#দুই হাজার কোটি টাকার সহজশর্তের ঋণ চায় বিজিএমইএ
# উৎপাদনমুখী কলকারখানায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে
# ড. ইউনূসের ইমেজ কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জিএসপি চাওয়া হবে
দেশের স্বার্থে সৎভাবে ব্যবসা করলে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে পাশে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে সৎ ব্যবসা করেন, আমরা সহযোগিতা করবো। আন্ডার দ্য টেবিল কোনও কাজ হবে না। ভালো লোকের ভালো কাজে এক স্টেপ এগিয়ে এলে, আমরা দুই স্টেপ এগিয়ে আসবো। এছাড়া রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ উৎপাদনমুখী সব কলকারখানায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা।
এদিকে, কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলন ঘিরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে হওয়া ক্ষতি পোষাতে সরকারের কাছে এক বছরের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার সহজ শর্তের ঋণ চেয়েছে পোশাকখাত মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সহায়তায় তার ইমেজ কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে চান ব্যবসায়ীরা। এ লক্ষ্যে সরকারের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) কার্যালয়ে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করে বিজিএমইএ ও ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (আইসিসি) বাংলাদেশের দুটি প্রতিনিধি দল। বাণিজ্য সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিনসহ বৈঠকে বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, প্রথম সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। আর আইসিসিবি’র প্রতিনিধিদলে ছিলেন আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সহসভাপতি এ কে আজাদ, বিকেএমই’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বিজিএমইএ’র সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, মীর ইন্সট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর নাসির উদ্দীন, স্কয়ার টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন চৌধুরী এবং মার্ক অ্যান্ড স্পেন্সারের কান্ট্রি ডিরেক্টর স্বপ্না ভৌমিক।
বৈঠকে কারখানায় নিরাপত্তা বাড়ানো, একবছরের জন্য সহজ শর্তের ঋণ প্রাপ্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে জিএসপি সুবিধার বিষয়ে আলোচনা করেন ব্যবসায়ী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আপনারা ব্যবসা করেন, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ সকল উৎপাদনমুখী কারখানার নিরাপত্তা দেয়া হবে। কারখানার নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী সবাই নিয়োজিত আছে। কয়েকদিন পরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশও কাজ করবে। ব্যবসার পরিবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ক্রেতাদের ভালো পরিবেশ দেয়া হবে। পরিবেশ মানে রোদ-বৃষ্টি নয়, এককথায় ব্যবসার পরিবেশ। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ার জন্য সবকিছু করবো। ক্রেতাদের আস্থার অভাব ছিল এটা মিট-আপ হয়েছে।
এদিকে, পোশাক কারখানা মালিকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতির দায়িত্ব নেয়ার তিন দিনের মাথায় খন্দকার রফিকুল ইসলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টার কাছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণের জন্য আবেদন করেছেন। চলমান পরিস্থিতিতে আন্দোলনের সময়ে ১৬-১৭ দিনের মত পোশাক কারখানাগুলো বন্ধ থাকায় ব্যাংক ঋণ পরিশোধ বাধাগ্রস্ত হওয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ক্রেতাদের কাছ থেকে না আসা ও রপ্তানি করতে না পারায় নতুন ঋণ প্রয়োজন জানিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, কর্মীদের বেতন-ভাতা, ব্যাংক ঋণ পরিশোধ ও বায়ারদের কনফিডেন্স ফিরিয়ে আনতে আমরা এক বছরের জন্য সহজ শর্তের ঋণ চেয়েছি। আমরা টাকার পরিমাণ পরে জানাব বলেছি। তবে আমরা অনুমান করছি তা ১৮০০ থেকে ১৯০০ কোটি টাকা হবে। অনেকগুলো কারণে শুধু এই সেক্টরের জন্য সহায়তা চেয়েছি। এক বছরের মধ্যে সুদসহ টাকা ফেরত দিয়ে দিব।
অর্থ উপদেষ্টার কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছেন জানিয়ে বিজিএমইএর নতুন সভাপতি বলেন, আমরাও তাকে সব ধরনের সহযোগিতার করব বলে আশ্বস্ত করেছি। বাংলাদেশের রপ্তানি অনেক দ্রুত বাড়বে। আশা করছি, আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এবং সকলের সহযোগিতা থাকলে বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা বাড়বে। ঋণের তিন কিস্তি পর পর পরিশোধ না করলে ব্যাংক তা খেলাপি হিসেবে দেখায়। মাঝখানে তা ছয়টি কিস্তি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায়ীদের চাপে। বন্যা ও কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকায় তা পুনর্বহাল চেয়েছে বিজিএমইএ।
এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সহায়তায় তাঁর ইমেজ কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের অবাধ বাজার সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেতে চান ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞা আরোপের এক দশক পেরোলেও এখনও জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে আনতে পারেনি বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নতুন করে জিএসপি সুবিধা ফিরে পাওয়া প্রসেঙ্গ পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এটা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তিনি সারাবিশ্বে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তি। তার ব্র্যান্ড ইমেজ কাজে লাগিয়ে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি সুবিধা পেতে চাই। তিনি বলেন, এলসি খুলতে ছয়টা ব্যাংক মার্জিন চাচ্ছে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা গভর্নরের সঙ্গে কথা বলবেন। নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা কথা বলেছি। কারখানার নিরাপত্তা জরুরি। তবে এটা সমাধান হয়ে যাবে। এখন কোনো ঝামেলা নেই। বায়ারদের একটা আস্থার অভাব ছিল এটাও কেটে যাচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা নিজেও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন এটা বড় পাওয়া।
বর্তমানে ব্যবসার হালাচাল প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশ আকস্মিক বন্যার কবলে পড়েছে। আমাদের শত শত ট্র্যাক মিরসরাই এলাকা পড়ে আছে। এগুলোতে নিরাপত্তার সমস্যা আছে। সাপ্লাই চেইনে সমস্যা হচ্ছে। বন্যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রামে সমস্যা হচ্ছে। তাই নারায়ণগঞ্জের পানগাও পোর্ট দ্রুত উন্নয়ন বা চালু করা দরকার।