চট্টগ্রামে ক্যানসারের যন্ত্রণা সইতে না পেরে সুইসাইড নোট লিখে বীর মুক্তিযোদ্ধার ‘আত্মহত্যা’

চট্টগ্রামে আগ্রাবাদে ক্যানসার সইতে না পেরে সন্তানদের কাছে আবেগঘন সুইসাইড নোট লিখে নিজ বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ সরদার (৬৫) গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। গতকাল রোববার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার আগে যেকোনো সময়ে নগরের ডবলমুরিং থানার আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিকের ২০ নম্বর রোডে একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত আবু সাইদ সরদারের ইমন ও সায়মন নামের দুই ছেলে এবং পায়েল নামের এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। তিনি ওই বাসায় তাঁর ছেলে ইমনের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়া ডবলমুরিং থানা-পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. বায়েজিদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তিনতলা ভবনটির ভাড়া বাসার একটি কক্ষের দরজা ভেঙে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। ওনার কক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে। মূলত নোটগুলো লেখা হয়েছিল নিহতের দুই ছেলে, একে মেয়ে ও নাতির কাছে। সুইসাইড নোটগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে উনি আত্মহত্যা করেছেন।

এসআই বায়েজিদ মিয়া বলেন, মূলত ক্যানসার রোগের কারণে উনি খুব কষ্টে ছিলেন। গত ১৩ ডিসেম্বর আরেকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সুযোগ না পাওয়ার কারণে তা হয়নি।

জানা যায়, নিহতের কক্ষ থেকে উদ্ধার করা সুইসাইড নোটগুলোতে পরিবারের সদস্যদের কাছে আবেগঘন কিছু কথা লেখা লিখেন। এ ছাড়া তাঁর মৃত্যুর কারণ ও মৃত্যুর পর কিছু করণীয়ের ব্যাপারে তিনি সন্তানদের কিছু দায়িত্ব দিয়ে যান।

সুইসাইড নোটগুলোর একটিতে তিনি লিখেন, ‘নিজের ক্যানসার রোগের এত চিকিৎসার পরও কষ্ট আর সহ্য করতে না পেরে অগত্যা আত্মহত্যার পথ বেছে নিলাম’। এ সময় তিনি তাঁর সন্তানসহ সবার কাছে ক্ষমা চান।

মেয়ে পায়েলকে লেখা সুইসাইড নোটে তিনি লিখেন, ‘ক্যানসার মনে হয় ফের ফিরে এসেছে। মুখে ঘা ও মাঝে মাঝে ব্যথা করে। আসলে এ রোগের কোনো চিকিৎসা আছে বলে মনে হয় না। ইদানীং ক্যানসারে কষ্ট পাচ্ছি।’

সুইসাইড নোটে, আবু সাইদ সরদারকে নগরের চৌমহুনী কবরস্থানে নিজের মায়ের পাশে দাফনের জন্য বলে যান।

পুলিশ ধারণা করছে, মুক্তিযোদ্ধা আব সাইদ সরদার অনেকটা ভেবে চিন্তে সময় নিয়ে এ আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন।

নিহতের পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ নজরুল ইসলাম সুমন বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আবু সাইদ সরদার তাঁর ছোট ছেলের পরিবারের সঙ্গে ওই বাসাতে থাকতেন। বিকেলে ছেলেকে কিছু নেওয়ার জন্য বাসার বাইরে পাঠান। এরপর সন্ধ্যার আগে কোনো একটি সময় বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে আত্মহত্যা করেন। পরে ছেলে বাসায় এসে ভেতর থেকে দরজা লক দেখে ডাকাডাকির পর সাড়া না পেয়ে পাশের ভবন থেকে জানালা দিয়ে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন।