ইতিকাফের সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখবেন

পবিত্র রমজানের শেষ দশকের গুরুত্বপূর্ণ আমল ইতিকাফ। শেষ দশকের ১০ দিন মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। একজন ইতিকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কেউ ইতিকাফ না করে তাহলে সবাই গুনাহগার হবে।

কোরআনুল কারিমে বলা হয়েছে, ‘মনে কর সেই সময়কে, যখন আমি কাবা ঘরকে মানুষের মিলনক্ষেত্র ও আশ্রয়স্থল করেছিলাম। আর আমি বলেছিলাম, তোমরা ইব্রাহিমের দাঁড়ানোর জায়গাকেই নামাজের জায়গারূপে গ্রহণ কর। আর আমি ইব্রাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করি; তোমরা আমার ঘরকে পবিত্র রাখবে, তাদের জন্য যারা এটা প্রদক্ষিণ করবে, এখানে বসে ইতিকাফ করবে এবং এখানে রুকু ও সিজদা করবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১২৫)।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনেক নফল ইবাদত করতেন আবার কখনো ছেড়ে দিতেন; কিন্তু মদিনায় হিজরতের পর জীবদ্দশায় রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ কখনো ছাড়েননি। (সহিহ বুখারি : ২০২৬)

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ দশদিন ইতিকাফ করবে, তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরা পালন করার সওয়াব দান করা হবে। (শুয়াবুল ঈমান, হাদিস : ৩৬৮০)

ইতিকাফে মসজিদে অবস্থানের সময় কিছু আদবের প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি—

মসজিদের সম্মান বজায় রাখা

মসজিদ আল্লাহর ঘর। এ ঘরের মর্যাদা দুনিয়ার সকল ঘর থেকে বেশি। এ জায়গার সম্মান অন্য সকল জায়গার চেয়ে অধিক। হাদিস শরিফে এসেছে-

আল্লাহ তায়ালার কাছে সবচাইতে প্রিয় জায়গা হল মসজিদ। সবচাইতে অপ্রিয় জায়গা বাজার। – (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৭১)

ইতিকাফের সময় মানুষ যেহেতু এই পবিত্র মর্যাদাপূর্ণ স্থানেই অবস্থান করে, তাই এ ঘরের সম্মান ও মর্যাদার কথা সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে স্মরণ রাখা উচিত।

হাদিস শরিফে মসজিদকে পবিত্র রাখার বিষয়েও জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। (দ্র. সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৫৫)

তাই নিজের কারণে যেন মসজিদে কোনো অপবিত্রতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে সযত্ন খেয়াল রাখা।

মসজিদে যতক্ষণ থাকা হয়, অজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা। হাদিস শরিফে এ বিষয়েও খুব গুরুত্বের সাথে উৎসাহিত করা হয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৫৫; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৯)

গন্ধযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা

মসজিদে পেঁয়াজ, রসুন এবং এজাতীয় গন্ধযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কারণ, এ জাতীয় কোনো খাবার খেয়ে মসজিদে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। অর্থাৎ এমন গন্ধযুক্ত কোনো খাবার খেলে ভালোভাবে মুখ পরিষ্কার করে নেওয়ার ব্যাপারে তাগিদ করা হয়েছে। (বুখারি, হাদিস ৫৪৫২; মুসলিম, হাদিস : ৫৬৪)

চিৎকার ও অহেতুক কথাবার্তা এড়িয়ে চলা

মসজিদে অহেতুক কথাবার্তা ও উঁচু আওয়াজে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, হাদিসে মসজিদে এসব করতে নিষেধ করা হয়েছে। (মুসলিম, হাদিস : ৫৬৮) তাই অতি প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া মসজিদে অন্য কোনো কথা বলা উচিত নয়।

পবিত্রতা রক্ষা করা

মসজিদে অবস্থানকালে পবিত্র, পরিচ্ছন্ন ও অপেক্ষাকৃত সুন্দর পোশাক পরে থাকাই কাম্য। সেইসাথে নিজে পরিপাটি হয়ে থাকা এবং সামানাপত্র পরিপাটি করে রাখা।

পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,

یٰبَنِیۡۤ اٰدَمَ خُذُوۡا زِیۡنَتَكُمۡ عِنۡدَ كُلِّ مَسۡجِدٍ وَّ كُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ۚ اِنَّهٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ

হে বনী আদম! প্রত্যেক নামাজের সময় তোমরা সুন্দর পোশাক গ্রহণ কর। আর খাও এবং পান কর কিন্তু অপচয় কর না। নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা আরাফ, আয়াত : ৩১)

সর্বোচ্চ আবেগ ও আগ্রহের সাথে মসজিদ পরিষ্কার রাখা উচিত। একটি হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

আমার সামনে আমার উম্মতের ভালো ও মন্দ আমলসমূহ পেশ করা হয়েছে। তখন তাদের ভালো আমলগুলোর মধ্যে পেলাম- রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া। আর মন্দ আমলগুলোর মধ্যে পেলাম- মসজিদের কফ-থুথু (ময়লা-আবর্জনা) পরিষ্কার না করা। (মুসলিম, হাদিস : ৫৫৩)