ডরিন পাওয়ারের সাথে বিআরইবির বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি বাতিল

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ডরিন পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির বিদ্যুত ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) বাতিল করেছে বাংলাদেশ রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন বোর্ড (বিআরইবি)।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, বিআরইবি গত ১১ মার্চ এক চিঠির মাধ্যমে ওই চুক্তি বাতিল করেছে।

এর আগে পিপিএর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০২৩ সালের ২০ ডিসেম্বর মধ্যরাত থেকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যদিও একই বছরের ৯ এপ্রিল ডরিন পাওয়ারের পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছিলো। আবেদনে সাড়া দিয়ে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ডরিন পাওয়ারের নরসিংদির বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে আরও ৫ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ দিতে চুক্তি করে বিআরইবি। ‘নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট বেসিস’ শর্তে বিআরইবির সাথে পাঁচ বছরের চুক্তি করে কোম্পানিটি।

তবে, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (বিআরইবি) সাথে কোম্পানিটির শুল্ক এবং অন্যান্য শর্তাবলী নিয়ে আলোচনা প্রক্রিয়াধীন থাকায় উৎপাদনে যেতে পারেনি ডরিন পাওয়ারের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

এদিকে গেল বছরের আগস্ট মাসে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার পতনের পর বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি শুরু করে ডরিন পাওয়ার। অক্টোবরের মাঝেই দুটি বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেয় কোম্পানিটি। ২০২৩ এর ডিসেম্বরে এই দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ নতুন করে আর বাড়বে না, এমন আশঙ্কা থেকেই ডরিন পাওয়ার যন্ত্রপাতি বিক্রি করে দেয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

জানা গেছে, ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তনের পর বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটির যন্ত্রপাতি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয় ডরিন পাওয়ার। এই দুটিসহ তাদের মোট তিনটি বিদ্যুকেন্দ্রের মেয়াদ ফেব্রুয়ারিতে শেষ হয়েছে। এ তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র হলো টাঙ্গাইল, ফেনী ও নরসিংদী পাওয়ার প্ল্যান্ট। প্রতিটির উৎপাদনক্ষমতা ২২ মেগাওয়াট করে মোট ৬৬ মেগাওয়াট। তারা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে ১৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ ছিল। এরপর চুক্তি নবায়নে উদ্যোগী হয় ডরিন পাওয়ার। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় চুক্তি নবায়নের আশ্বাস পেয়ে অপেক্ষায় ছিল তারা। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর কোম্পানিটি বুঝতে পেরেছিলো যে তাদের সঙ্গে বিপিডিবির চুক্তি নবায়নের সম্ভাবনা কম। এ কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রপাতির পাশাপাশি জমিও বিক্রির চেষ্টা করেছে তারা।

ডরিন পাওয়ারের মালিকানায় ছিল সাবেক ছাত্রনেতা ও আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নুরে আলম সিদ্দিকীর পরিবার। বর্তমানে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে ও আওয়ামী লীগদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। আর চেয়ারম্যান হলেন তাহজীব আলম সিদ্দিকীর স্ত্রী আনজাবিন আলম সিদ্দিকী।

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর বিদ্যুৎ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হয় ডরিন পাওয়ার। ওই বছরই উল্লিখিত তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র সরকারের সঙ্গে ১৫ বছরের চুক্তিতে উৎপাদন শুরু করে। এ ছাড়া ডরিন পাওয়ারের আরও তিনটি সহযোগী বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। সেগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ২২৫ মেগাওয়াট। কেন্দ্রগুলো হচ্ছে, নবাবগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা সাউদার্ন পাওয়ার জেনারেশন, মানিকগঞ্জে অবস্থিত ঢাকার নর্দার্ন পাওয়ার জেনারেশন ও চাঁদপুর পাওয়ার জেনারেশন। ডরিন পাওয়ারের সহযোগী এই তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তির মেয়াদ ২০৩০ সালের পর শেষ হবে।

২০০৮ সালের নভেম্বরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ডরিন পাওয়ার জেনারেশন্স অ্যান্ড সিস্টেমস লিমিটেডের যাত্রা শুরু হয়। ২০১০ সালে ৫৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন নর্দান ও সাউদার্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটির বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। ডরিন পাওয়ার ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়।