অবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনাসহ ২৬ দাবি সুজনের

অবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা ও নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ ২৬ দফা দাবি জানিয়েছে নাগরিক সংগঠন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে সুজন আয়োজিত ‘অবনতিশীল আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’ শীর্ষক মানববন্ধন থেকে এসব দাবি জানানো হয়।

সুজনের অন্যান্য দাবিগুলো হচ্ছে— সারাদেশে সৃষ্ট অরাজকতা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা; অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা; অপরাধীদের রক্ষার বদলে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা; দল-মত নির্বিশেষে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা; অবিলম্বে মব-কালচার বন্ধ করা; নিরপরাধ ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার-হয়রানি বন্ধ করা; ফ্যাসিবাদ দমনে ফ্যাসিবাদী আচরণ পরিহার করা; বিশৃঙ্খলা উচ্চে না দিয়ে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা; সংঘাতের বদলে ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ে তোলা; বহুমত ও পথের অনুসারীদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করা; সব ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করা এবং গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা।

এছাড়া দ্রুত সংস্কার করে পরিচ্ছন্ন রাজনীতি ও শোষণমুক্ত দেশ গড়ে তোলা; গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা; সংস্কারের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি করা; সংস্কারের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মিলিত অঙ্গীকার নিশ্চিত করা; রাজনৈতিক দল স্বাক্ষরিত জাতীয় সনদ (সমঝোতা স্মারক) তৈরি করা, যে জাতীয় সনদই হতে পারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার মূল দলিল; রাজনীতিতে ধর্মের অপব্যবহার নিষিদ্ধ করা; ধর্মীয় উপাসনালয়ে রাজনৈতিক প্রচারণা নিষিদ্ধ করা; দ্রুত সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা; সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে নাগরিকদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া; সম্পূর্ণ অসাম্প্রদায়িক বৈশিষ্ট্যের সংবিধান রচনা করা; অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি পক্ষপাতমূলক আচরণ না করা এবং জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করা।

মানববন্ধনে সুজন সম্পাদক ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিকে পরিশুদ্ধ করে জনকল্যাণমুখী-আদর্শভিত্তিক রাজনীতি ফিরিয়ে আনার এক অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে, যাতে দেশে আর ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ফিরে না আসে এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্যে দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটে। দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। একইসঙ্গে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখার জন্যও জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।

মানববন্ধনে অন্যরা বলেন, আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছে। চারদিক থেকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, লুটপাট, নারী ধর্ষণ, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ইত্যাদির খবর আসছে। ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ চলা অবস্থাতেও সৃষ্ট অরাজকতা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। বরং দৃষ্টিভঙ্গিগত সীমাবদ্ধতার কারণে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে এবং নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হচ্ছে। অসহনীয় এই অবস্থা ও অরাজকতা থেকে আমরা মুক্তি চাই। একইসঙ্গে সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সুজনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও ঢাকা জেলা কমিটির সভাপতি প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম, সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন, সুজন ঢাকা জেলা কমিটির সহ-সভপতি অ্যাডভোকেট রাশিদা আক্তার শেলী, সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সহ-সভাপতি ক্যামেলিয়া চৌধুরী, সুজন ঢাকা জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহবুল হক, সুজন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুবাইরুল হক নাহিদ, ঢাকা মহানগর কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম, সুজন ঢাকা জেলা কমিটির অর্থ সম্পাদক কানিজ ফাতেমা, সুজন কেরাণীগঞ্জ উপজেলা কমিটির সহ-সভাপতি কাউসার আহমেদ প্রমুখ।