যে ফল থেকে রুটি বানানো যায়

যে ফল থেকে রুটি বানানো যায়

একটা ফল আছে এ দেশে, যে ফল থেকে রুটি বানানো যায়। এ জন্য সে ফলের ইংরেজি নাম ব্রেড ফ্রুট, বাংলায় রুটি ফল। আঠারো শতকের শেষ দিকে ব্রিটিশ নাবিকেরা দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের তাহিতি দ্বীপ থেকে এ উপমহাদেশে রুটি ফল নিয়ে আসেন। তখন তাহিতির মানুষের প্রধান খাদ্য ছিল রুটি ফল। এখনও বেশ কিছু দেশে এটি প্রধান খাদ্য। বর্তমানে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজে ব্যাপকভাবে রুটি ফলের চাষ হয়। বাংলাদেশেও এখন ফলটি বেশ ধরছে।

১৯৮২ সালে সার্ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সময় শ্রীলঙ্কার কৃষিমন্ত্রী শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে রুটি ফলের কয়েকটি চারা বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। গাজীপুরে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট চত্বরে সেগুলো লাগানো হয়েছিল। একটি বড় গাছ আছে আসাদ গেটের হর্টিকালচার সেন্টারে। আরেকটি গাছ আছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে। সব গাছেই প্রতিবছর গ্রীষ্মে প্রচুর ফল ধরে।
এ বছর মাঝারি আকারের কয়েকটি গাছ দেখলাম চট্টগ্রামে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে। গাছগুলো দেখে মনে হলো বয়সে তরুণ। তবে বাড়বাড়ন্ত বেশ, প্রচুর ডালপালা ও পাতা ছড়িয়েছে। পাতাগুলো বেশ চমৎকার। সাধারণত এ রকম হয় না। অনেকটা পেঁপে পাতার মতো মনে হয়।

রুটি ফলের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Artocarpus altilis ও গোত্র মোরেসি; অর্থাৎ কাঁঠাল, চাপালিশ, ডুমুর, বট ইত্যাদি গাছের গোত্রীয়। এটি চিরসবুজ বড় বৃক্ষ, অর্থাৎ পাতা ঝরে কখনও পত্রশূন্য হয় না। গাছের উচ্চতা ২৬ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। ডাল ভাঙলে সাদা দুধের মতো আঠালো কষ ঝরে। কোনো কোনো দেশে এই আঠা দিয়ে নৌকার কাঠের জোড়া লাগানো হয় বা ছোট ছিদ্র বন্ধ করা হয়। স্ত্রী ফুল ফোটে ফলের মতো গড়নে, পুরুষ ফুল ফোটে লম্বাটে কাঠির মতো পুষ্পমঞ্জরিতে। স্ত্রী ফুলের আগে পুরুষ ফুল ফোটে, কিছুক্ষণ পরই ফোটে স্ত্রী ফুল। ফুল হলুদাভ সবুজ রঙের। ফুল ফোটার প্রায় তিন দিন পর পরাগায়ন ঘটে।

দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশের গাছে কাঁঠালের মতো অনেক বড় বড় ফল দেখা গেলেও এ দেশে অত বড় হয় না। একটা গাছে ২০০টি পর্যন্ত ফল ধরতে পারে। ব্রেড ফ্রুটের ফল বীজবিহীন ও বীজধারী– দুই রকমই আছে। বীজধারী জাতকে বলা হয় ব্রেড নাট, আর বীজবিহীন জাতের নাম ব্রেড ফ্রুট। বীজবিহীন জাতের ফল রুটি তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়, বীজযুক্ত ফলের বীজ খাওয়া হয়। এর শিকড় কেটে কলম করে চারা তৈরি করা যায়। তবে বীজ দিয়ে চারা তৈরি করা সহজ।

কাঁচা ফল সবুজাভ, ডিম্বাকার; পাকা ফল হলুদাভ। ফলের গায়ে কাঁঠালের মতো কাঁটা আছে, তবে তা সুচালো নয়। পাকা ফল খাওয়ার চেয়ে কাঁচা ফল সবজি ও তা চাক চাক করে কেটে রুটির মতো সেঁকে খাওয়া হয়। কোথাও কোথাও ফল এভাবে কেটে শুকিয়ে রাখা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের একজন অধ্যাপক জানিয়েছেন, এটি ভেজেও খাওয়া যায়। খেতে ফ্রেঞ্চ ফ্রাইয়ের মতো লাগে।

চট্টগ্রামে কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মনিরুজ্জামান বাদল বললেন, কাঁচা ব্রেড ফ্রুট এঁচড়ের মতো তরকারি রেঁধে খাওয়া যায়।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ