ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন এ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন ২০২৫ সালের জন্য বিশ্বের ২৭ দেশের ৩৯ জনকে কৃষি খাদ্যের অগ্রদূত (টপ এগ্রি ফুড পাইওনিয়ার) হিসাবে পুরস্কৃত করেছে। সেই তালিকায় স্থান পেয়েছেছন বাংলাদেশের শীর্ষ উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ এবং লাল তীর সিডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল মিন্টু। গত চার দশকের বেশি সময় কৃষি ও খাদ্য খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ এই পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলাদেশে থেকে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ পেয়েছেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত স্যার ফজলে হাসান আবেদ।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন মঙ্গলবার রাতে পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষনা করে। এই পুরস্কারকে কৃষি ও খাদ্য খাতের নোবেল বলা হয়ে থাকে। পুরস্কার পাওয়া এসব ব্যক্তিদের বিষয়ে বলা হয়েছে, এসব গুণীজন তাদের কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বকে সমৃদ্ধ করেছেন। বিশ্বের টেকসই এবং ন্যায়সঙ্গত বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য বিশেষ কাজ করেছেন। তারা অসাধারণ বৈচিত্র, প্রতিভা এবং সংকল্পকে বিশ্ববাসির কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। তারা খাদ্যের জন্য একটি নতুন ভবিষ্যত্ তৈরি করছেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশের কৃষি বিশেষ করে বীজ, সবজি, প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নে অসামন্য অবদান রেখে চলেছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। ১৯৮১ সালে তিনি মূলত ব্যবসা শুরু করেন। তবে ১৯৯৪ সালে মাত্র ২৫ একর জমির ওপর তিনি বীজ উন্নয়নে গবেষনাগার ও খামার তৈরি করেন। যার নাম দেন লাল তীর সীডস লিমিটেড। সেই প্রতিষ্ঠানটি এখন জাতিসংঘের সহযোগি সংস্থার পর্যবেক্ষনে দক্ষিণ ও দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ৭তম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের একমাত্র আন্তর্জাতিক বীজ টেস্টিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। লাল তীর ছাড়া আইএসটিএ সনদপ্রাপ্ত কোন বীজ ল্যাবরেটরি বাংলাদেশে নেই।
উদ্যোক্তার পাশাপাশি তিনি কৃষি অর্থনীতি ও কৃষি বিষয়ক উচ্চতর নানান বিষয়ে ডিগ্রি নিয়েছেন। তার জ্ঞানলব্দ অভিজ্ঞতার আলোকে গবেষনা করে আলো ছড়িয়েছেন দেশে। তার গবেষনার অত্যমত অর্জণ দেশে প্রথমবারের মত মহিষের জীবন রহস্য উন্মোচন। এছাড়া দেশে গরু মোটাতাজাকরন করতে প্রথম উন্নত সীমেনের প্রচলন করেন তিনি। দেশে সবজি উত্পাদনে যে উল্লম্ফন হয়েছে তার নেপথ্যের কারিগর তিনি। বেসরকারীভাবে তিনিই প্রথম দেশে হাইব্রীড বীজসহ উন্নত বীজ প্রচলন করেছেন।
এ বিষয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করতে। কৃষি, খাদ্য ও পুষ্টি উন্নয়নে উন্নত প্রযুক্তি ও গবেষনার মাধ্যমে খাদ্য নিরাপত্তায় অবদান রাখতে চাই। নানান প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েই আমি আমার কাজ করে যাচ্ছি। তবে এই পুরস্কার সামনের দিনে আমাকে নতুন নতুন কাজে আরো উত্সাহিত করবে। খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি পুষ্টি নিরাপত্তায় দেশের মানুষের কল্যানে কাজ করে যেতে চাই।
ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির ৩৯তম বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা জানানো হবে। ২০২৫ সালের ২১-২৩ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া রাজ্যের ডেস মইনসে অনুষ্ঠিত নরম্যান ই. বোরলাগ আন্তর্জাাতিক সংলাপের সময় এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
ওয়ার্ল্ড ঢুড প্রাইজ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মাশাল হোসেন বলেন, জরুরি ও আন্তঃসম্পর্কিত সংকটের মুখোমুখি বিশ্ব। এই সম্মানিতরা নির্ভীক পরিবর্তনকারী যারা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রভাব রেখেছেন। এই ৩৯ জন ব্যক্তি বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন এবং তাদের মধ্যে বিজ্ঞানী, কৃষক, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা এবং মানবতাবাদী রয়েছেন। তারা সবাই খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী সমাধান নিয়ে কাজ করছেন। পুরস্কারপ্রাপ্তরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য সংকট মোকাবিলা এবং খাদ্য নিরাপত্তা উন্নত করার জন্য কাজ করছেন।