উত্তর প্রদেশের ফের মসজিদ নিয়ে উত্তেজনা, সংঘাতে প্রাণহানির পর ইন্টারনেট বন্ধ

উত্তর প্রদেশের সাম্ভালে একটি মসজিদের সমীক্ষা নিয়ে সহিংসতায় চারজন নিহত হওয়ার পর ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম।

গতকাল রোববার সকালে মুঘল যুগের শাহী জামা মসজিদে আদালতের নির্দেশে সমীক্ষা চালানো হলে স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মসজিদটি একটি বিতর্কিত মামলার কেন্দ্রে রয়েছে, যেখানে দাবি করা হচ্ছে, এটি একটি হিন্দু মন্দিরের স্থানে নির্মিত।

গতকাল সংঘর্ষের সময় প্রতিবাদকারীরা পুলিশের দিকে পাথর ছোড়ে এবং কিছু যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে।

এই সহিংসতার মধ্যে প্রায় ২০ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছে। এক কনস্টেবল মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়েছেন এবং তাঁর অবস্থা সংকটজনক বলে জানা গেছে।

একজন কর্মকর্তা জানান, দুজন নারীসহ ২১ জনকে আটক করা হয়েছে এবং ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সহিংসতার জন্য অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) প্রয়োগ করা হবে।

জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাজেন্দ্র পেনসিয়া পিটিআই সংবাদ সংস্থাকে বলেন, দু’জনের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট—দেশীয় তৈরি বন্দুকের গুলিতে তাঁরা নিহত হয়েছেন। তৃতীয় ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়, ময়নাতদন্তের পরে জানা যাবে।

এই ঘটনার পর সাম্ভাল তহশিলে ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে এবং জেলা প্রশাসন ২৫ নভেম্বর পর্যন্ত দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীর ছুটি ঘোষণা করেছে।

সেই সঙ্গে, ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কোনো বহিরাগত, সামাজিক সংগঠন বা জন প্রতিনিধি জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া সাম্ভালে প্রবেশ করতে পারবেন না।

বিরোধের কারণ

গত মঙ্গলবার জামা মসজিদে স্থানীয় আদালতের নির্দেশে সমীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে সাম্ভালে উত্তেজনা শুরু হয়। আদালতে এক আবেদনে দাবি করা হয়, ওই স্থানে আগে একটি হরিহর মন্দির ছিল।

কর্মকর্তারা জানান, মঙ্গলবার নামাজের সময় সমীক্ষা সম্পন্ন করা সম্ভব হয়নি, তাই এটি রোববার সকালে পুনরায় পরিকল্পনা করা হয়।

হিন্দুদের পক্ষের এক আইনজীবী দাবি করেন, ১৫২৯ সালে মুঘল সম্রাট বাবর ওই স্থানের মন্দিরটি ধ্বংস করেন।

সমীক্ষার সমর্থকেরা বলেন, এটি ঐতিহাসিক সত্য উন্মোচনের একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। অন্যদিকে সমালোচকেরা এটিকে উসকানিমূলক এবং ধর্মীয় স্থানগুলোর পবিত্রতা লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন। ১৯৯১ সালের প্লেসেস অব ওয়ারশিপ অ্যাক্টে এ ধরনের স্থাপনার সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে সহিংসতা সত্ত্বেও কর্মকর্তারা নির্ধারিত সময়েই সমীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। মামলার আবেদনকারী আইনজীবী বিষ্ণু শংকর জৈন জানান, সমীক্ষা দল আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওই স্থানের ভিডিওগ্রাফি ও ফটোগ্রাফিসহ বিস্তারিত পরীক্ষা করেছে। সমীক্ষার প্রতিবেদন ২৯ নভেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়া হবে।

বিষ্ণু জৈন এবং তাঁর বাবা হরিশঙ্কর জৈন এর আগেও কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ও বারাণসীর জ্ঞানবাপী মসজিদের মতো বহু উপাসনালয় সংক্রান্ত মামলায় হিন্দুদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

মসজিদে সমীক্ষা নিয়ে প্রতিক্রিয়া

সমাজবাদী পার্টি (এসপি)–এর প্রধান অখিলেশ যাদব বলেছেন, ‘সমীক্ষার নামে উত্তেজনা ছড়ানোর ষড়যন্ত্র’ সুপ্রিম কোর্টের অবিলম্বে বিবেচনা করা উচিত।

তিনি এক্স–এ হিন্দিতে পোস্ট করেন, ‘যারা সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে স্লোগান দাতাদের নিয়ে গেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে শান্তি ও সম্প্রীতি নষ্ট করার মামলা হওয়া উচিত। বার অ্যাসোসিয়েশনেরও তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’

উত্তর প্রদেশ কংগ্রেস প্রধান অজয় রাই বলেন, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের আমলে রাজ্যে সহিংসতার ঘটনা দিন দিন বাড়ছে।

তবে বিজেপি পাল্টা জবাব দিয়ে বলেছে, যারা বিচারিক আদেশ মানেন না, তাঁরা আইনি পদক্ষেপ নিতে পারেন।

দলীয় মুখপাত্র নলিন কোহলি বলেন, ‘কেউই আইন ভাঙার অধিকার রাখে না। যদি আদালত কোনো আদেশ দেয়, তা কার্যকর করা হবে। যারা আদেশ সংশোধনের ইচ্ছা রাখে, তাদের জন্য বিচার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত।’