মূল্যস্ফীতি আগে আট বা নয়ে আটকে রাখা হলেও এখন কোনো ‘কারচুপি নাই’ বলেই মূল্যস্ফীতি বেশি দেখাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিবিএসকে বলা হয়েছে তথ্য যা আছে তাই প্রকাশ যেন হয়। এখানে কারচুপির কোনো ব্যাপার নেই। আগে মূল্যস্ফীতি আট বা নয়ে আটকে রাখা হতো বলেও তিনি মন্তব্য করেন। শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘ব্যাংকিং অ্যালমানাক’র ৬ষ্ঠ সংস্করণের প্রকাশনা উৎসবে এসব বলেন তিনি।
শনিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০ টায় সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহাতায় শিক্ষাবিচিত্রার বার্ষিক নিয়মিত প্রকাশনা বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যভিত্তিক গবেষণাগ্রন্থ ‘ব্যাংকিং অ্যালমানাক’-এর ৬ষ্ঠ সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, সঠিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়া কোনো কিছুর মূল্যায়ন হয় না। বিগত ১৫ বছরের তথ্য বিভ্রাট নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। মূল্যস্ফীতি, জিডিপি নিয়ে তথ্য বিভ্রাটের পেছনে অনিচ্ছাকৃত কিছুটা ভুল রয়েছে আবার নীতি নির্ধারাকরাও তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেন। তিনি বলেন, আমরা কোনো পাওয়ার দেখাতে আসিনি, একটা দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। বিগত ১৫ বছরের তথ্য নিয়ে নানা বিভ্রাট রয়েছে। তথ্য লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এগুলো পরিবর্তন ও সংস্কারের চেষ্টা করছি। কারণ দাতা সংস্থাগুলো আমাদের কাছে নানা প্রশ্ন করেন, তারা বোঝাতে চান আগেই কম ছিল ইত্যাদি। এ নিয়ে আমরা তাদের বোঝাচ্ছি আগের তথ্য লুকানো ছিল, আমরা সঠিকটা উপস্থাপন করছি।
অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, আর্থিকখাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা চাই। যাতে বিশৃঙ্খলা না হয়। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন বোর্ডে পরিবর্তন এনেছি।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে ৫টি বড় চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন ‘
স্বাগত বক্তব্য রাখেন গ্রন্থটির এক্সিকিউটিভ এডিটর সৈয়দ জিয়াউদ্দিন আহমেদ। আরও বক্তব্য দেন ব্যাংকিং অ্যালমানাক-এর বোর্ড অব এডিটরসের সম্মানিত সদস্য অ্যাসোসিয়েশোন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-এর সাবেক চেয়ারম্যান এবং গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন। দেশের ব্যাংকিং সেবা-বৈচিত্র্যের তথ্য-উপাত্ত জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যাংকিং অ্যালমানাকের প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য বিষয়ে বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যালমানাকের প্রকল্প পরিচালক আবদার রহমান।
ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির ৫টি বড় চ্যালেঞ্জ আছে জাতির সামনে। একটি হচ্ছে আর্থিক শৃঙ্খলা খাতে ও সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য তৈরি করা। তথ্যের সত্যতা, পেশাদারত্ব এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যা অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে সন্তোষজনক পর্যায়ে অগ্রগতি হচ্ছে। আর্থিক শৃঙ্খলা খাত, সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য অত্যন্ত ভঙ্গুর অবস্থা থেকে স্বল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড় করানো হয়েছে।
এছাড়া অর্থনীতির চাকা ঘুরতে হবে, অর্থনীতির প্রক্রিয়াগুলো বেগবান করতে হবে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এখানে ব্যক্তিখাত থেকে শুরু করে সবার সম্পৃক্ততা আছে। মূল্যস্ফীতি আরেকটা বিষয় এবং মূল্যস্ফীতি মোকাবিলা করতে হলে আমাদের অলিগার্কিক মার্কেট পাওয়ার গত ১৫ বছরের শাসনকালে অন্য স্তরে চলে গিয়েছিল। এরমধ্যে প্রথম দুইটায় সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। তথ্য ও পেশাদারত্ব আগের থেকে উন্নত হচ্ছে, সামনে আরও এগোবে। অন্য বিষয়গুলো আছে তারমধ্যে অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর যে বিষয়টা, সেটা অর্থ মন্ত্রণালয়ের একক বিষয় না। সার্বিক দায়িত্ব।
তিনি বলেন, অর্থনীতির চাকাকে আরও বেগবান করা নিয়ে এক ধরনের প্রশ্ন আছে। এখানে ইচ্ছার ঘাটতি নয়, সক্ষমতার সাথে ব্যক্তিখাতকে আরও কীভাবে সম্পৃক্ত করা যায় এবং সবাইকে আরও আস্থার জায়গায় আনতে হবে।
হোসেন জিল্লুর বলেন, আমরা জানি বিনিয়োগ থমকে আছে। সেটা শুধু অর্থনীতি পরিচালনার বিষয় নয়। সামগ্রিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে অনেক কিছু আছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা একটু কঠিন অবস্থার মধ্যে আছে। চেষ্টা কিন্তু চলছে তবে সফলতা ধীরে আসছে। আরেকটা হচ্ছে অলিগার্কিক মার্কেট পাওয়ার বাস্তবতা হিসেবে বিরাজ করছে। এটাকে মোকাবিলা করার চ্যালেঞ্জ সামনে রয়ে গেছে। ২০২৫ সালে এখানেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
ব্যাংকিং অ্যালমানাক’-এর বোর্ড অব এডিটরসের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থসচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার, এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, গ্রন্থটির এক্সিকিউটিভ এডিটর সৈয়দ জিয়া উদ্দিন আহমেদ, বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ব্যাংকিং অ্যালমানাক -এর প্রকল্প পরিচালক আবদার রহমান।
উল্লেখ্য, দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যাংক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বোর্ড অব এডিটরসের নীতি- নির্দেশনায় ব্যাংকিং অ্যালমানাক-এর এই অগ্রযাত্রা। ২০১৬ সাল থেকে এডিটোরিয়াল বোর্ডের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।