সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্যের লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। দীর্ঘদিন পর পরিবারের সান্নিধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। তিন নাতনিকে কাছে পেয়েছেন। বাসা থেকে বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান প্রতিদিনই খাবার নিয়ে যান। গতকাল শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রাতে লন্ডন থেকে বিএনপি নেতারা এ তথ্য জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির মিডিয়া সেলের পেজে ক্লিনিকে মায়ের জন্য তারেক রহমানের খাবার নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দুই পুত্রবধূ (ডা. জুবাইদা ও আরাফাত রহমানের স্ত্রী শর্মিলা রহমান) সার্বক্ষণিকভাবে দেখভাল করছেন। প্রতিদিনই ডা. জুবাইদা রহমান বাসা থেকে শাশুড়ির জন্য খাবার রান্না করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।’ এ ছাড়া তিন নাতনি জাইমা রহমান, জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানও দাদির সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর পরিবারের সান্নিধ্য পেয়ে বেগম খালেদা জিয়া অনেক খুশি। ভর্তির পর থেকে বেশকিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে তাঁর। কয়েকটির রিপোর্টও এসেছে। এগুলো পর্যালোচনা করে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। আরও কয়েকদিন পর্যবেক্ষণের পর মেডিকেল বোর্ড আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেবে। যে উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়া লন্ডনে এসেছেন, সেই লিভার প্রতিস্থাপন করা যায় কিনা এবং আরও উন্নত চিকিৎসার বিষয়ে রিপোর্ট দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
গত বৃহস্পতিবার ‘দ্য লন্ডন ক্লিনিকে’ কার্ডিওলজিস্ট, আইসিইউ স্পেশালিস্ট, ইন্টারন্যাল মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও ফিজিওথেরাপিস্টসহ অন্যান্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন। তাঁরা আরও কিছু পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছেন। সে অনুযায়ী ইতিমধ্যে কিছু পরীক্ষা করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাতে বিএনপির মিডিয়া সেলের এক পোস্টে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বরাতে জানায়, তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘স্বাস্থ্য পরীক্ষার কিছু রিপোর্ট পাওয়া গেছে এবং সেই অনুযায়ী তার চিকিৎসা চলছে। এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খুনসুটিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে।’
ডা. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, ‘আজ আরও কিছু রিপোর্ট পাওয়া যাবে। তার স্বাস্থ্যের অনেক বেশি উন্নতি হয়েছে তা বলা যাবে না। স্থিতিশীল বলা যায়। তবে টেস্ট রিপোর্টের ভিত্তিতে তার চিকিৎসা পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন এনেছেন চিকিৎসকরা। বড় ছেলে তারেক রহমানের তদারকিতে লন্ডন ক্লিনিকে লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির তত্ত্বাবধানে চলছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা।’
গত বুধবার (৮ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টা) খালেদা জিয়াকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরের টার্মিনালে বাংলাদেশের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান তাঁর ছেলে তারেক রহমান ও পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। সেখানে সাত বছর পর মা-ছেলের সাক্ষাৎ হয়। তখন সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। পরে তারেক রহমান নিজে গাড়ি চালিয়ে মাকে বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হাসপাতালে নিয়ে যান।
এর আগে কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা থেকে লন্ডন যাত্রা করেন খালেদা জিয়া। কাতারের হামাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক ঘণ্টা যাত্রাবিরতির পর লন্ডনের উদ্দেশে রওনা হন। এ সময় কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম বিমানবন্দরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন।
সর্বশেষ সাড়ে সাত বছর আগে যুক্তরাজ্যে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া। তখন চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।