এনজিও ও কর্পোরেট পলিসি দিয়ে সরকার চলে না: ড. মঈন খান

#পিআরআই সেমিনারে মঈন খান

এনজিও ও কর্পোরেট পলিসি দিয়ে সরকার চলে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এনজিও ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মতো দেশ চালালে বিপর্যয় হতে পারে। কেননা এনজিও চালানো আর দেশ চালানো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) মাসিক ম্যাক্রোইকোনমিক ইনসাইটস (এমএমআই) প্রকাশন উপলক্ষে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। পিআরআই কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী ছাত্তার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাইদী ছাত্তার ও পিআরআই-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান।

ড. মঈন খান বলেন, এনবিআর কর্মকর্তারা ঘুস নিয়ে কর মাফ করে দেয়, তাই রাজস্ব আদায় অনেক কম। এছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য মানুষকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। জুলাই অভ্যুত্থানের ২ বছর আগেই বিএনপি সংস্কার প্রস্তাব দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি সংস্কার চায় নাÑ এমন অপবাদ দেয়া অযৌক্তিক। বিএনপির এ নেতা বলেন, বাজার ভিত্তিক ঘোষণা দিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক কেন ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করছে। এটা ঠিক নয়। সম্প্রতি দেশে প্রথমবারের মতো ডলারের বিপরীতে টাকার মান বাড়তে দেখলাম। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক হস্তক্ষেপ করে দাম বাড়াল ডলারের। একটা আমদানি নির্ভর দেশে কেন এমন পদক্ষেপ নেয়া হলো বোধগম্য নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যথাযথ শুল্ক নীতির ওপর বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বহুলাংশে নির্ভর করছে উল্লেখ করে মঈন খান বলেন, শুল্ক চুক্তির বিষয়ে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ খুব জটিল সামাজিক কাঠামোতে আছে। মানুষের ধৈর্য কম, তাদের আবেগ বেশি। সরকারের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে হবে। তাছাড়া স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব না।

পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার এবং প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। মূল উপস্থাপনায় ড. জাইদী সাত্তার বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো মূলত বিনিয়োগনির্ভর, ভোগনির্ভর নয়। বেসরকারি ঋণ প্রবাহের ধীরগতি, মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির হ্রাস এবং বিনিয়োগের পরিমাণ কমে জিডিপির প্রায় ২৯ শতাংশে নেমে আসায় জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে, যদিও সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল রয়েছে। তিনি আরো জোর দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমনির্ভর খাত—যেমন তৈরি পোশাক ও ফুটওয়্যারের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার উপর নির্ভর করে রপ্তানি করে আসছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র একটি বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমান বাজার হওয়ায়, আমাদের একটি অনুকূল বাণিজ্য চুক্তির প্রয়োজন। কেবল শ্রমনির্ভর প্রতিযোগিতামূলক সুবিধার উপর নির্ভর করলেই চলবে না। আমাদের এমন একটি প্রতিযোগিতামূলক বাণিজ্য চুক্তি দরকার, কারণ যদি প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো আরও ভালো শর্তে চুক্তি করে, তাহলে বৈশ্বিক বাজারে আমাদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হ্রাস পাবে। এটি আমাদের জন্য একটি নতুন এবং জরুরি চ্যালেঞ্জ।

ড. আশিকুর রহমান বলেন, অর্থনৈতিক খাতে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে গৃহীত নীতি ও পদক্ষেপগুলো আগামী ১ থেকে ৩ বছর ধরে অব্যাহত রাখতে হবে। তাই নির্বাচিত নতুন সরকারকে ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ও সুশাসন ফিরিয়ে আনার এই বৃহত্তর লক্ষ্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ান ডেপুটি হাই কমিশনার ক্লিনটন পোবকে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বলেন, এমএমআই ইভেন্টটি জটিল অর্থনৈতিক সমস্যাগুলো বোঝার এবং সেগুলোর সাথে কার্যকরভাবে জড়িত হওয়ার একটি সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ আব্দুল মজিদ অনুষ্ঠানে প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের রাজস্ব জায়গা সীমিত। করনীতি, ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জিডিপি হিসাব দেয়ার ক্ষেত্রে সংস্কার জরুরি, যদিও তা কষ্টদায়ক হতে পারে। এনবিআরের নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে স্পষ্ট পৃথকীকরণ না থাকলে অর্থবহ অগ্রগতি অসম্ভব।

প্যানেল আলোচনার পর মুদ্রানীতি, মুদ্রাস্ফীতি ব্যবস্থাপনা এবং রাজস্ব প্রশাসনের ডিজিটালাইজেশন নিয়ে দর্শকদের সাথে উন্মুক্ত আলোচনা হয়। ড. জাইদি সাত্তারের অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য রাখেন।