ঋণে জর্জরিত আইসিবি, বিনিয়োগ সক্ষমতা ফিরে পেতে চায় বিশেষ তহবিল

ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে গুনতে হচ্ছে ৭০ কোটি টাকার মতো ঋণের সুদ। ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়া প্রতিষ্ঠানিটি সুদ পরিশোধের সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেছে। এ জন্য ঋণ পরিশোধে সরকারের দ্বারস্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। সেই সঙ্গে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সক্ষমতা ফিরে পেতে বিশেষ তহবিলও চাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিশেষ তহবিল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করেছে আইসিবির প্রতিনিধিদল। সেই সঙ্গে আইসিবির ঋণে জড়িয়ে পড়ার বিষয়টি এবং বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইসিবি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে আইসিবির একটি প্রতিনিধিদল বৈঠক করেছে। তবে বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আইসিবির প্রতিনিধিদের কথা শুনেছেন। তিনি শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বেশ ওয়াকিবহাল। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলবেন।

তিনি বলেন, আইসিবির পক্ষ থেকে বিশেষ তহবিল গঠনের জন্য একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন সমস্যার কথা আইসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলেও আইসিবির উচ্চ সুদহারে নেওয়া কিছু ঋণ রয়েছে। আইসিবির পক্ষ থেকে এটাকে প্রধান সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

আইসিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আগের সরকারের সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সরকার ও অন্যান্য এজেন্সি উৎসাহ দিয়ে আইসিবিকে দিয়ে ঋণ করেছে এবং সেই ঋণের অর্থ দিয়ে শেয়ার কিনতে বাধ্য করেছে। দাম কমে যাওয়ায় ওইসব শেয়ারের বিপরীতে আইসিবির লোকসান দাঁড়িয়েছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। এই সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা প্রভিশন করতে হলে আইসিবি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে চিন্তা করেন।

তিনি বলেন, আইসিবির এখন শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করার সক্ষমতা নেই। এমনকি উচ্চ সুদের যে ঋণ রয়েছে, সেই ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতাও আইসিবি হারিয়ে ফেলেছে। এ জন্য শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সক্ষতা ফিরে পেতে সরকারের কাছে একটি বিশেষ তহবিল গঠানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যে তহবিলের অর্থ আইসিবি বিনিয়োগ করবে, তবে তহবিল পরিচালনা করবে সরকারের গঠন করে দেওয়া নিরপেক্ষ পর্ষদ। এ ধরনের একটি কাঠামো তৈরি করে আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, আইসিবির উচ্চ সুদহারের ১২ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ ছিল। সম্প্রতি ২ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এখনো ১০ হাজার কোটি টাকার মতো ঋণ রয়ে গেছে। বর্তমানে আইসিবির যে আয় তা নিয়ে এই ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব না। এ জন্য পুনর্ভরণের একটা প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কারণ যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে এই ঋণ করা হয়েছে, তারা তো তা মউকুফ করবে না।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বৈঠকে মার্কেটকে কিভাবে সাপোর্ট দেওয়া যায়, বিনিয়োগকারীরা কিভাবে বেনিফিট পেতে পারে এবং আইসিবির বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা হয়েছে। সরকার এখন শেয়ারবাজারের বিষয়গুলো জানে।

তিনি বলেন, আমরা তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান ও অতালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে করহারের পার্থক্য ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা আশা করছি আগামী বাজাটে এটা থাকতে পারে। আরও কিছু প্রণোদনা থাকবে বলে আমরা আশা করছি।

আইসিবির জন্য বিশেষ ফান্ড গঠনের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে এখন প্রাথমিক আলোচনা হচ্ছে। এটা আইসিবির নিজের জন্য না। সরকার যদি বিশেষ ফান্ড গঠন করে, তাহলে হবে কী, আইসিবি হয়তো এটা বাস্তবায়ন করবে, কিন্তু ওটা দেখভালের জন্য একটা নিরপেক্ষ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সরকার গঠন করে দিতে পারে। তাহলে যখন প্রয়োজন পড়বে তখন ওই ফান্ড থেকে কিনলো। আর যখন প্রয়োজন মনে করবে না, তখন ওই ফান্ড ব্যবহার করবে না। অথবা মার্কেট ওভার হিট হলে বিক্রিও করলো।

আইসিবির চেয়ারম্যান আরও বলেন, এ ধরনের একটি ফান্ড হলে ভালো হবে, বাজার মোটামুটি একটা পর্যায়ে রাখার জন্য। ওটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তবে এটা প্রাথমিক পর্যায়ে। এখানে টাকার ব্যাপার আছে। কারণ সরকার রাজি হতে হবে, এই অর্থ কীভাবে দেবে এগুলোর ব্যাপার আছে। এই আইডিয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

বর্তমানে আইসিবি কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে- এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আইসিবিকে প্রতি মাসে ৭০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি ২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে। এখনো ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ রয়ে গেছে। যেগুলোর সুদহার গড়ে ১২ শতাংশের মতো। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে এই ঋণ নেওয়া হয়েছে। প্রতি মাসে ৭০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করার মতো আয় তো আইসিবির নেই।

আইসিবিকে ঋণমুক্ত করতে আপনারা কোনো পরিকল্পনা করেছেন কি? এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটার বিষয়ে একটা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এটা কিন্তু সবাই জানে আইসিবিতে যেসব অঘটন বা দুষ্কর্ম হয়েছে তা আগে হয়েছে। এই সরকারের আমলে বা আমি আইসিবিতে যোগ দেওয়ার পর কোনো অনিয়ম হয়নি।

আবু আহমেদ বলেন, চলতি অর্থবছরের মুনাফা থেকে প্রভিশন না রেখেই মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ইউনিটহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেওয়ার বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আমরা চলতি অর্থবছরের অর্জিত মুনাফার ২০ শতাংশ প্রভিশনের জন্য রেখে বাকি ৮০ শতাংশ ইউনিটহোল্ডারদের মাঝে লভ্যাংশ হিসেবে বিতরণ করার একটা প্রস্তাব দিয়েছি।