#গোল টেবিল আলোচনায় ব্যবসায়ীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: আমেরিকার শুল্ক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তুলা আমদানি বৃদ্ধি একটি উপযুক্ত পথ বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য দেশটি থেকে তুলা আমদানি বাড়ানোকে অগ্রাধিকার দেয়ার তাগিদ তাদের। সেবা খাতকে বাদ দিয়ে শুধু পণ্য কেন্দ্রীক বাণিজ্যে শুল্কারোপ ট্রাম্প প্রশাসনের চালাকি বলে মন্তব্য করেছেন ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, এখানে ভূরাজনৈতিক আধিপত্য স্পষ্ট। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক মোকাবিলায় বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারকে এগুনোর পরামর্শ তাদের। তবে সবকিছু ছাপিয়ে দেশে শিল্পের সক্ষমতা নিশ্চিতে জোর দেন উদ্যোক্তারা। এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ প্রশাসকের মতে, ট্রাম্প ট্যারিফে আরো মজবুত হলো এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি।
বর্তমানে শুল্ক সুবিধা থাকলেও বন্দরে বিশেষ ওয়্যারহাউজ সুবিধা নেই। তাই চট্টগ্রাম বন্দরে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের তুলার জন্য পৃথক ওয়্যারহাউজ প্রস্তুত করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিটিএমএ’র সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।
উদ্যোক্তারা বলেন, বাংলাদেশ যদি এখনই সক্রিয় না হয়, তাহলে তিন মাস পরে উচ্চ শুল্ক আবার কার্যকর হলে তা রপ্তানিতে ধস নামাতে পারে এবং দীর্ঘমেয়াদে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়বে।
ট্রাম্প ট্যারিফ তিন মাসের জন্য স্থগিত হলেও দুশ্চিন্তা কাটেনি ব্যবসায়ীদের। এ সংকট মোকাবিলার পথ খুঁজতে আলোচনা সভার আয়োজন করে সুতা ও বস্ত্র শিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশন (বিটিএমএ)।
শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআই প্রশাসক হাফিজুর রহমান, ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, বিএবি সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, প্লাস্টিক এসোসিয়েশনের সভাপতি সামীম আহমেদ, বিএপিআই যুগ্ম সচিব এবং এসিআই হেলথকেয়ার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিবুজ্জামান, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি প্রমুখ।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএ সহ-সভাপতি আবুল কালামন্দ মোঃ সালেউদ জামান খান, পরিচালক মোঃ মাসুদরানা, আব্দুল্লাহ আল মামুন, মোঃ শহীদ আলম, মোঃ কামরুল হাসান, হোসেন মেহমুদ, জনাব মো. মতিউর রহমান। অন্যদের মধ্যে মি. কুতুবউদ্দিন আহমেদ সাবেক সভাপতি, বিজিএমইএ এবং সদস্য, উপদেষ্টা বোর্ড, বিটিএমএ এবং মোহাম্মদ হেলাল মিয়া (চেয়ারম্যান, আমানত শাহ গ্রুপ এবং সদস্য, উপদেষ্টা বোর্ড, বিটিএমএ)।
বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন এ সময় তিনি বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতা হ্রাস করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। তিনি মার্কিন বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের জন্য তুলা-ভিত্তিক পোশাক তৈরি করে মার্কিন তুলার প্রধান আমদানিকারক হিসেবে বাংলাদেশের মর্যাদা লাভের প্রস্তাব করেন। তিনি টেক্সটাইল খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে আর্থিক ও নীতি-ভিত্তিক- এবং বৃহত্তর বিদেশী প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই)-এর জন্য জোরালো সরকারী সহায়তারও আহ্বান জানান।
ভিডিও কনফারেন্সে মূল বক্তব্যে বিষয়টির যৌক্তিকতা তুলে ধরেন পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ। তিনি নতুন মার্কিন ট্যারিফের উপর সাম্প্রতিক ৯০ দিনের স্থগিতকরণের তাৎপর্য তুলে ধরেন। তিনি স্টেকহোল্ডারদের একা কূটনীতির বাইরে যেতে এবং বাজার ভিত্তিক সমাধান অনুসরণ করার আহ্বান জানান। ড. রিয়াজ বলেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই সিদ্ধান্তমূলকভাবে কাজ করতে হবেÑ ক্রেতা এবং ব্র্যান্ডকে জড়িত করে, রপ্তানিতে মার্কিন বিষয়বস্তু বৃদ্ধি করে, এবং সেক্টর-নির্দিষ্ট প্রভাবগুলি মূল্যায়ন করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দীর্ঘমেয়াদী অ্যাক্সেস সুরক্ষিত করতে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রশাসক এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ইতোমধ্যে সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখা শুরু করেছে। তবে ট্রাম্প ট্যারিফ শুধু বাণিজ্য কেন্দ্রীক নয় বলে মনে করছে সরকার। এজন্য ভূরাজনৈতিক ইস্যুকে মাথায় রেখে সঠিক পথে এগুনোর চেষ্টা করছে সরকার।
আলোচনা সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের সঙ্গে যুক্ত হলো যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চ্যালেঞ্জ। যা মোকাবিলায় শুধু বাণিজ্য কেন্দ্রীক নয়, বরং রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বনের বিকল্প নেই। তবে সবকিছু ছাপিয়ে শিল্পের সক্ষমতা নিশ্চিতে সরকারের প্রতিশ্রুতি চান উদ্যোক্তারা।
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। রাজনৈতিকভাবে যতোই মোকাবিলার চেষ্টা করি না কেনো, তার সঙ্গে মূল সমস্যাকে খুঁজে বের করে সমাধান করা অত্যন্ত জরুরি।
বর্তমানে শুল্ক সুবিধা থাকলেও, বন্দরে বিশেষ ওয়্যারহাউজ সুবিধা নেই। তাই চট্টগ্রাম বন্দরে শুধু আমেরিকার তুলার জন্য আলাদা ওয়্যারহাউজ তৈরি করার প্রস্তাব দিয়েছেন বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। এ সময় বিটিএমএ সভাপতি বলেন, আমরা কেউ কেউ বলছি, আমেরিকান তুলা দুই-চার সেন্ট বেশি। যেটা আসলে বেশি নয়, কারণ এটার ইল্ড অনেব বেশি। ইন্ডিয়ান তুলায় ১৮ শতাংশ নষ্ট হয়।
বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা সম্ভব নয় বলে মনে করছেন এফবিসিসিআই প্রশাসক। তবে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা ও এলএনজি কেন্দ্রীক বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ বিজিএমইএ প্রশাসকের। ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানান, তথ্য ও প্রত্যাশা তুলে ধরে সরকারের পাশে থাকার।
গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা জানান, ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ স্থগিত করায় প্রাথমিক ভাবে খুশি হলেও, এ নিয়ে চিন্তিত ব্যবসায়ীরা। ৯০ দিন পর ট্রাম্প প্রশাসনকে কী প্রস্তাব দেওয়া যায় এবং কি সুযোগ নেয়া যায়, এসব বিষয়ে আলোচনা করে ঠিক করার পরামর্শ দেন তারা। এসময় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করতে বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরামর্শও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।