রাজবাড়ীতে এবার বিঘাপ্রতি পেঁয়াজের ফলন হয়েছে গড়ে ২৫-৩০ মণ। প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা দরে। অথচ বিঘাপ্রতি পেঁয়াজ চাষে খরচ পড়েছে ৫০-৭০ হাজার টাকা। অর্থাৎ লাভ তো দূরের কথা, প্রতিবিঘায় পেঁয়াজ চাষে কৃষকের লোকসান ২৫-৫০ হাজার। এতে আগামীতে রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সারাদেশের প্রায় ১৬ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় রাজবাড়ীতে। দেশের মধ্যে পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় বৃহত্তম জেলা রাজবাড়ী। ফলে এ জেলার উৎপাদিত পেঁয়াজ সারাদেশের চাহিদার বৃহৎ একটি অংশ পূরণ করছে। জেলার পাঁচ উপজেলায় কমবেশি পেঁয়াজের আবাদ হলেও কালুখালী, বালিয়াকান্দি ও পাংশায় সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজের আবাদ হয়।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর হালি পেঁয়াজ (চারা পেঁয়াজ) আবাদে বীজতলা তৈরি, হালি কেনা, সার, কীটনাশক দিয়ে জমি প্রস্তুত, সেচ, শ্রমিক মজুরিসহ প্রতিবিঘায় ৫০-৭০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সেখানে প্রতিবিঘায় ফলন হয়েছে ২৫-৪৫ মণ। তবে বেশিরভাগ জমিতে ফলন হয়েছে ২৫-৩০ মণ। এসব পেঁয়াজ ১০০০-১২০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ লাভতো দূরের কথা, খরচই উঠে আসছে না। উল্টো লোকসান হচ্ছে।
রাজবাড়ীতে হালি পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে জেলার বিভিন্ন মাঠে এই পেঁয়াজ উত্তোলন চলবে আরও এক থেকে দেড় মাস।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর জেলায় প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার হেক্টর জমিতে হালি পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে আবাদ হয়েছে ৩৭ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৬ হাজার হেক্টর বেশি জমি। উৎপাদনের আশা পাঁচ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন।
এবার পাঁচ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন এনায়েত শেখ। প্রতিবিঘায় ফলন হয়েছে ২৫-৩০ মণের মতো। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুরো মাঠেই একই অবস্থা। যার ফলন ভালো হয়েছে, সে সর্বোচ্চ ৪০ মণ পাবে। ফলন অনুসারে যে দাম আমরা পাচ্ছি তাতে চাষাবাদ করা সম্ভব না। ওষুধ, সার, শ্রমিক খরচসহ সব কিছুর দাম বেশি। সরকার পেঁয়াজ চাষিদের দিকে নজর না দিলে আগামীতে আর কৃষিকাজ করা সম্ভব হবে না। লোকসান দিতে দিতে আর কতদিন কৃষিকাজ করবো?’
আরেক চাষি হারুন ফকির বলেন, ‘এই মাঠে শুধু পেঁয়াজের চাষ হয়। এখন আমরা কিছু কিছু কৃষক হালি (হালি পেঁয়াজ) উঠাচ্ছি। কিন্তু বাজারে ন্যায্য দাম পাচ্ছি না। পেঁয়াজের দাম একটু বাড়লে সরকারসহ সবাই আন্দোলন করে। কিন্তু দাম কমলে সরকার দেখে না।’
সিদ্দিক নামের আরেক চাষি বলেন, সরকার বাইরের দেশের পেঁয়াজ না এনে দেশের পেঁয়াজ দিয়ে দেশ চালালে আমরা বাঁচতাম। মৌসুমে পেঁয়াজের ন্যূনতম দাম প্রতিমণ অন্তত দুই হাজার টাকা করার দাবি জানাই।
একইভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেন চাষি হাসান আলী মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ৮০০-১১০০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। এই দাম দিয়ে সার-কীটনাশকের দোকানের বকেয়া ও এনজিও থেকে নেওয়া ঋণই পরিশোধ হবে না। অথচ সামনে ঈদ। কী দিয়ে কী করবো বুঝতে পারছি না। পেঁয়াজের দাম না বাড়ালে আমরা বাঁচতে পারবো না।’
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, আগাম পেঁয়াজ উত্তোলন করলে ফলন কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেক্ষেত্রে পরিপক্ষ করে উত্তোলন করলে ফলন বাড়বে। শেষ অবস্থায় যারা পানি দিয়েছেন এবং রোগ দমনে কীটনাশক স্প্রে করেছেন তাদের ফলন ভালো হবে।
দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সারাদেশের মধ্যে পাবনা, ফরিদপুর, রাজবাড়ীসহ কয়েক জেলায় অনেক পেঁয়াজের আবাদ হয়। মৌসুমে চাসিরা সেই পেঁয়াজ একসঙ্গে উত্তোলন এবং বাজারজাত করায় দাম কম থাকে। সেক্ষেত্রে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে বিক্রি করলে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাবেন।