ইসলামী ব্যাংকের এমডি নিয়ে ক্ষোভ

#দুনীতির অভিযোগ মামলা রয়েছে দুদকে রমজান আলী

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ইসলামী ব্যাংকের অর্থ নামে-বেনামে যিনি ঋণ দিয়েছেন তিনি হতে যাচ্ছেন ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিসের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক ও বর্তমান অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান। এই ব্যাংকের এমডি হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে আগামী ২৪ জুলাই সাক্ষাৎকারে ডেকেছেন। এতে ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, ১ হাজার ৯২ কোটি আত্মসাতের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, পরিচালক, সাবেক এমডিসহ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই মামলায় তিনিও আসামী রয়েছেন। মূলত ব্যাংকটির বড় একটি ঋণের অংশ তিনিই লোপাট করার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি এস আলম ও নাসা গ্রুপ এবং নাবিল গ্রুপকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ দিয়েছে। সেই ঋণের অনিয়ম ধরা পড়েছে। যার ফলে তার বিরুদ্ধে দুদকে একাধিক মামলা হয়েছে। নাসা গ্রুপকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঋণ দেয়ার কারণে ২০২২ সালে তার চাকরি চলে যায়। পরে নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার পুরস্কার হিসেবে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিয়েছে। আওয়ামী লীগ পতনের পর তিনি আবার ইসলামী ব্যাংকে যোগদান করেন।

আরও পড়ুনঃ ইসলামী ব্যাংকের এমডি হচ্ছেন ওমর ফারুক

সংশ্লিষ্টরা বলেন, এস আলমের হয়ে যিনি নামে-বেনামে ঋণের নামে অর্থ সরাতে সহযোগিতা করলো। তিনি কীভাবে, সেই ব্যাংকের এমডি হয় ? তিনি তো এমডি হলে, আরো ব্যাংকের অর্থ নানাভাবে সরাতে ব্যস্ত থাকবে। যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিকখাতে সুশাসনের জন্য কাজ করছে। সেখানে এ ধরণের লোক এমডি হলে, সুশাসন কোনোদিনই প্রতিষ্ঠিত হবে না। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ভালো লোকদেরকে এমডি বানানো।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্য বলছে, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপ ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকেই ২ হাজার ১০২ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ১০৪ কোটি টাকা নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মনীতি মেনে। আর বিশেষ বিবেচনায় নিয়েছে আরও ৯৯৮ কোটি টাকা। এসব ঋণের বেশিরভাগই দিয়েছেন লোকাল অফিসের তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক ও বর্তমান অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওমর ফারুক খান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিসে বিএবির সদ্য সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা তাইপেই ডেনিমসের ঋণের পরিমাণ ২৮৮ কোটি টাকা। এই ঋণের ১৪৪ কোটি টাকাই নেওয়া হয়েছে বিশেষ বিবেচনায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ১৪৪ কোটি টাকার ঋণ নিতে পারত। কিন্তু বিদায়ী সরকারের প্রভাব খাটিয়ে নজরুল ইসলাম বিশেষ বিবেচনায় আরও ১৪৪ কোটি টাকা ঋণ নেন। বর্তমানে এসব ঋণের ৫১ কোটি টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা নাসা স্প্যানিং লিমিটেডের ১৬৩ কোটি টাকার ঋণে। প্রতিষ্ঠানটিকে বিশেষ বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। বর্তমানে ওই ঋণের ২৩ কোটি টাকাই মেয়াদোত্তীর্ণ। এ ছাড়া নাসা স্পেনার্স লিমিডেটের ঋণের পরিমাণ ৬০ কোটি টাকা। এই প্রতিষ্ঠানকেও ৭ কোটি টাকার বিশেষ বিবেচনার ঋণ দেওয়া হয়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ১৮ কোটি টাকা।

তথ্য বলছে, নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা সুপার গার্মেন্টসের বর্তমান ঋণের পরিমাণ ২৩৪ কোটি টাকা। এসব ঋণের সাড়ে ৯ কোটি টাকা বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে বিশেষ বিবেচনায় দেওয়া হয়েছে ২০ কোটি টাকার ঋণ। আর নাসা সুপার ওয়াশ লিমিটেডের ঋণের পরিমাণ ২০৯ কোটি টাকা। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণের পরিমাণ ১৩ কোটি টাকা। নাসা অ্যাপারেলস লিমিটেডসহ আরও ১২ প্রতিষ্ঠানকে ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে ১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে ৬৬৮ কোটি টাকাই নেওয়া হয়েছে বিশেষ বিবেচনায়। বর্তমানে এসব ঋণের প্রায় শতকোটি টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে পড়েছে।
ইসলামী ব্যাংকের নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তারা বলেন, ‘ ইসলামী একটি ”আদর্শিক ব্যাংক”। আওয়ামী লাগের আমলে যারা এই ব্যাংকে লুটপাট করেছে। তারাই যদি আবার ব্যাংকের হাল ধরে, তাহলে তো আগের অবস্থায় ফিরে যাবে ব্যাংকটি। বর্তমানে ব্যাংকটির আমানতের পাশাপাশি সুনামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমন অবস্থায় একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি এমডি হলে ব্যাংকের সুনাম নষ্টে হয়ে যাবে।’

এব্যাপারে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি চলতি দায়িত্ব) ওমর ফারুক খানের সাথে হোয়াটস্যাপে যোগাযোগ করা হলে কল ধরেননি।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ