বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দাখিল করা হয়। প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের জানান, আবু সাঈদ হত্যা মামলার ফরমাল চার্জ ট্রাইব্যুনাল-২ এ জমা দেওয়া হয়েছে।
আজ বেলা সাড়ে ১১টায় এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারিক প্যানেলে এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আরও পড়ুন:আবু সাঈদ হত্যা : ৪ আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ
এ সংক্রান্ত বিষয়ে রোববার (২৯ জুন) প্রসিকিউটর গাজি এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, চিফ প্রসিকিউটর স্যার সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকায় আবু সাঈদ মামলার ফরমাল চার্জ জমা দেওয়ার কথা থাকলেও জমা দেওয়া হয়নি সেদিন।
এর আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে জমা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এতে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের এমন তথ্য জানান প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম। গত ২৪ জুন প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে চিফ প্রসিকিউটর বরাবর এই প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা।
প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলামসহ ৩০ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে। পুলিশের সাবেক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরীও এ মামলার আসামি। তবে বাকি আসামিদের নাম প্রকাশ করবেন না বলে জানান মিজানুল ইসলাম।
মিজানুল ইসলাম আরও বলেন, গত বছরের ১৬ জুলাই দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে আবু সাঈদকে হত্যা করা হয়। তিনি বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কাউকে আক্রমণ করেননি। দুজন তাকে গুলি করেছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ