হলো না শেষ ওয়ানডে ম্যাচে এসেও। ৩২১ রানের বড় স্কোর স্কোরবোর্ডে রেখেও বছরের শেষ ওয়ানডেতে ভাগ্য বদল করা হয়নি বাংলাদেশের। অভিষিক্ত আমির জাঙ্গু আর কেসি কার্টির দুই ইনিংসেই ম্লান হলো বাংলাদেশের ব্যাটারদের দারুণ এক দিন। অভিষিক জাঙ্গু ক্ষান্ত হলেন সেঞ্চুরি করে। কার্যকরী ক্যামিও উপহার দিয়েছেন গুদাকেশ মোতিও। বছরের শেষ ওয়ানডে সেখানেই হারলো বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে টাইগাররা হেরেছে ৪ উইকেটে। সঙ্গে নিশ্চিত হয়েছে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ।
আগে ব্যাট করতে নেমে চার ফিফটির সঙ্গে ৬ষ্ঠ উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং জাকের আলী অনিকের রেকর্ড পার্টনারশিপ বাংলাদেশকে এনে দেয় ৩২১ রানের বড় এক সংগ্রহ। বছরে প্রথমবার ৩০০ পেরুনো পুঁজি পেয়ে যায় টাইগাররা। সেই বড় পুঁজির মানসিক শক্তিতেই কি না শুরুর বোলিংটাও হলো দুর্দান্ত।
ইনিংসের ২য় ওভারেই উইন্ডিজ শিবিরে ধাক্কা দেয় বাংলাদেশ। নাসুম আহমেদের সেই ওভারে ১৪ রান এলেও শেষ বলে রানআউট হয়ে যান ব্রেন্ডন কিং। নিজের পরের ওভারেই ফের উইকেটের দেখা পান নাসুম। এবারে বোল্ড করেন অ্যাথানেজকে। স্টাম্প থেকে সরে এসে সুইপ করতে চেয়েছিলেন। তার ব্যাটকে ফাঁকি দিয়ে ফুল লেংথের বল সরাসরি স্টাম্পে।
অধিনায়ক শেই হোপ টিকতে পারেননি বেশি সময়। হাসান মাহমুদের করা অফ স্টাম্পের বাইরে বলে হিট করতে সময়ের গড়বড় করেছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। ফলাফল- প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিলেন সৌম্য সরকারকে। ৩১ রানেই নেই উইন্ডিজদের ৩ উইকেট।
শেরফাইন রাদারফোর্ড এই সিরিজে স্বাগতিকদের ত্রাতা হয়ে উঠেছেন। এই ম্যাচে তাকে খুব একটা বাড়তে দেননি তাসকিন। । ইনিংসের ১৫তম ওভার করতে আসা তাসকিন শর্ট ডেলিভারি করেছিলেন। ছক্কা মারার আশায় পুল করতে গেলেন রাদারফোর্ড। কিন্তু ধরা পড়লেন তানজিদ হাসান তামিমের হাতে। ক্রিজে আসেন নবাগত আমির জাঙ্গু।
এখান থেকেই মূলত উইন্ডিজের ভরসা জাগানো জুটির শুরু। কেসি কার্টি কদিন আগেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ছিলেন দুর্দান্ত। বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে তুলে নিলেন ফিফটি। সুযোগ বুঝে চড়াও হয়েছেন। অভিষিক্ত আমির জাঙ্গুকে কিছুটা ভরসাই জোগালেন যেন। ইংল্যান্ড সিরিজে ছিল একটি সেঞ্চুরি। আজও ছুটছিলেন সেই পথে।
দুজনের জুটি যোগ করেছে ১৩২ রান। শুরুর দিকে কিছুটা ধীরে খেলতে থাকা আমির জাঙ্গুও একপর্যায়ে চড়াও হন বাংলাদেশের বোলারদের ওপর। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে এসেই পেয়েছেন ফিফটি। সেটাকে অবশ্য পরে টেনেছেন অনেকটা দূর। ৩৪তম ওভারেই ফিরতে পারতেন। রিশাদের সেই ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি লাইনে তার সহজ ক্যাচ নিতে পারেননি পারভেজ ইমন।
পরের বলেই অবশ্য দারুণ এক ক্যাচে কেসি কার্টিকে ফেরান সৌম্য সরকার। বোলার সেই রিশাদই। ৯৫ রানে থামে তার ইনিংস। রস্টন চেজকে বেশি সময় ক্রিজে থাকতে দেননি রিশাদ। এবার নিজের বলে নিজে অসামান্য এক ক্যাচ নিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেকথ্রু এনে দেন এই লেগি। গুদাকেশ মোতিকে নিয়ে এরপর শেষটা করেছেন আমির জাঙ্গু।
মোতি নিজেও খেলেছেন নিখুঁত ব্যাটারের মতো। ৩৫ বলেই ৫০ পার করে তাদের জুটি। জাঙ্গু পেয়েছেন দারুণ এক সেঞ্চুরি। ৭৯ বল খেলেই স্পর্শ করেছেন তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার। ৯০ রানের জুটি গড়েছেন গুদাকেশ মোতির সঙ্গে। মোতি অপরাজিত ছিলেন ৪৪ রানে। ক্যারিবিয়ানরা জয় পায় ৪ উইকেটে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতে ৯ রানে ২ উইকেট হারালেও বাংলাদেশকে টেনে নিয়েছেন দুই ব্যাটার সৌম্য সরকার এবং মেহেদি হাসান মিরাজ। দুজনেই খেলেছেন ব্যাটে বলে তাল মিলিয়ে। তাদের ব্যাটে আসে ১৩৬ রানের কার্যকরী এক জুটি। ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন দুজনেই। যদিও কেউই সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে পারেননি ইনিংস। সৌম্য থেমেছেন ৭৩ রানে। মিরাজের ব্যাটে এসেছিল ৭৭ রান।
মাঝে ২৬ রানের ব্যবধানে মিরাজ সৌম্যর সঙ্গে ফিরে যান আফিফ হোসেনও। আরও একবার দলের ত্রাতা হয়ে এলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং জাকের আলী অনিক। দুজনের ব্যাটে জুটি আসে ১৫০ রানের। যা ৬ষ্ঠ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি। জাকের ৫৭ বলে ৬২ এবং রিয়াদ অপরাজিত থাকেন ৬৩ বলে ৮৪ রান করে।
শেষ পর্যন্ত তাদের সেই জুটির সুবাদে বাংলাদেশ পায় ৩২১ রানের বড় পুঁজি। যা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। যদিও জয়ের জন্য এদিন সেন্ট কিটসে তা আর যথেষ্ট হয়ে ধরা দেয়নি।