মুসা (আ.) এর মায়ের প্রতি আল্লাহ তায়ালার বিশেষ অনুগ্রহ

মিসরে স্বৈরাচার শাসক ছিল ফেরাউন। ৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল ফেরাউন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার ফলে মনে অহংকার জন্ম নিয়েছিল তার। পৃথিবীর হেন অপরাধ ছিল না যা সে করেনি। সাধারণ প্রজাদের ওপর অত্যাচার, নিজেকে খোদা দাবি, নিজের ক্ষমতা টিকাতে শিশু হত্যা সবই করেছিল সে।

দীর্ঘ দিন ক্ষমতার মসনদে থাকা ফেরাউন একদিন জানতে পারলো, একটি শিশুর জন্ম হচ্ছে, যে শিশুটি তার ক্ষমতা মসনদ ধ্বংস করে তাকে হত্যা করবে। জোতিষ্যীর মুখে এ কথা জানতে পেরে রাজ্যে সব ধরনের ছেলে শিশুকে হত্যা করা শুরু করলো ফেরাউন। কারো ঘরে ছেলে জন্ম নিলে তাকে তাৎক্ষণিক হত্যা করা হতো।

এমন এক কঠিন পরিস্থিতিতে মায়ের গর্ভে এলেন বনী ইসরায়েলে প্রখ্যাত নবী হজরত মুসা আ.। নির্ধারিত সময়ে জন্ম গ্রহণের পর নিজের নাড়ী ছেড়া ধনকে ফেরাউন মেরে ফেলার শঙ্কায় তিনি আল্লাহর ওপর ভরসা করলেন এবং একটি বাক্সে শিশুকে বন্দি করে নদীতে ভাসিয়ে দিলেন।

তিনি ভেবেছিলেন, সন্তান মরে যাওয়ার থেকে দূরে কোথাও কারো ঘরে বেড়ে উঠুক। তবুও আমার সন্তান বেঁচে থাকুক। শিশু মুসা আ.-কে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার সময় মা সঙ্গে তার বোনকে পাঠিয়েছিলেন যতদূর সম্ভব বাক্সটির খোঁজ রাখার জন্য।

বাক্সটি ভাসতে ভাসতে ফেরাউনের রাজদরবারের গোসলের ঘাটে এসে ভিড়লো, ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়ার চোখে পড়লো। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। বাক্স খুলে শিশু সন্তান দেখতে পেয়ে খুশি হলেন, নিজের সন্তান হিসেবে লালন পালনের সিদ্ধান্ত নিলেন। ফেরাউন প্রথমে অমত করলেও পরবর্তীতে রাজি হলো।

ছোট্ট শিশুকে দুধপানের জন্য ধাত্রীর খোঁজ করা হলো। একাধিক ধাত্রীকে দেওয়া হলো শিশু মুসাকে দুধ পান করানোর জন্য। কিন্তু তিনি কারো দুধ পান করলেন না। মুসা আ.-এর বোন শুরু থেকে সব ঘটনা দেখছিলেন। তিনি রাজ দরবারেও উপস্থিত হয়েছিলেন। সব দেখে তিনি বললেন, আমার কাছে একজন ধাত্রীর খোঁজ আছে, এই শিশু হয়তো তার দুধ পান করতে পারে।

ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া তাকে নিয়ে আসতে বললেন। ধাত্রী বেশে ফেরাউনের প্রাসাদে এলেন মুসা আ.-এর মা। শিশু মুসা মায়ের বুকের দুধ গ্রহণ করলেন। তাকেই শিশু মুসার লালন-পালনের দায়িত্ব দেওয়া হলো। এভাবে আল্লাহ তায়ালা মুসা আ.-এর মায়ের ওপর অনুগ্রহ করে সন্তান তার বুকেই ফিরিয়ে দিলেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

‘আর আমি তো তোমার প্রতি আরো একবার অনুগ্রহ করেছিলাম, যখন আমি তোমার মাকে যা জানানোর তা জানিয়েছিলাম। এই মর্মে (জানিয়েছিলাম) যে তুমি তাকে [মুসা (আ.)] সিন্দুকের মধ্যে রাখো অতঃপর নদীতে (নীল নদে) ভাসিয়ে দাও, যাতে নদী তাকে তীরে ঠেলে দেয়। তাকে আমার শত্রু ও তার শত্রু (ফেরাউন নদী থেকে তুলে) নিয়ে যাবে। আমি আমার কাছ থেকে তোমার [মুসা (আ.)] প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দিলাম, যাতে তুমি আমার তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হও।’ (সূরা ত্বহা, আয়াত : ৩৭-৩৯)