এক কিংবদন্তীর বিদায়

বাংলাদেশের অন্যতম খ্যাতিমান শিল্পপতি, ব্যবসায়ী নেতা ও জনহিতৈষী সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মৃত্যুতে দেশ একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হারালো। দেশের বাণিজ্য, অর্থনীতি ও শিল্প খাতে তার অবদান চিরকাল স্মরণীয় থাকবে। বুধবার সকালে সিঙ্গাপুরের একটি হাসপতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।

কয়েক দশকের কর্মজীবনে, সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বাংলাদেশের আর্থিক ও শিল্পখাতের রূপান্তরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড এবং পাইওনিয়ার ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া তিনি দেশের অন্যতম সফল ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এপেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড, এপেক্স ফার্মা লিমিটেড এবং ব্লু ওশান ফুটওয়্যার লিমিটেডের মতো বহু উদ্যোগের নেতৃত্ব দেন।

তার ব্যবসায়িক দক্ষতার জন্য তিনি বহু পুরস্কারে ভূষিত হন, যার মধ্যে “বিজনেস এক্সিকিউটিভ অব দ্য ইয়ার ২০০০” (আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ) এবং “বিজনেস পারসন অব দ্য ইয়ার ২০০২” (দ্য ডেইলি স্টার এবং ডিএইচএল ওয়ার্ল্ডওয়াইড এক্সপ্রেস) উল্লেখযোগ্য। তার জীবনব্যাপী অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে “লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড” প্রদান করা হয়েছিল ইউকে-বাংলাদেশ কেটালিস্টস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে।

ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি, মঞ্জুর এলাহী জনসেবার প্রতি নিবেদিত ছিলেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দুইবার বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যেখানে তার পেশাদারিত্ব এবং নেতৃত্ব ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল।

ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি অব বাংলাদেশ (সিআরএবি), সানবিমস স্কুল লিমিটেড এবং এমটিবি ফাউন্ডেশনের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবেও তিনি অবদান রেখেছেন। এছাড়াও, তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (বারডেম হাসপাতালের মালিক) এবং বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের প্রভাবশালী বোর্ড সদস্য ছিলেন।

১৯৪২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় জন্মগ্রহণ করা মঞ্জুর এলাহী সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (ডিইউএএ) প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন, যা তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে আজীবন সংযোগকে দৃঢ় করে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) ভাইস-চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের পরিচালক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) এবং বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিইএ) প্রেসিডেন্ট ছিলেন, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং কর্পোরেট উৎকর্ষের প্রতি তার অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।

এছাড়াও সমাজকল্যাণ ও দানশীল কাজের প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি অসংখ্য দাতব্য সংস্থার সাথে গভীরভাবে জড়িত ছিলেন, যা সমাজের প্রতি তার দায়বদ্ধতার প্রতিফন।