#বিজিএমইএ-ডেনমার্ক রাষ্ট্রদূত আলোচনা
পোশাক শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বজায় রাখতে জিএসপি প্লাস থ্রেশহোল্ডের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ডেনমার্ক সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান। একইসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নীতি-নির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশের পরিস্থিতি তুলে ধরার জন্য ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন তিনি।
এ সময় বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর জিএসপি প্লাস (জেনারালাইজড সিস্টেম অফ প্রেফারেন্সেস প্লাস) সুবিধার সম্মুখীন হওয়া এবং জিএসপি প্লাসের থ্রেশহোল্ডের (নির্দিষ্ট সীমা) সমস্যায় পড়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। মাহমুদ হাসান খান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে ডেনমার্কের বাজারে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রবণতা দৃশ্যমান, যা শিল্পের জন্য মোটেও শুভ নয়। তিনি বিষয়টি দেখার জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান। বিজিএমইএ সভাপতি পোশাক শিল্পের জন্য একটি সমন্বিত আচরণ বিধি প্রনয়ণে ব্র্যান্ডদের সমর্থন আদায়ে উদ্যোগী ভূমিকা পালনের জন্যও ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, একটি সমন্বিত আচরণ বিধি নিরীক্ষা প্রক্রিয়া সহজতর করবে, কারখানার উপর চাপ কমাবে এবং শিল্পকে আরো নৈতিক, টেকসই এবং দায়িত্বশীল করে তুলবে।
আরও পড়ুনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪০% মূল্য সংযোজন চাহিদা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য চ্যালেঞ্জ : বিজিএমইএ সভাপতি
সোমবার ঢাকার উত্তরায় বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তারা প্রধানত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা, বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য শিল্পের অগ্রাধিকার প্রভৃতি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় বিজিএমইএ সভাপতির সঙ্গে আরো ছিলেন সহ-সভাপতি মোঃ রেজোয়ান সেলিম এবং পরিচালক শেখ হোসেন মোহাম্মদ মোস্তাফিজ। বৈঠকে পোশাক শিল্পের সাসটেইনেবিলিটি ও সার্কুলারিটি ইস্যুগুলোতে এবং শিল্পকে জ্বালানি দক্ষ করে তুলতে ডেনমার্ক ও বাংলাদেশ কিভাবে একসঙ্গে আরো কাজ করতে পারেÑ সে সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।
আলোচনার শুরুতেই ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার বলেন, ডেনমার্ক তাদের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০ দশমিক ৭ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নে ব্যয় করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এ প্রতিশ্রুতি ডেনমার্ক ধারাবাহিকভাবে পূরণ করে আসছে। এমনকি বৈশ্বিক বা অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ, কিংবা অন্যান্য ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট সত্ত্বেও ডেনমার্ক এই প্রতিশ্রুতি বজায় রাখতে দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
বৈঠকে বাংলাদেশের উন্নয়নে এবং বিশেষ করে সবুজ রূপান্তর ও টেকসই অর্থনীতি গঠনে ডেনমার্ক সরকারের গৃহীত চলমান প্রকল্পগুলো যেমনÑ ক্রিয়েট, প্যাক্ট, সুইচটুসিই প্রজেক্ট প্রকল্পের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হয়। বিশেষ করে ডেনমার্কের সহায়তায় বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্প কারখানায়, বিশেষভাবে পোশাক শিল্পে যে এনার্জি অডিট পরিচালনার কাজ চলছে, তা নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়। এ অডিট থেকে যাতে করে প্রকৃত ডেটা পাওয়া যায়, তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার এ ব্যাপারে সহযোগিতা প্রদান করার জন্য বিজিএমইএ সভাপতিকে অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, এ অডিটগুলো কারখানার জ্বালানি ব্যবহারের ধরন বিশ্লেষণ করে এবং কোথায় জ্বালানি সাশ্রয় করা সম্ভব, কোথায় ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করা সম্ভব, তার সুপারিশ দিবে এবং বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ উভয় সংগঠনের সদস্যরা এতে উপকৃত হবে।
বৈঠকে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিকস মোলার বলেন, পরিচ্ছন্ন ও সবুজ প্রযুক্তিতে ডেনমার্ক বাংলাদেশের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করছে এবং ডেনমার্ক এই অংশীদারিত্ব আরো বাড়াতে আগ্রহী। বিশেষ করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জ্বালানি দক্ষতা, সার্কুলার অর্থনীতি, টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিযোজন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহী ডেনমার্ক।
বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাংলাদেশের উন্নয়নে, বিশেষ করে পোশাক শিল্পের সবুজ রূপান্তরে অব্যাহত সহায়তা দেয়ার জন্য ডেনমার্ক সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ।