দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ভারতীয় সুতা ডাম্পিং মূল্যে প্রবেশ করায় দেশীয় টেক্সটাইল মিলস ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল এ দাবি করেছেন। তিনি আরো বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানো নয়, বরং ইউনিট প্রতি ১০ টাকা কমিয়ে ২০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে। দাম বাড়ালে কারখানার চাবি সরকারের হাতে তুলে দেয়ার বিকল্প থাকবে না।
দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের সংকটাবস্থার ওপর গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বিশেষ সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল শিল্প সমিতি (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএ ভাইস প্রেসিডেন্ট শামীম ইসলাম, আবুল কালাম ও সালেহউদ জামান খান।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা রপ্তানি আয়ের প্রধান চালিকা শক্তি দেশের টেক্সটাইল সেক্টর দীর্ঘদিন যাবত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, ডলারের সংকট, ব্যাংক সুদের হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের শর্তাবলী পূরণের অজুহাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার অস্বাভাবিক হ্রাস এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংকট ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
টেক্সটাইল শিল্পের উল্লিখিত সমস্যাবলী ছাড়াও ভারত থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দর/ কাস্টমস হাউজ ব্যবহার করে ডাম্পিং মূল্যে সুতা ও কাপড় স্থানীয় বাজারে প্রবেশের ফলে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের চ্যালেঞ্জে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে, বলে দাবি করেন এ ব্যবসায়ী নেতা। শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমরা যেটুকু সুতা উৎপাদন করছি তা বিক্রি করতে পারছি না। এলসি ও বিনা এলসিতে ভারত থেকে সূতা আসছে। অন্যদিকে, ভারত যে দামে সুতা বিক্রি করছে তা ডাম্পিং। ফলে আমাদের উৎপাদিত সুতা গুদামে অবিক্রিত পড়ে আছে। বর্তমানে আট থেকে দশ হাজার কোটি টাকার সুতা আমাদের সদস্যদের গুদামে অবিক্রিত পড়ে আছে।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে গঠিত সরকারের কাছে আমরা সব ধরনের বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দেশের স্বার্থে অনতিবিলম্বে দেশীয় টেক্সটাইল খাতের ন্যায্য স্বার্থ সংরক্ষণের লক্ষ্যে আমাদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার দাবি জানাচ্ছি। সব স্থলবন্দর/কাস্টমস হাউজ ব্যবহার করে সুতা আমদানি বন্ধ করে শুধু সমুদ্র বন্দর দিয়ে সব ধরনের সুতা আমদানির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন কর্তৃক গ্যাসের দাম বাড়ানোর সাম্প্রতিক উদ্যোগ অবিলম্বে বন্ধ করে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হোক। সেই সঙ্গে অবিলম্বে বাংলাদেশের এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রক্রিয়া স্থগিত করার দাবি জানান বিটিএমএ সভাপতি। রাসেল বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ানোর চিন্তা বাদ দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতে মনোযোগ দিন। দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে কারাখানা বন্ধের বিকল্প থাকবে না।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একদিকে গ্যাসের চড়া দাম ও সরবরাহ সংকট, অন্যদিকে এলডিসিকে সামনে রেখে সংকুচিত করা হয়েছে নগদ সহায়তা। যে কারণে সুতার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এই সুযোগে ভারত পরিকল্পিতভাবে স্থানীয় বাজারের তুলনায় কম দামে সুতা পাঠাচ্ছে বাংলাদেশে। এতে দেশি সুতার চাহিদা কমায় হুমকির মুখে এই শিল্প। বিটিএমএ’র নেতাদের অভিযোগ, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের ফাঁদে পড়ে দেশি উদ্যোক্তাদের চাপে ফেলেছে সরকার। এখন গ্যাসের দাম বাড়ালে এ শিল্প ধ্বংসের আশঙ্কা তাদের।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিটিএমএ প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরের সর্ববৃহৎ সংগঠন, এর সদস্য সংখ্যা এক হাজার ৮৫৪। এর মধ্যে স্পিনিং ৫২৭টি, উইভিং ৯৮৬টি এবং ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং ৩৪১টি মিল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক যা বেসরকারি খাতে একক বিনিয়োগ হিসেবে সর্বাধিক। জিডিপিতে টেক্সটাইল এবং অ্যাপারেল সেক্টরের অবদান প্রায় ১৩ শতাংশ। দীর্ঘদিন যাবত দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল সেক্টর থেকে অর্জিত হচ্ছে যাতে বিটিএমএ সদস্যরা প্রায় ৭০ শতাংশের জোগানদাতা এবং এর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার রিটেশন হচ্ছে প্রায় ৩০ শতাংশ। বর্তমানে বিটিএমএর সদস্য মিলগুলো তৈরি পোশাক শিল্পের মধ্যে নিট খাতের প্রয়োজনীয় সুতার প্রায় ১০০ শতাংশ এবং উইভিংয়ে ৫০ শতাংশ সরবরাহ করছে। এছাড়াও বিটিএমএর সদস্য মিলগুলো ডেনিম, হোম টেক্সটাইল ও টেরি টাওয়ালের শতভাগ দেশীয় চাহিদা পূরণ করে রপ্তানি আয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে।