ইফতার ঘিরে জমজমাট রসালো আনারসের বাজার

সারাদিনের রোজার ক্লান্তি দূর করতে ইফতারে টক-মিষ্টি স্বাদের বিভিন্ন ফলের জুড়ি নেই। সে হিসেবে মাল্টা, কমলা আর আপেলের পাশাপাশি রোজাদারদের কাছে পছন্দের তালিকায় রয়েছে রসালো ফল আনারস। তবে এখনও পুরোপুরি আনারসের মৌসুম না হলেও রোজাকে কেন্দ্র করে বাজারজুড়ে ঊঠেছে নানান জাতের আগাম আনারস। আর ক্রেতারাও এসব আনারস কিনছেন বেশ আগ্রহ নিয়েই।

রোববার (২ মার্চ) রাজধানীর আজমপুর কাঁচাবাজার এবং মাটিকাটা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির দোকান, ফলের দোকানসহ বিভিন্ন ভ্যানগাড়িতেও আনারস বিক্রি করা হচ্ছে। একেক দোকানে একেক জাতের ছোট, মাঝারি এবং বড় আকৃতির আনারস রয়েছে। তবে অধিকাংশ আনারসই দেখতে পাকা লালচে এবং সুমিষ্ট ঘ্রাণ সমৃদ্ধ।

বিক্রেতারা জানান, মে-জুলাই মাস আনারসের মৌসুম হলেও রোজার জন্য বাণিজ্যিকভাবে আগাম আনারসের চাষ করা হচ্ছে। আর এখনকার আনারসের অধিকাংশই টাঙ্গাইলের মধুপুরের আগাম জাতের আনারস। এরসঙ্গে রয়েছে রাঙামাটি ও সিলেটের পাহাড়ি আনারস। পাহাড়ি আনারসকে হানিকুইন আনারসও বলা হয়। এছাড়া গাজীপুরের কাপাসিয়া এলাকা থেকেও আগাম চাষ করা কিছু আনারস ঢাকার বাজারে রয়েছে।

আনারসের দাম সম্পর্কে বিক্রেতারা বলেন, খুচরা বাজারে আনারস জোড়া এবং সিঙ্গেল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে বড় আকৃতির মধুপুরের আনারস জোড়া ১৮০ টাকা এবং প্রতিটি ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মুধুপুরের মাঝারি ও ছোট আকৃতির আনারস ন্যূনতম ৫০-৭০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে। আর পাহাড়ি হানিকুইন জাতের আনারস অধিকাংশই ছোট ও মাঝারি আকৃতির। এগুলো প্রতিটি ৫০-৮০ টাকা এবং জোড়া ১০০-১২০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে দাম যেমনই হোক দিনভর বেশ ভালোই আনারসের বিক্রি হচ্ছে বলে জানান মাটিকাটা বাজারের ফলবিক্রেতা আবুল কালাম। তিনি বলেন, এই মৌসুমে সাধারণত গরমের কারণে রসালো ফল আনারসের চাহিদা বাড়ে। তাছাড়া আজ প্রথম রোজা হিসেবে সারাদিন বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। বিকেলে বিক্রি আরও বাড়বে। ইফতারের আগ মুহূর্তে বেশি বিক্রি হয়। তবে মৌসুম না হওয়ার কারণে সরবরাহ কম। সেজন্য, চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত আনারস পাইকারদের কাছেও মিলছে না। আমি মধুপুরের আনারস প্রতিটি ৮০ টাকা এবং জোড়া ১৫০ টাকা বিক্রি করছি। সকাল থেকে প্রায় ৩০টির বেশি আনারস বিক্রি করেছি। বাকি যেগুলো আছে হয়তো ইফতারের আগে বিক্রি হয়ে যাবে।

চাহিদা বেশি থাকায় ভ্যানগাড়িতেও বিভিন্ন জাতের আনারস বিক্রি করতে দেখা গেছে অনেক বিক্রেতাকে। মশিউর নামের এক বিক্রেতা বলেন, ভ্যানগাড়িতে বিক্রি করলেও আমাদের বাড়তি কষ্ট আছে। বেশিরভাগ মানুষই আনারস কেট নিতে চাইছেন। আবার অনেকেই লবণ কিংবা কাসুন্দি মিশিয়ে দিতে বলেন। আমরাও তেমনই যোগান দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে অন্য সময়ের তুলনায় আনারসের বিক্রি অনেক ভালো বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে ক্রেতারাও বলছেন, সারাদিন রোজা রাখার পর আনারস শরীরে তাৎক্ষণিক শক্তি যোগাতে এবং শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। সেজন্য দাম বেশি থাকলেও নানান ফলের ভিড়ে আনারসের চাহিদাই ভোক্তা পর্যায়ে কিছুটা বেশি।

প্রসঙ্গত, অন্য ফলের মতো আনারসও পাইকারিভাবে সংগ্রহ করতেও খুচরা ব্যবসায়ীদের ভিড় করতে হয় রাজধানীর বাদামতলী কিংবা কারওয়ান বাজারে। এক্ষেত্রে দাম কখনোই নির্ধারিত থাকে না। বাজারে আনারসের চাহিদা এবং তার বিপরীতে সরবরাহের উপর ভিত্তি করেই আনারসের দাম ওঠানামা করে।