সুশাসনের অভাব, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ ক্রমাগত বাড়ছে। যার মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকও রয়েছে। এছাড়া বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে অগ্রণী ব্যাংক থেকে অনিয়ম করে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। যার অধিকাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ফলে ব্যাংকের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে। তাই নতুন বছরে খেলাপি ঋণ আদায়ে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছেন বলে জানান ব্যাংকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান আবু নাসের বখতিয়ার।
বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপকালে তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এরপরেই ব্যাংকখাতে অস্থিরতা দৃশ্যমান হতে থাকে। দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে গত ৩ আগস্ট আমি অগ্রণী ব্যাংকে যোগ দিয়েছি। এর আগে ২০১০ সালে ব্যাংকটির এমডির দায়িত্ব পালন করেছি। সেই সময় ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিলো ২ হাজার কোটি টাকা। অথচ এখন তা বেড়ে দাড়িয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। তিনি বলেন, ব্যাংকে শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে শুরু করে সব খেলাপিকেই ধরা হচ্ছে। সবাইকে বার বার তাগাদা দিয়ে টাকা চাওয়া হচ্ছে। অনেক গ্রাহক টাকা ফেরত দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, গত সাড়ে চার মাসে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার খেলাপিঋণ আদায় হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণ কমে ৩০ শতাংশে চলে আসবে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণ আদায়কেই সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছি।
তিনি বলেন, অনেক ভালো ব্যবসায়ীরা গত ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবসা করতে পারেনি। তাদেরকেও খেলাপি বানিয়ে রেখেছে। অথচ তারাই ছিলো ব্যাংকের ভালো গ্রাহক। তাদের অপরাধ, তারা একটি রাজনৈতিক দলের লোক ছিলেন। তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীদের কখনো রাজনৈতিক তকমা দিয়ে ঋণ আটকে রাখা উচিত না। আমি দেখবোÑ তিনি ব্যবসায়ী কি না, তার কোন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে কি না। সে যে দলেরই হোক, ব্যবসায়ীকে ব্যবসা করতে দিতে হবে। তাকে ঋণ না দিয়ে আটকানো ঠিক হবে না।
চেয়ারম্যান বলেন, আমি বিশ্বাস করি, অল্প সময়ের মধ্যে অগ্রণী ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ সমস্যা অনেকটাই চিহ্নিত করতে পেরেছি, এখন শুধু কাজ করতে হবে। যেসব ব্যক্তি ব্যাংক লুট করেছে, তাদের তালিকা করা হয়েছে। যদি অর্থ ফেরত না দেয় তাদের সম্পদ বিক্রি করে ব্যাংকের অর্থ ফিরিয়ে আনবো। এছাড়া যেসব অর্থ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছেÑ সেগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। সবকিছু ঠিক থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই সংকট কেটে যাবে। তিনি বলেন, ব্যাংকের সব কর্মকর্তাকে বলেছি, বসে থাকার সময় নেই। ঋণ আদায়ের পাশাপাশি আমানতও বাড়াতে হবে। সেলক্ষে সবাইকে কাজ করতে বলা হয়েছে।
তথ্য বলছে, অগ্রণী ব্যাংকের বড় ধরনের আয় আসে বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে। এর মধ্যে আয়ের অন্যতম উৎস রেমিট্যান্সে অগ্রণী ব্যাংক প্রথম অবস্থানে রয়েছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, আশা করছি সামনে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরো বাড়বে। সেভাবেই উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
প্রসঙ্গ: বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ব্যাংকখাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কয়েক লাখ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। যা এগুলো ঋণখেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২১ কোটি টাকার ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। শুধু তাই নয় গত ১৬ বছরের মধ্যে বিতরণ করা ঋণ ও খেলাপি ঋণের সর্বোচ্চ অনুপাত এটি।