অগ্রিম আয়কর বাস্তবায়ন হলে টেক্সটাইল মিল বন্ধ হয়ে যাবে

#তুলা আমদানির অগ্রিম কর সোমবারের মধ্যে প্রত্যাহারের দাবি

#তুলা আমদানিতে কর বসিয়ে প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ রক্ষা কি না প্রশ্ন বস্ত্রকলমালিকদের

#৯০ শতাংশ মালিক কারখানা বিক্রি করতে আগ্রহী

তুলা আমদানির ওপর সম্প্রতি ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) আরোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ আয়কর বাস্তবায়ন হলে দেশের টেক্সটাইল মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাবে জানিয়েছেন বস্ত্রকল মালিকরা।

শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বস্ত্রকলের মালিকদের সংগঠন বিটিএমএ নেতারা এ প্রশ্ন তোলেন। একই সঙ্গে তাঁরা অনতিবিলম্বে আগামী সোমবারের মধ্যে এ অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। অন্তত ৯০ শতাংশ মালিক বর্তমানে তাদের কারখানা বিক্রি করে দিতে আগ্রহী বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
এ সময় আরো বক্তব্য দেন পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন, অমল পোদ্দার, হোসেন মেহমুদ, মো. খোরশেদ আলম, রাজিব হায়দার, সালেহউজ্জামান খান প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ টেরিটাওয়েল অ্যান্ড লিনেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতারাও বক্তব্য দেন।

আরও পড়ুনঃ তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার চান টেক্সটাইল মালিকরা

সংবাদ সম্মেলনে বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল বলেন, আমার নিজের একটি টেক্সটাইল মিল আছে, যেখান থেকে সুতা নিয়ে আমি নিজস্ব ডেনিম ফ্যাক্টরিতে ব্যবহার করতাম। কিন্তু এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যেখানে আমাকে সুতা কিনতে হবে ভারত থেকে। এই পরিস্থিতিতে দেশের কোনো টেক্সটাইল মিল টিকে থাকতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি অবিলম্বে নতুন ট্যাক্স ও ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান। রাসেল বলেন, বাংলাদেশে আমার নিজের কারখানায় তুলা থেকে উৎপাদিত সুতার চেয়ে ভারত থেকে সুতা আমদানি করতে কম খরচ হবে। তাহলে আমাদের এ নিয়মনীতি কি পার্শ্ববর্তী দেশকে স্বচ্ছল করার জন্য? তাদের কর্মসংস্থান বাড়ানোর জন্য করছি? সরকার কি নিরলসভাবে কাজ করছে ওদের স্বার্থ রক্ষার্থে; এ বিষয়টি একটু ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।

বিটিএমএ সভাপতি সরকারের কাছে তিনটি দাবি তুলে ধরেন। প্রথমত, তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ এআইট অবিলম্বে প্রত্যাহার করা। দ্বিতীয়ত, বস্ত্র উৎপাদনে জড়িত কোনো সুতা উৎপাদন, সুতা ডাইয়িং, ফিনিশিং, কোনিং, কাপড় তৈরি, কাপড় ডাইয়িং, প্রিন্টিং অথবা এ ধরনের এক বা একাধিক প্রক্রিয়ায় নিয়োজিত কোনো মিলের ব্যবসা থেকে অর্জিত আয়ের ওপর প্রদেয় আয়করের হার একই শিল্প খাত হিসেবে আরএমজি সেক্টরের সমপরিমাণ (১২ শতাংশ) ২০২৮ সালের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা। তৃতীয়ত, দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত কটন সুতা, কৃত্রিম আঁশ ও অন্য আঁশের সংমিশ্রণে তৈরি সুতার ওপর উৎপাদন পর্যায়ে কেজিপ্রতি সুনির্দিষ্ট কর পাঁচ টাকা অব্যাহতি দেয়া।

বিটিএমএর সহসভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বর্তমানে টেক্সটাইল খাতে করপোরেট ট্যাক্সের হার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও নতুন এ এআইটির কারণে কার্যকর কর হার প্রায় ৫৯ শতাংশে পৌঁছে যাবে। তিনি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, দামের ঊর্ধ্বগতি, শ্রমিকের বেতন বৃদ্ধি, রপ্তানি প্রণোদনা কমানোসহ নানা চাপে শিল্প খাত ইতিমধ্যে বিপর্যস্ত। তার ওপর নতুন করে ট্যাক্স-ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। অথচ প্রতিবেশী দেশগুলো টেক্সটাইল খাতে নানা সুবিধা দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের দেশের শিল্প কারখানা বন্ধ করে দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না। এখন অন্তত ৯০ শতাংশ মালিক তাদের কারখানা বিক্রি করে দিতে আগ্রহী। মামুন বলেন, আগামী সোমবারের মধ্যে যদি ট্যাক্স প্রত্যাহার না হয়, তাহলে সরকার যে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট নিয়েছে তার ফল হিতে বিপরীত হবে। ইতোমধ্যে বন্দরে থেকে কেউ তুলা খালাস করছে না। সরকার এ ট্যাক্সকে সমন্বয়যোগ্য বললেও তা বাস্তবে ফেরত পাওয়ার নজির নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই ট্যাক্স পরিশোধ করতে গেলে আমাদের নতুন করে ব্যাংকঋণ নিতে হবে।

সংগঠনের আরেক ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেউদ্দিন জামান খান অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পকে ধ্বংস করার জন্য কেউ এই ধরনের কাজ করছে। বিটিএমএর আরেক পরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, দেশের বস্ত্রকল ধ্বংসের পরিকল্পনা নতুন নয়। এটি শুরু হয়েছে কয়েক বছর আগেই। এ ধরনের নানা ষড়যন্ত্র চলছে বলে জানান তিনি।

বিটিএমএ পরিচালক হোসেন মেহমুদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের কারণে ব্যবসায়ীরা দেশটি থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোর বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন। এমন পরিস্থিতিতে দুই শতাংশ অগ্রিম আয়কর আরোপ করা হলো। ফলে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলে আমদানি বাড়ানোর পথে যেতে পারবে না।
বিটিএমএর তথ্যানুযায়ী, সংগঠনটির ১ হাজার ৮৫৮টি সুতাকল, উইভিং ও ডাইং-প্রিন্টিং-ফিনিশিং বস্ত্রকল রয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ২৩ বিলিয়ন ডলার। দেশের শীর্ষ রপ্তানি আয়ের খাত তৈরি পোশাকশিল্পের সুতা ও কাপড়ের ৭০ শতাংশের জোগানদাতা হচ্ছে বস্ত্র খাত। ফলে বস্ত্রশিল্পের যেকোনো সমস্যা তৈরি হলে তা পোশাকশিল্পেও এর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ