ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ৫ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত চলছে টানা ১০ দিনের ছুটি। এই ছুটির সময় ব্যাংকগুলোও বন্ধ রয়েছে। ফলে নগদ টাকা তোলার একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে এটিএম বুথ। কিন্তু ঈদের এই লম্বা ছুটিতে বুথগুলোতেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত সেবা। নগদ টাকার প্রয়োজন হলে গ্রাহকদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
রাজধানীর বংশাল এলাকার বাসিন্দা রহমান বুধবার (১১ জুন) সকালে জরুরি প্রয়োজনে টাকা তুলতে যান ডাচ-বাংলা ব্যাংকের একটি বুথে। সেখানে গিয়ে দেখেন, মেশিনে কোনো টাকা নেই। এরপর আশপাশের আরও চারটি বুথ ঘুরেও একই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন তিনি। অবশেষে নিরূপায় হয়ে এক বন্ধুকে ফোন করে নগদ টাকা ধার নিতে বাধ্য হন।
তিনি জানান, “আমি হাসপাতালে এক আত্মীয়কে ভর্তি করাতে যাচ্ছিলাম। নগদ টাকা দরকার ছিল। একের পর এক বুথ ঘুরেও টাকা তুলতে পারিনি। সময়টা খুবই সংকটপূর্ণ ছিল” হতাশ কণ্ঠে বলেন রহমান।
আরও পড়ুনঃ ঈদের ছুটিতে এটিএম বুথে রাখতে হবে পর্যাপ্ত টাকা
ঈদকে ঘিরে এবার টানা ১০ দিনের ছুটি পড়ায় ব্যাংক লেনদেন বন্ধ রয়েছে। ফলে গ্রাহকরা নির্ভর করছেন এটিএম বুথের ওপর। কিন্তু বেশিরভাগ বুথেই নেই পর্যাপ্ত টাকা। অনেক জায়গায় ‘নো ক্যাশ’ বা ‘আউট অব সার্ভিস’ সাইন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
ধানমণ্ডির একটি পোশাক কারখানার কর্মী রুনা আক্তার বলেন, বোনকে জরুরি টাকা দেব এজন্য বুথে টাকা তুলতে গিয়েছিলাম। কিন্তু কয়েকটা বুথ ঘুরেও টাকা পাইনি। পরে বাসে করে মিরপুর গিয়ে টাকা তুলেছি। এতে সময় ও ভাড়া দুটোই বেশি খরচ হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত ২৯ মে সার্কুলার দিয়ে ঘোষণা দেয়, ঈদুল ফিতরের আজহার ছুটিতে গ্রাহকদের নির্বিঘ্নে আর্থিক লেনদেনের সুযোগ দিতে দেশের সব তফসিলি ব্যাংককে তাদের এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা সরবরাহ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর ঈদের আগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এমন নির্দেশনা দেয়, যেন বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা মজুত রাখা হয় এবং সার্বক্ষণিক রিফিলের ব্যবস্থা থাকে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যায় না।
ছুটির মধ্যে এটিএম বুথে টাকা না থাকায় গ্রাহকদের ভোগান্তি নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয় বেশ কিছু ব্যাংকের কর্মকর্তার সঙ্গে। তারা জানান, এটিএম বুথ সাধারণত দুইভাবে পরিচালিত হয়—একটি হলো ব্যাংক শাখার সঙ্গে থাকা বুথ, অন্যটি আলাদা বা স্বাধীন বুথ। শাখা–সংলগ্ন বুথগুলো পরিচালিত হয় সেই শাখার মাধ্যমে। ঈদের ছুটিতে গত বৃহস্পতিবার ব্যাংক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব বুথে নতুন করে টাকা জমা দেওয়া যায়নি, কারণ শাখার সব কর্মকর্তা ছুটিতে ছিলেন। তবে কিছু ব্যাংক বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে শুধুমাত্র এটিএমে টাকা ভরার জন্য কিছু কর্মকর্তাকে দায়িত্বে রেখেছে। যার ফলে কিছু বুথে টাকা থাকলেও বেশির ভাগই ছিল খালি।
কিছু এটিএম বুথে ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) রয়েছে, যেখানে টাকা জমা দেওয়া ও তোলা—দুই সুবিধা থাকে। তবে এসব বুথেও টাকা না থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, কোনো গ্রাহক সিআরএম বুথে টাকা জমা দিলেই পরক্ষণেই অন্য গ্রাহক সঙ্গে সঙ্গে তা তুলে নিচ্ছেন। জমা পড়া টাকাতেই চলছে লেনদেন। ফলে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। কিছু গ্রাহক সেবা পেলেও তা খুবই সীমিত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “আমরা আগেই নির্দেশনা দিয়েছি যাতে প্রতিটি বুথে পর্যাপ্ত টাকা রাখা হয়। তবে মাঠপর্যায়ে অনেক ব্যাংক সেই নির্দেশনা মানছে না বলে অভিযোগ আসছে।”
গ্রাহক ভোগান্তি কমাতে বিশেষ করে ঈদের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিটি বুথে সার্বক্ষণিক নজরদারি ও জরুরি ভিত্তিতে রিফিল টিম সক্রিয় রাখার দাবি জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।