টেকসই সবুজায়নের লক্ষ্যে ডেইরি ভ্যালু চেইন ফোরামের যাত্রা শুরু

বাংলাদেশের দুগ্ধশিল্পে টেকসই সবুজায়ন নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম বার্ষিক ডেইরি ভ্যালু চেইন ফোরামের যাত্রা শুরু হয়েছে। বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে এই যাত্রা শুরু হয়।

দুগ্ধ খামারি পরিবারগুলোর স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি বেসরকারি খাতভিত্তিক একটি টেকসই ও পরিবেশবান্ধব একটি অবকাঠামো তৈরি লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই ফোরামটি ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ডানিডা গ্রিন বিজনেস পার্টনারশিপের (ডিজিবিপি) অর্থায়নে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্প ‘গ্রিন ডেইরি পার্টনারশিপ ইন বাংলাদেশ’-এর একটি উদ্যোগ।

আরও পড়ুনঃ বৈষম্যহীন-টেকসই অর্থনীতি গড়তে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু সুফিয়ান। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে ডেনমার্ক দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন অ্যান্ডার্স বি. কার্লসেন ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুক। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন সংস্থা এবং বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা।

একটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং বাণিজ্যিকভাবে কার্যকরি প্রবর্তনের মাধ্যমে এই প্রকল্পটি ৩০ শতাংশ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ হ্রাস এবং ১০ হাজার খামারি গৃহস্থালির আয় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেছে। খামারি গৃহস্থালির সংখ্যা ৫০ হাজারে বৃদ্ধি করার পরিকল্পনাও রয়েছে এই প্রকল্পটির। উপরন্তু, এই পাঁচ বছরব্যাপী প্রকল্পটির খামারিদের মধ্যে ৮০ শতাংশ নারী খামারি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এই প্রকল্পটির সহযোগী হিসেবে রয়েছে সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া, আরলা ফুডস, প্রাণ ডেইরি, সেগেস ইনোভেশন, আইডিআরএন-বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ড্যানিশ এগ্রিকালচার অ্যান্ড ফুড কাউন্সিল।

ডেইরি ভ্যালু চেইন ফোরাম একটি সহযোগিতামূলক অবকাঠামো, যা বহুমাত্রিক সহযোগীদের দায়িত্বশীল ব্যবসায়িক আচরণ এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণে সম্মিলিত প্রচেষ্টা নিশ্চিত করতে কাজ করবে, যেন দেশের দুগ্ধ খাত বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই হয়। এটি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করবে, যাতে জাতীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় অবদান রাখতে সক্ষম একটি লাভজনক খাতের সম্ভাবনা সৃষ্টি করা যায়।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রকল্পের অগ্রগতি, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ও খামার পরিচালন পদ্ধতির ওপর প্রাপ্ত প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত পরিবেশন করা ছাড়াও ‘আরলা বিগ ফাইভ’ টেকসই মডেলের পরিচিতি উপস্থাপন করা হয় যা গরুর জন্য কার্যকরি খাদ্য, খাদ্য সামঞ্জস্যতা, পশুর সুস্থতা, সার ব্যবস্থাপনা এবং জমির কার্যকরি ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেয়।

ভবিষ্যতে একটি স্টিয়ারিং কমিটির দ্বারা কাঠামোগত পরিচালনা মডেলের মাধ্যমে ফোরামটি পরিচালিত হবে। এটি নিয়মিতভাবে কমিউনিটি, জেলা, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংযোগ স্থাপন করবে। এর প্রধান কার্যক্রমগুলোর মধ্যে থাকবে সক্ষমতা বৃদ্ধি, জ্ঞান বিনিময় এবং নীতি ও বিনিয়োগবিষয়ক সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরতে একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুত করা।

অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মোঃ আবু সুফিয়ান বলেন, সবাইকে একত্রিত করে ডেইরি ভ্যালু চেইন ফোরামের এই যাত্রা অত্যন্ত সময়োপযোগী। আরো সুদক্ষ ও টেকসই দুগ্ধ খাত প্রস্তুতে আমাদের সামষ্টিক অঙ্গীকারেরই পরিচায়ক এটি। এই খাত শুধু উৎপাদন ভিত্তিকই নয়, এর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে পুষ্টি, কর্মসংস্থান, নারী ক্ষমতায়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

ডেনমার্ক দূতাবাসের ডেপুটি হেড অব মিশন অ্যান্ডার্স বি. কার্লসেন বলেন, ‘গ্রিন ডেইরি পার্টনারশিপ প্রকল্পটি ডেনমার্ক ও বাংলাদেশের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের পরিচায়ক। ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পটির মাধ্যমে আরও পরিবেশবান্ধব ও বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর একটি দুগ্ধখাত উন্নয়নে সরকারি, বেসরকারি এবং শিক্ষাখাতের একটি সমন্বিত উদ্যোগ।’

ইন্টারন্যাশনাল সাসটেইনাবিলিটির প্রধান আইরিন কুইস্ট মরটেনসেন বলেন, ‘গ্রিন ডেইরি পার্টনারশিপের লক্ষ্যমাত্রা শুধু গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস বা উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ নয় বরং পাশাপাশি একটি টেকসই ও সামষ্টিক পরিবর্তনও সৃষ্টি করা। আমরা খামারি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বিতভাবে এমন একটি দুগ্ধখাত অবকাঠামো তৈরিতে কাজ করছি যা বাংলাদেশের বর্ধনশীল জনগোষ্ঠীর দুগ্ধ পুষ্টি চাহিদা মোকাবিলায় সক্ষম হবে।’

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ফাইন্যান্স) উজমা চৌধুরী বলেন, ‘ডেইরি ভ্যালু চেইন ফোরাম বাংলাদেশের টেকসই এবং স্থিতিশীল দুগ্ধ খাতের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং টেকসই উন্নয়ন ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে সহায়তা করার জন্য প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি যে সহযোগিতাপূর্ণ উদ্যোগ এবং জলবায়ুবান্ধব প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে আমরা কেবল দুগ্ধ চাষিদের, বিশেষ করে নারীদের অর্থনৈতিক স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধি করতে পারব না, বরং বাংলাদেশের দুগ্ধ খাতের পরিবেশগত প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারব। এই ফোরাম একটি পরিবেশবান্ধব, আরও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’

সলিডারিডাড বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার সেলিম রেজা হাসান বলেন, ডেইরি ভ্যালু চেইন ফোরাম বাংলাদেশের দুগ্ধ খাতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করার জন্য অংশীদারদের একত্রিত করছে। এটি দুগ্ধ খাতকে বাণিজ্যিকভাবে কার্যকর এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই করার জন্য উদ্ভাবন ভিত্তিক পদক্ষেপকে উৎসাহিত করবে, যা এই খাতকে কার্বন-নিরপেক্ষ করতে অবদান রাখবে।

ইন্টিগ্রেটেড ডেইরি রিসার্চ নেটওয়ার্কের (আইডিআরএন) নেটওয়ার্ক কোঅর্ডিনেটর ড. মোহম্মাদ মহি উদ্দীন বলেন, টেকসই এবং পরিবেশবান্ধব দুগ্ধ খাতের জন্য ডেইরি নেটওয়ার্কিং দুগ্ধ খাত অবকাঠামোর অংশীজনদের তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্তগুলোর সহযোগিতা গ্রহণ করতে পারবে।

এধরনের খবর পড়তে ভিজিট করুন সোনালি বাংলা নিউজ