ঘুষ নেওয়ার দায়ে পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্টের ২০ বছরের কারাদণ্ড

পেরুর একটি আদালত দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলেজান্দ্রো টলেডোকে ২০ বছরের বেশি কারাদণ্ড দিয়েছেন। ব্রাজিলের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার দায়ে এ সাজা দেওয়া হয়েছে তাকে। উচ্চ আদালত প্রসিকিউশনের সুপারিশকৃত কারাদণ্ডের মেয়াদ গ্রহণ করে টলেডোর উপস্থিতিতে শুনানিতে স্থানীয় সময় সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন।

৭৮ বছর বয়সী টলেডো ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পেরুর নেতৃত্ব দেন।

তিনি ওদেব্রেখটের কাছ থেকে ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘুষ পাওয়ার জন্য যোগসাজশ ও অর্থপাচারের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেটসহ মার্কিন প্রশিক্ষিত অর্থনীতিবিদ টলেডো নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন। তিনি সাজার বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে তার আইনজীবী সাংবাদিকদের বলেছেন।
আদালতে টলেডো তার ক্যান্সার ও হার্টের সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে গত সপ্তাহে এক শুনানিতে বলেছিলেন, ‘আমি একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে যেতে চাই।

আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, দয়া করে আমাকে সুস্থ হতে দিন বা বাড়িতে মারা যেতে দিন।’
আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি পেরুর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল ও ব্রাজিলের আটলান্টিক উপকূলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী একটি আন্তর্জাতিক মহাসড়কের দুটি অংশ নির্মাণের জন্য ঠিকাদারির বিনিময়ে ঘুষ গ্রহণ করেছেন।

এর আগে টলেডোকে গত বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যর্পণ করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল আদালত ভবনে আত্মসমর্পণের আগে বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি ওখানে বসবাস করছিলেন।

এদিকে দুর্নীতির কারণে কুখ্যাত হওয়ায় ওদেব্রেখটের নাম পাল্টে এখন নভোনর রাখা হয়েছে। বিশাল সরকারি নির্মাণকাজের ঠিকাদারি ভাগিয়ে নিতে প্রতিষ্ঠানটি লাতিন আমেরিকাজুড়ে কয়েক মিলিয়ন ডলার ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে। কথিত ‘কার ওয়াশ’ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পেরুর কয়েক ডজন রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী জেল খেটেছেন। টলেডো ওদেব্রেখটের বিশাল দুর্নীতির জালে জড়িয়ে পড়া পেরুর বেশ কয়েকজন প্রেসিডেন্টের মধ্যে অন্যতম। ২০০৫ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে পেরুর কর্মকর্তাদের লাখ লাখ ডলার ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে তারা।

২০১৯ সালে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করতে বাড়িতে পুলিশ গেলে পেরুর দুই মেয়াদের প্রেসিডেন্টে অ্যালান গার্সিয়া আত্মহত্যা করেন। এর আগে পেড্রো পাবলো কুকজিনস্কি ২০১৮ সালে লাতিন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট হন এবং ওদেব্রেখট কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পদত্যাগ করেন। প্রথমবারের মতো দুর্নীতির অভিযোগের এ ঘটনা পেরুর রাজনীতিতে তখন তেমন একটা নাড়া দেয়নি।

এ ছাড়া ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পেরুর নেতৃত্ব দেওয়া আলবার্তো ফুজিমোরি একটি বড় দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে জাপান চলে যান এবং সেখান থেকে ফ্যাক্সে পদত্যাগপত্র পাঠান। কয়েক বছর পর তিনি চিলিতে গ্রেপ্তার হন এবং বিচারের জন্য তাকে পেরুতে ফেরত পাঠানো হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে ফুজিমোরির ২৫ বছরের কারাদণ্ড হয়। সাজা ভোগ করার সময় মানবিক কারণে গত ডিসেম্বরে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর গত সেপ্টেম্বরে ৮৬ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

সূত্র : এএফপি