আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটে ব্যাপক শুল্ক ও কর সংস্কারের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আজ সোমবার (২ জুন) অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এ বাজেট ঘোষণা করবেন।
দেশের অর্থনীতি নানা চাপের মুখে পড়লেও এ বাজেট স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করছে সরকার।
সাধারণ মানুষের জন্য বাজেটে বড় ধাক্কা হতে যাচ্ছে ভ্যাট বৃদ্ধি ও কর কাঠামোর রদবদল। এই বাজেটের প্রভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হলেও করহার বৃদ্ধির কারণে সব শ্রেণির করদাতার ওপর করের চাপ বাড়বে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে ভ্যাট সুবিধা প্রত্যাহার ও কর বৃদ্ধির যে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, তা ব্যবসা পরিচালনার ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি সাধারণ ভোক্তাদের জীবনযাত্রাকেও ব্যয়বহুল করে তুলবে। বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেনÑ কাঙ্খিত রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি শিল্প ও ভোক্তা সুরক্ষার বিষয়টিও বিবেচনায় নেয়া জরুরি।
আরও পড়ুনঃবিকেল ৪টা নয়, ৩টায় বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থ উপদেষ্টা
জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর এটি হতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন দিলে অন্তর্বর্তী সরকারের একমাত্র বাজেট হবে এটি। এবারের বাজেট কিছুটা ছোট হবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা। খসড়া অনুযায়ী বাজেটের আকার ঠিক হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার মত। এই অংক স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম বাজেটের আকার আগের অর্থবছরের তুলনায় কমছে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়ে গিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবারের বাজেট কমানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে, যা চলতি বছরের দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার থেকে কম। অর্থাৎ বাজেট ঘাটতি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৩ দশমিক ৬২শতাংশ হবে। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকার বিদেশি ঋণ, ব্যাংক ঋণ এবং সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করবে।
জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) জ্যেষ্ঠ গবেষক অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, রাজস্ব আদায়ের দিক থেকে আমরা আশা করবো যে, এবার সাধারণ মানুষের জন্য যে অপ্রত্যক্ষ কর আছে, তাকে না বাড়িয়ে প্রত্যক্ষ কর কীভাবে আমরা ভিত্তি সম্প্রসারণ করতে পারি। এখানে যে লিকেজ আছে সেটা কীভাবে আমরা কমাতে পারি, এদিকে নজর রাখা হবে। গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকারের উচিত রাজস্বের সাথে বিবেচনা করেই বা ঋণ বিবেচনা করেই কেবলমাত্র সরকারের ব্যয়ের কাঠামোটি করা।
তথ্য্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অনিশ্চয়তার মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বেসরকারি বিনিয়োগ জোরদার করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে মজবুত করার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি বর্তমান সরকার। সংসদ না থাকায় ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরের বাজেট এবার রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হবে। আজ সোমবার বিকেল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বাজেট বক্তৃতা সম্প্রচার করা হবে। এর আগে সবশেষ সংসদের বাইরে বাজেট দেয়া হয়েছিল ২০০৮ সালে। তখন ক্ষমতায় ছিল সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ওই বছরের ৯ জুন তখনকার অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ২০০৮-০৯ অর্থবছরের জন্য ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেছিলেন।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, জিডিপির উচ্চাকাঙ্খী প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ, যা চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটের ৫ দশমিক ২৫ শতাংশের থেকে কিছুটা বেশি। তবে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ৫ শতাংশের নিচে প্রবৃদ্ধি অনুমান করছে।
এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে। এটিকে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে চাচ্ছে সরকার। যদিও অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন যে, চলমান মূল্যস্ফীতির চাপ এ লক্ষ্য পূরণে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর আর্থিক সুরক্ষার জন্য বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সম্প্রসারিত হবে। সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও ভাতা উভয়ই বাড়বে। কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রযুক্তি খাত বাজেটের অগ্রাধিকারপূর্ণ খাত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ চলতি রাজস্ব বছরে দুই লাখ ৬৫ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এতে সরকার যে বিনিয়োগবান্ধব পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
আসন্ন বাজেটকে ব্যবসা-বান্ধব আখ্যায়িত করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে করনীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজস্ব সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও পাঁচ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার আগ্রাসী লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পরামর্শ দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা সংস্থা আইএমএফ।
অনুন্নয়ন বাজেট পাঁচ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে বর্তমান রাজস্ব বছরের বরাদ্দের চেয়ে যা ২৮ হাজার কোটি টাকা বাড়বে। সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখবে। কৃষি, সার ও বিদ্যুতের জন্য ভাতা অব্যাহত থাকবে। তবে, বাজেট ঘোষণার প্রাক্কালে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের আশা করছেন, আবার কেউ বাস্তবায়নের জটিলতাকে নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
কাঠামোগত সংস্কার ও কার্যকর বাস্তবায়ন ছাড়া বাজেটের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য পূরণ কঠিন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা সম্পদ কর বাড়ানো এবং কর আদায় ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে সরাসরি কর বৃদ্ধি এবং পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের খসড়া ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বাজেটের মূল লক্ষ্য রাজস্ব আদায় বাড়িয়ে ঘাটতি কমানো এবং আইএমএফের শর্ত পূরণ করা। প্রস্তাবিত বাজেটে কর বাড়ানোর একগুচ্ছ প্রস্তাব এবং ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহারের কারণে দেশের সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ী মহলের ওপর চাপ বাড়তে চলেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের এই পদক্ষেপ রাজস্ব আদায় বাড়াতে নেওয়া হলেও এতে শিল্প খাত ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা বিশ্লেষকদের। এমনিতেই দীর্ঘ দুই বছর ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। ২০২৪ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত টানা ১০ মাস মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ শতাংশের ওপরে। বর্তমানে তা ৯ শতাংশে নামলেও তাতেও স্বস্তি নেই। সীমিত আয়ের মানুষ এখনো ব্যয় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে।
শুল্ক ও কর বৃদ্ধি : নতুন বাজেটে পণ্যের কাস্টমস শুল্ক ও কর বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় সরাসরি প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে নির্মাণ উপকরণ, শিশুখেলনা, যানবাহন ও কৃষিজ সামগ্রীর ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। ফলে বাড়তি ব্যয়ের চাপ পড়বে ভোক্তাদের কাঁধে।
ঘরের চারপাশ আলোকিত করতে চাইলে এবার গুনতে হবে অতিরিক্ত টাকা। সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগতে যাচ্ছে নির্মাণ খাতে। সিমেন্ট, রড, বার, অ্যাঙ্গেল, টাইলস, স্ক্রু, নাট, বোল্টসহ নির্মাণসামগ্রীর দাম অনেকটাই বাড়তে পারে। সিমেন্ট তৈরির মূল কাঁচামাল ক্লিংকারে আগে নির্ধারিত মূল্যে (৭০০ থেকে ৯৫০ টাকা প্রতি মেট্রিক টন) শুল্ক নির্ধারিত ছিল। এবার বাজারমূল্যে ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ হারে কাস্টমস শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ডলারের দাম বাড়া এবং বাজারে অস্থিরতার কারণে সিমেন্ট ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে। রড, বার ও অ্যাঙ্গল তৈরির কাঁচামালের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বসানো হচ্ছে। একইভাবে স্ক্রু, নাট ও বোল্টের করভার প্রায় তিনগুণ বেড়ে ৩৭ শতাংশ থেকে দাঁড়াতে যাচ্ছে ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশে। টাইলস এবং নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত মার্বেল ও গ্রানাইট বোল্ডারে সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে এসব পণ্যের মোট করভার ৮৯ দমমিক ৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১২৭ দশমিক ৭২ শতাংশে। ‘স্থানীয় শিল্প রক্ষার’ যুক্তিতে জিপসাম বোর্ড ও শিট আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক দ্বিগুণ করে ২০ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
ঢাকা শহরের অন্যতম জনপ্রিয় পরিবহন ব্যাটারিচালিত রিকশার দামও বাড়তে পারে। কারণ, এই রিকশায় ব্যবহৃত ১২০০ ওয়াট ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। তামাকবীজ আমদানিতে আগে কোনও শুল্ক ছিল না— এবার তা ২৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রস্তাব এসেছে। একইভাবে সয়াবিন মিলের ওপর শূন্য থেকে ৫ শতাংশ কাস্টমস শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে— যা প্রভাব ফেলবে পোলট্রি ও কৃষি খাতে।
শিল্প খাতে ভ্যাট সুবিধা প্রত্যাহার : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে বাজেটে স্থানীয় শিল্পের জন্য বিদ্যমান ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা অনেক ক্ষেত্রেই প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এর ফলে ইলেকট্রনিক্স, গৃহস্থালী সামগ্রী, প্লাস্টিক, মোবাইল ফোনসহ বহু শিল্প খাতে উৎপাদন খরচ বাড়বে এবং দেশীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমবে। বিশেষত, স্থানীয় টেক্সটাইল খাতে প্রতি কেজি কটন সুতা ও ম্যান-মেইড ফাইবার সুতার সুনির্দিষ্ট কর (ভ্যাট) ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভারতীয় সুতার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে বাংলাদেশি মিলগুলো।
দ্বিগুণ হচ্ছে টার্নওভার কর ও উৎসে কর : টার্নওভার করের হার দ্বিগুণ করার প্রস্তাব রয়েছে বাজেটে, যদিও সীমা বাড়ানো হচ্ছে এক কোটি টাকা থেকে চার কোটি টাকা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, লাভ-লোকসান না দেখেই এই কর আরোপ করা হলে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। লাভ-লোকসান বিবেচনা না করে সব প্রতিষ্ঠানের ওপর এই কর বসানোয় ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
৩১টি শিল্পের কর অবকাশ সুবিধা বাতিল হচ্ছে: বর্তমানে ৩১টি শিল্প খাত অঞ্চলভেদে ১০ বছরের কর অবকাশ সুবিধা পাচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ফার্মাসিউটিক্যালস, কৃষি যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স, হোম অ্যাপ্লায়েন্স, টায়ার ম্যানুফেকচারিং, অটোমোবাইল পার্টস, রোবোটিক্স, এআই ও ন্যানোটেকনোলজি। আইএমএফ-এর প্রস্তাবে সরকার এবার শিল্প খাতে দীর্ঘদিন ধরে চালু থাকা কর অবকাশ সুবিধা বাতিলের পথে হাঁটছে। শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, এই সুবিধা বাতিল হলে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হবে এবং অনেক কারখানা সম্প্রসারণ পরিকল্পনা থেকে সরে আসবে। এতে কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আয়করের আওতায় আসছে আইটি : আগে যেসব আইটি সেবা ও ফ্রিল্যান্সিং আয় করমুক্ত ছিল, এবার বাজেটে সেগুলোকে করজালের আওতায় আনা হচ্ছে। এর আওতায় থাকবে— সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, অ্যাপ্লিকেশন কাস্টমাইজেশন, ওয়েব/ডেটা/সাইবার সার্ভিস, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন, ডিজিটাল আর্কাইভিং, রোবোটিক্স প্রসেস আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং আয়। আইটি উদ্যোক্তারা বলছেন, এই খাতে কর আরোপের ফলে দেশের নবীন উদ্যোক্তা ও ফ্রিল্যান্সারদের ওপর সরাসরি প্রভাব পড়বে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে পারে।
ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্সে বাড়ছে ভ্যাট : রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, রাইস কুকার, ব্লেন্ডার, ইলেকট্রিক কেটলি, আয়রনসহ নানা গৃহস্থালিসামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। নতুনভাবে ২০২৭ সালের জুন পর্যন্ত ৫ শতাংশ, ২০২৯ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে ৭ শতাংশ এবং ২০৩০ সালের জুন পর্যন্ত ১০ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব রয়েছে। ফলে এসব পণ্যের উৎপাদন খরচ ও বাজার মূল্য বাড়বে।
ব্যক্তি আয়ের কর কাঠামোতে পরিবর্তন: নতুন বাজেটে ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো হচ্ছে। তবে একইসঙ্গে উচ্চবিত্তদের ওপর করের চাপ বাড়ছে। আগে যেখানে ৩০ শতাংশ হারে কর দিতে হতো ৩৮ দশমিক ৫০ লাখ টাকা বার্ষিক আয়ের ওপরে, এখন তা কমিয়ে ৩৫ দশমিক ৭৫ লাখ টাকা করা হচ্ছে। ফলে উচ্চ আয়ের করদাতাদের করভার বাড়বে।
আমদানি নির্ভর কাঁচামালে শুল্ক ও ভ্যাট বাড়বে :স্টিল শিল্পের কাঁচামাল ফেরো ম্যাঙ্গানিজ, ফেরো সিলিকা ম্যাঙ্গানিজ ও ফেরো সিলিকন অ্যালয়ে ভ্যাট যথাক্রমে ১,২০০ টাকা এবং ১,৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হচ্ছে। একইসঙ্গে সিমেন্ট শিট উৎপাদনে ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব রয়েছে। এর প্রভাব নির্মাণ খাতেও পড়বে।
অনলাইন বেচাকেনা ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে নতুন কর : বর্তমানে অনলাইনে পণ্য বিক্রির ওপর ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ থাকলেও সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব আনা হয়েছে। এর ফলে ই-কমার্সে কেনাকাটা করা ভোক্তাদের ওপর খরচ বেড়ে যাবে। একইভাবে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে জনপ্রিয় সিরিজ, সিনেমা ও খেলার সম্প্রচারেও সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এতে সাধারণ বিনোদনপ্রেমী সাধারণ দর্শকের বিনোদনের খরচ বাড়বে।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।