ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কয়েকদিনের প্রকাশ্য অনুপস্থিতি দেশজুড়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে এক উপস্থাপক খামেনির অফিসের এক কর্মকর্তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, “মানুষ খুব উদ্বিগ্ন। আপনি আমাদের জানাতে পারেন, নেতার অবস্থা কেমন?”
জবাবে খামেনির আর্কাইভ অফিসের প্রধান মেহদি ফাজায়েলি স্পষ্ট কোনো উত্তর না দিয়ে বলেন, “আমিও অনেক ফোন কল ও বার্তা পেয়েছি। সবাই দোয়া করছেন, আল্লাহ চাইলে বিজয়ের মুহূর্তে নেতার পাশে আমরা থাকব।”
আরও পড়ুনঃ ইরান কারো আগ্রাসনের কাছে নতি স্বীকার করবে না: খামেনি
স্থানীয় সময় বুধবার (২৫ জুন) মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের বিশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
গত এক সপ্তাহে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তিনটি পরমাণু স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে। জবাবে ইরান কাতারে মার্কিন ঘাঁটিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে। পরে কাতারের আমিরের মধ্যস্থতায় ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। এই পুরো সংকটকালে খামেনি কোনো বিবৃতি দেননি, জনসম্মুখেও আসেননি।
ইরানি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, খামেনি সম্ভাব্য হত্যাচেষ্টার আশঙ্কায় একটি বাঙ্কারে অবস্থান করছেন এবং ইলেকট্রনিক যোগাযোগ থেকেও বিরত আছেন।
রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গুজব
এই অনুপস্থিতির ফলে রাজনীতিকদের মধ্যে গুঞ্জন, অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তি বাড়ছে। কেউ বলছেন, খামেনি মারা গেছেন কি না তা নিশ্চিত না হলেও তার অনুপস্থিতি অস্বাভাবিক। একজন সম্পাদক মোহসেন খালিফেহ বলেন, “যদি তিনি মারা যান, তবে তা হবে ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় জানাজা।”
নিরাপত্তা বিশ্লেষক হামজেহ সাফাভি বলেছেন, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির মধ্যেও খামেনিকে হত্যা করতে পারে বলে নিরাপত্তা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এদিকে, প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ানের নেতৃত্বে এক ‘বাস্তববাদী’ গোষ্ঠী দেশে শাসনব্যবস্থা ও নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। পেজেশকিয়ান বলেছেন, “এই যুদ্ধ ও জাতীয় ঐক্য আমাদের শাসনব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার একটি ‘সোনালী সুযোগ’ দিয়েছে।”
ক্ষমতার দ্বন্দ্ব
সরকারি সূত্র বলছে, খামেনির অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক গোষ্ঠী ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করেছে। একদিকে রয়েছে মধ্যপন্থী ও কূটনৈতিক সমঝোতার পক্ষের দল, অন্যদিকে কট্টরপন্থী, যারা যুদ্ধবিরতি ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার বিপক্ষে।
কট্টর ডানপন্থী নেতা সাঈদ জালিলি প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করে বলেছেন, “এখন আলোচনা শুরু করার কথা বলে প্রেসিডেন্ট দেখাচ্ছেন তিনি দেশের শাসনের জন্য উপযুক্ত নন।”
জবাবে প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র আলি আহমাদনিয়া বলেছেন, “আমরা ১২ দিন ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করে এসেছি, এখন আর নিজেদের ভেতরের লোকদের মোকাবিলা করতে চাই না।”
পরমাণু কর্মসূচি ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পরমাণু সংস্থার প্রধান দুজনই জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরমাণু স্থাপনাগুলো পুনর্গঠনের মাধ্যমে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আবার শুরু করা হবে।
বিশ্লেষক সানাম ভাকিল বলেন, “আশুরা উপলক্ষে যদি খামেনিকে প্রকাশ্যে দেখা না যায়, তাহলে সেটা হবে অশনি সংকেত।”
ইরান এখন একদিকে সামরিক যুদ্ধবিরতির মধ্যে রয়েছে, অন্যদিকে রাজনৈতিক ও নেতৃত্ব সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে — যার মূলে রয়েছে আয়াতুল্লাহ খামেনির দীর্ঘ অনুপস্থিতি।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ