শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনতে যত রকম আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা যায়, তা-ই করছে সরকার।
আজ শনিবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘জুলাই বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা ও গণমাধ্যম’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘জাতি যদি সোচ্চার থাকে এবং প্রেসারে রাখতে পারি, তাহলে শেখ হাসিনাকে ঠিকই দেশে আনা হবে। তার (শেখ হাসিনা) বাবার খুনিকে যেভাবে খুঁজে খুঁজে নিয়ে আসছে, ঠিক তেমনি অন্তর্বর্তী সরকার এবং পরবর্তী সরকারের প্রধান দায়িত্ব হবে, শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের সম্মুখীন করা। এর জন্য যত রকমের ইন্টারন্যাশনাল প্রেসার তৈরি করা যায়, সেটা অন্তর্বর্তী সরকার করছে।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে একটা হার্ডলাইনে গণ-অভ্যুত্থান হয়েছে। সুফি ইসলামকে তারা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। বিদেশে আমাদের যারা শত্রু, তারা এটাকে নিয়ে খেলছে।’ তিনি বলেন, ‘আপনি মাজার পছন্দ করেন না, সেখানে যাইয়েন না। কিন্তু আপনি ভাঙতে যাওয়াটা মানে হচ্ছে বিদেশে একটা মেসেজ দেওয়া হচ্ছে। তাদের মতপক্ষকে আপনি সম্মান করেন না। এটা খুব ভয়াবহ মেসেজ। এই মেসেজ দেওয়া মানে বিদেশিরা বাংলাদেশের সম্পর্কে একটি খুব বাজে ধারণা নেবে। এটা আমাদের কোনোমতেই হতে দেওয়া যাবে না।’
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, ‘জুলাইয়ের যে মহৎ বিপ্লব, সেই বিপ্লবের বড় একটা জিনিস হলো আমরা রাষ্ট্র সংস্কার করতে চাই এবং সেই সংস্কারটা আমরা করছি। কিন্তু আমরা কিছু কিছু জিনিস দেখছি, এমন কিছু কাজ হচ্ছে, যেখানে মানুষ ভাবছে আমাদের বিপ্লবটা কী বেহাত হয়ে গেল?’ তিনি যোগ করেন, ‘জুলাই বিপ্লব বেহাত হয়নি। জুলাই বিপ্লব তার যে আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি করেছিল, সে রকমই আছে এবং সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।’
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘হাসিনার অপকর্ম আমরা শুধু পত্রিকায় দেখেছি না, হলে-ফেসবুকে শুনছি। কিন্তু এটাকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে একটা রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে জানুন। সেটা জানার জন্য শ্বেতপত্র রয়েছে।’
শফিকুল আলম শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শ্বেতপত্রটি ডাউনলোড করে পড়ে নেবেন। এটা ৪০০ পৃষ্ঠার একটি অনন্ত দলিল। এটা আমাদেরকে পড়তে হবে। আমার-আপনার টাকা তারা কীভাবে চুরি করেছে, কীভাবে বিদেশে পাঠিয়েছে, সেটার ভয়াবহ দলিল এটা।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, ‘আমরা একটা রোডম্যাপ দিয়েছি। জনআকাঙ্ক্ষা ছিল রাষ্ট্র নির্মাণ করতে হবে। আমাদেরকে এখন রাষ্ট্র সংস্কার করতে হচ্ছে। এই রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য প্রধান উপদেষ্টা বড় রকমের পদক্ষেপ নিয়েছেন। চার সংস্কার কমিশন প্রতিবেদন দিয়েছে। আশা করি, আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঠিকঠাক সব রিপোর্ট আমরা পাব।’
জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বলেন, ‘পুলিশ কী আগের মতোই থাকবে, পলিটিক্যাল গভর্নমেন্টের হয়ে খুনোখুনি করবে, মানুষের এগেনেস্টে ফেক কেস দিয়ে হেরাস করবে, নাকি পুলিশ হবে বাংলাদেশের মানুষের বন্ধু। সেটা নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।’
বর্তমান সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের কাজে অনেক উন্নয়ন ঘটিয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, বিশেষ করে প্রতি মাসে অর্থনীতিতে উন্নয়ন, যা একটি দেশের জন্য অনেক বড় অর্জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (ইবিসাস) যৌথ উদ্যোগে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. রশিদুজ্জামান এতে সভাপতিত্ব করেন।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. নকীব মো. নসরুল্লাহ। এ ছাড়াও সেমিনারে আলোচক ছিলেন বাসসের বিশেষ সংবাদদাতা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ে সংযুক্ত এস এম রাশিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি তাইমুল হক জায়িম।