়েছে বাজার মূলধন। পাশাপাশি লেনদেনের গতিও বেড়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন সপ্তাহ শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক বাড়লো। তবে এর আগে ৮ সপ্তাহ পতনের মধ্যে থাকে শেয়ারবাজার।
গত সপ্তাহে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া প্রধান মূল্যসূচক বেড়েছে প্রায় দুই শতাংশ। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে প্রায় তিনশ প্রতিষ্ঠান। দৈনিক গড় লেনদেন বেড়ে সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
আরও পড়ুনঃ টানা ঊর্ধ্বমুখী শেয়ারবাজার, ৪০০ কোটি টাকা ছাড়ালো লেনদেন
এর আগে গত ঈদুল ফিতর বা রোজার ঈদের পর থেকে শেয়ারবাজারে টানা ৮ সপ্তাহ দরপতন হয়। টানা ৮ সপ্তাহের পতনে ডিএসইর বাজার মূলধন কমে ২৬ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা। এছাড়া প্রধান মূল্যসূচক কমে ৫৮২ পয়েন্ট। টানা ৮ সপ্তাহ পতনের পর ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহে শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মেলে। ওই সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন বাড়ে ৩ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা। ঈদের পর প্রথম সপ্তাহে বাজার মূলধন বাড়ে ১৫২ কোটি টাকা।
এমন পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে ডিএসইতে বড় দরপতন হয়। তবে চার কার্যদিবস টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকে বাজার। এতে সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৬৮টির স্থান হয়েছে দাম বাড়ার তালিকায়। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৬টির। এছাড়া ৮৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৬১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা। যা আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার ৭৪৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে ১০ হাজার ৮২২ কোটি টাকা বা এক দশমিক ৬৬ শতাংশ।
বাজার মূলধন বাড়ার পাশাপাশি গত সপ্তাহে প্রধান মূল্যসূচকও বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স গত সপ্তাহে বেড়েছে ৭৮ দশমিক ৪২ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচক বাড়ে ৪৫ দশমিক ৩২ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৯৬ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৭১ দশমিক ১৭ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৫৩ শতাংশ। এতে তিন সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক বাড়লো ১৯৪ পয়েন্ট।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বাড়ে ২১ দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৮ দশমিক ৮০ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ১৭ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৭৩ শতাংশ।
বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক গত সপ্তাহজুড়ে বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৯০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ১৯ দশমিক ৮৩ পয়েন্ট বা এক দশমিক ১৩ শতাংশ। তার আগের সপ্তাহে বাড়ে ৩২ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বা এক দশমিক ৮৯ শতাংশ।
সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের গতিও বেড়েছে। সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৬২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৩২৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৩৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা বা ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে লাভেলো আইসক্রিমের শেয়ার। কোম্পানিটির শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, যা মোট লেনদেনের ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। প্রতিদিন গড়ে ১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
এছাড়া লেনদেনের শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, বিচ হ্যাচারি, ফাইন ফুডস, অগ্নি সিস্টেম, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ