ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। দুদিন আগে মিসর ও কাতারের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। সেটিতেই রাজি হয়েছে গোষ্ঠীটি।
তবে ইসরায়েল এই প্রস্তাবে রাজি কিনা তা এখনও জানায়নি। রোববার (৩০ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, দুই দিন আগে মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে পাওয়া গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস সম্মত হয়েছে বলে স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটির প্রধান খলিল আল-হায়্যা শনিবার জানিয়েছেন।
টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে তিনি বলেন, “দুই দিন আগে, আমরা মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছি। আমরা এটি ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করেছি এবং এটি গ্রহণ করেছি।”
২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া গাজায় হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরোক্ষ আলোচনায় হামাসের আলোচক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন খলিল আল-হায়্যা। তিনি বলেছেন, “আমরা আশা করি (ইসরায়েলি) দখলদাররা (ইসরায়েলিদের) ক্ষতি করবে না।”
বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা সূত্র গত বৃহস্পতিবার রয়টার্সকে জানিয়েছে, ইসরায়েলের কাছ থেকে একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের ব্যাপারে মিসর ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছে, যার মধ্যে একটি অন্তর্বর্তীকালীন পর্যায় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, হামাস প্রতি সপ্তাহে তাদের হাতে আটক থাকা পাঁচজন ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাব অনুযায়ী তারা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করেছে এবং ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পূর্ণ সমন্বয়ে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে একটি পাল্টা প্রস্তাব পৌঁছে দিয়েছে।
রয়টার্স ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, তারাও যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত কিনা। কিন্তু এই প্রশ্নের জবাবে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও সাড়া দেয়নি তারা।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দু’মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৯২১ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৩০৫৪ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে।
জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। এছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।