পতন কেটে দেশের শেয়ারবাজারে টানা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। সেইসঙ্গে বাড়ছে লেনদেনের গতি। বুধবার (২৫ জুন) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। ফলে সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। এর মাধ্যমে টানা তিন কার্যদিবস শেয়ারবাজারে ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিললো। আর সাত কার্যদিবস পর ডিএসইতে ৪০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
এর আগে শনিবার (২১ জুন) রাতে ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা করে যুক্তরাষ্ট্র। এতে রোববার (২২ জুন) বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হতেই আতঙ্কে বিক্রির চাপ বাড়ান বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ। ফলে দেশের শেয়ারবাজারে ঢালাও দরাপতন হয়। সাড়ে ৩০০ এর বেশি প্রতিষ্ঠানের দরপতন হওয়ায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৭৬ পয়েন্ট কমে যায়।
আরও পড়ুনঃ ঘুরে দাঁড়াচ্ছে শেয়ারবাজার, সাড়ে তিনশ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে লেনদেন
তবে পরের কার্যদিবস সোমবার (২৩ জুন) মূল্যসূচক বাড়লেও লেনদেন ৩০০ কোটি টাকার নিচে থাকে। আর ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসায় মঙ্গলবার (২৪ জুন) মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি লেনদেন বেড়ে ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকাও বড় হয়। এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ২৯৫টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৪৬টির। আর ৫৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১৫৯টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ২৫টির দাম কমেছে এবং ৩৬টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৬৮টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ১১টির দাম কমেছে এবং ৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৬৮টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০টির এবং ১৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ১৩টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ৬টির দাম কমেছে এবং ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪৯ পয়েন্ট বেড়ে ৪ হাজার ৭৬৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৫ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৭৯০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। বাজারটিতে ৪১৩ কোটি ২১ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৩৭২ কোটি ৭০ টাকার লেনদেন হয়েছে। এ হিসেবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন বেড়েছে ৪১ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে সত কার্যদিবসের মধ্যে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হলো।
এই লেনদেনে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে লাভেলো আইসক্রিম। কোম্পানিটির ২৭ কোটি ৪১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার। ১৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকার শেয়ার নদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, বিচ হ্যাচার, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যালস, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, ফাইন ফুডস এবং মিডল্যান্ড ব্যাংক।
অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ২৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৩৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২১টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৭৯টির এবং ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ৪৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯ কোটি ৫ লাখ টাকা।
এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ