ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞা: কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়ে সরকারকে বিকেএমইএ’র চিঠি

ভারতের স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্যের আমদানিতে আকস্মিক নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)। এই অপ্রত্যাশিত নিষেধাজ্ঞার পরিণতিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে সম্ভাব্য ক্ষতির আশঙ্কায় সংগঠনটি অন্তত তিন মাসের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা স্থগিত রাখতে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ চেয়েছে।

গত বুধবার বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমানকে দেয়া এক চিঠিতে এই অনুরোধ করেছেন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। যেসব পণ্য রপ্তানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে, সেগুলোকে এই নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে রাখার ব্যবস্থা করতেও সরকারকে অনুরোধ করেছেন তিনি।

বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘স্থলবন্দরে আটকে থাকা পণ্য, রপ্তানির জন্য কারখানায় উৎপাদন হতে থাকা পণ্য এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এই সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়ীরা কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ আশা করছেন।’
‘ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ন্যূনতম তিন মাসের সময় নেয়া গেলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতি থেকে বাঁচবেন,’ বলেন তিনি।

গত ১৭ মে ভারতের ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেড এক আদেশে জানায়, ভারতের আমদানিকারকরা বাংলাদেশ থেকে সব ধরনের তৈরি পোশাকসহ মোট ছয় ধরনের পণ্য স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করতে পারবে না। তবে ভারতের কলকাতা এবং মুম্বাইয়ের নভশেভা সমুদ্রবন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করা যাবে।

ভারত সরকারের এই আকস্মিক সিদ্ধান্তের পর বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা বেশ সমস্যায় পড়েছেন। অনেক রপ্তানিকারকের সীমান্তের স্থলবন্দরে পৌঁছে যাওয়া পণ্য এখন ফেরত আনতে হচ্ছে। আবার অনেকের রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করা পণ্য রপ্তানি নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কারণ ভারতে রপ্তানির ক্ষেত্রে স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি হবে ধরে রপ্তানির সময় এবং পণ্যের দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে।

ভারতের এই সিদ্ধান্তের পরে বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো গত ১৮ মে একটি জরুরি সভা ডাকে। ২০ মে আরেকটি সভা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। উভয় বৈঠকে পরিস্থতি বিশ্লেষণ করে যথাযথ করণীয় নির্ধারণের সুপারিশ ওঠে। ওই দুটি বৈঠকে উপস্থিত স্টেকহোল্ডাররা জোরালোভাবে সুপারিশ করেন, বাংলাদেশ সরকার যেন ভারতের সংশ্লিষ্ট সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেন।

বৈঠকের পর বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে পাল্টা কোনো পদক্ষেপ নেয়া হবে না। ভারতের সঙ্গে সচিব পর্যায়ে বাংলাদেশের একটি ফোরাম রয়েছে। ওই ফোরামে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে। ইতোমধ্যে ফোরামের বৈঠকের প্রস্তাব দিয়ে গত সপ্তাহে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বাণিজ্য সচিবকে দেয়া চিঠিতে হাতেম বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে স্থলবন্দর গুরুত্বপূর্ণ। স্থলবন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি পরিবহনে সময় কম লাগে। সমুদ্রবন্দরের তুলনায় খরচও অনেক কম। বাংলাদেশ থেকে ভারতে মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশই স্থলবন্দর দিয়ে হয়। গত ১০ মাসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ১২ হাজার ৮১১ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার পণ্য ছিল তৈরি পোশাক।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমান নিষেধাজ্ঞা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। অনেক পণ্য বর্তমানে স্থলবন্দরে আটকে আছে এবং নতুন অর্ডারের উৎপাদনও চলছে। অনেক আমদানি ঋণপত্রও (এলসি) খোলা ও প্রতিশ্রুত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার ফলে এসব বাতিল, আর্থিক ক্ষতি এবং দীর্ঘমেয়াদি সুনামহানি হতে পারে।