বাংলাদেশের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে দিয়েছে ভারত। এতে কিছুটা হলেও বিপাকে পড়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে চলতি মাসেই সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো রফতানি শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
আগামী ২৭ এপ্রিল এ বিমানবন্দর দিয়ে রফতানি কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন বেসামরিক বিমান চলাচল উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। এদিন সন্ধ্যা সাতটায় ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে স্পেনের জারাগোর উদ্দেশে উড়াল দেবে বিমানের কার্গো ফ্লাইট। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ায় তেমন একটা ক্ষতি হবে না। আমাদের দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে কার্গো রফতানি করতে হবে। অজানা কারণে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কার্গো রফতানি করছে না। এছাড়া অন্য দেশের তুলনায় ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য রফতানি করতে গেলে প্রায় দ্বিগুণ খরচ গুনতে হয়। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জও বেশি। এজন্যই ব্যবসায়ীরা অন্য দেশ থেকে রফতানির জন্য আগ্রহী। ব্যবসায়ী ও দেশের অর্থনীতির কথা মাথায় রেখে অবিলম্বে কার্গো ভাড়া এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ কমানো উচিত। তাহলে পণ্য রফতানির জন্য অন্য দেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না ব্যবসায়ীদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সিলেট প্রবাসী-অধ্যুষিত অঞ্চল। এখানের বেশিরভাগ মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে থাকায় সেখানে কাঁচা সবজির চাহিদা বেশি। সিলেট ও আশপাশের অঞ্চলের শাক-সবজি, আনারস, লেবুজাতীয় ফল, সাতকড়া, পান, ফ্রোজেন ফিস, সুগন্ধি চাল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা এবং কুটির শিল্পের বিশাল বাজার রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। বিগত ৬ বছর ধরে সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেই পণ্য পাঠাতেন রফতানিকারকরা। তাই এখানে ফ্লাইট চালুর দাবি জোরালো হচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট রফতানি শুরু হলেও এখানে দ্রুত প্যাকেজিং হাউজ নির্মাণ করতে হবে। তাহলে কার্গো ফ্লাইটের সুফল পুরোপুরি পাওয়া যাবে। প্যাকেজিং হাউজ করা গেলে দেশের যে কোনো স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা সবজিসহ যে কোনো পণ্য সিলেটে নিয়ে সহজে কার্গো ফ্লাইটে পাঠাতে পারবেন। এতে খরচ ও ভোগান্তি দুটোই কমবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
বিমান মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের বিমানবন্দরগুলো দিয়ে কার্গো রফতানি সক্ষমতা বাড়ানো হবে। এরই অংশ হিসেবে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর থেকে চলতি মাসে পণ্য রফতানি শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকেও কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এ দুটি বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে একদিকে ভোগান্তি কমবে, অন্যদিকে বাড়তি অর্থ খরচের হাত থেকে রক্ষা পাবেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি পণ্য দ্রুত আমদানিকারক দেশে পৌঁছানো যাবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে আটটি কার্গো এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম চলছে। এর সবই ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। কিন্তু শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো রফতানি করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বেশি টাকা দিয়েও সময়মতো রফতানি করা যায় না। শাহজালালে পর্যাপ্ত সুবিধা না পাওয়ায় এবং খরচ কম হওয়ায় রফতানিকারকরা কার্গোর বড় একটি অংশ সড়কপথে ভারতের বিমানবন্দরগুলোয় পাঠায় প্রসেসিং ও শিপমেন্টের জন্য। এখন ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ, আবার সিলেট থেকেও কার্গো চালু হচ্ছে কিন্তু চার্জ না কমালে আর্থিক ক্ষতি রফতানিতে প্রভাব ফেলবে।
তৈরি পোশাক খাতের নিট ক্যাটেগরির পণ্য উৎপাদন ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের সামান্য কিছু ক্ষতি হবে, সেটা খুব বড় ক্ষতি না। সরকার এই সংকট সমাধানে কাজ করছে। সিলেট থেকে কার্গো রফতানি শুরু হচ্ছে এটা সংকট নিরসনের অংশ।
তিনি বলেন, শুধু সিলেট নয়, কেন শাহজালাল বিমানবন্দর দিয়ে বিমান বাংলাদেশ কার্গো হ্যান্ডেল করে না সেটা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। বিদেশি এয়ার লাইনসগুলো মনোপলি ব্যবসা করছে, সেটাও সরকারকে দেখতে হবে। তাহলে আমাদের ট্রান্সশিপমেন্ট করে মালামাল পাঠাতে হবে না।
বিকেএমইএর সভাপতি বলেন, ঢাকা এয়ারশিপমেন্ট করতে পার কেজিতে ৫-৬ ডলার কখনো ৭ ডলারও দিতে হয়। একই পণ্য কলকাতা বা দিল্লি থেকে পাঠালে ২ বা আড়াই ডলারে পাঠানো যায়। এই চার্জ কেন বেশি থাকবে। গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিং চার্জ পার কেজিতে ২৯ সেন্ট নেওয়া হয়, অথচ কোনো কোনো এয়ারপোর্টে ২ বা ৩ সেন্ট নেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা ও সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন, উনারা যেভাবে পদক্ষেপ নিচ্ছেন আশা করি দ্রুত এসব সমস্যার সমাধান হবে।