ভারতের মাটিতে ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ হেরে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির প্রস্তুতি সেরেছিল ইংল্যান্ড। তবে মেগা টুর্নামেন্টটিতে অস্ট্রেলিয়ার অনভিজ্ঞ বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে রীতিমতো ঝড় তুললেন ইংলিশ ব্যাটাররা। ওপেনার বেন ডাকেট তো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন। ইংল্যান্ডও টুর্নামেন্টটির ইতিহাসে ৩৫১ রানের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পেয়েছে।
লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে আজ (শনিবার) চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির হাইভোল্টেজ ম্যাচটিতে টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেন অজি অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। ইনিংসের শুরু থেকেই ইংলিশরা ছিল চিরাচরিত মারমুখী ভঙ্গিতে। বিশ্ব ক্রিকেটে তারা এমন বাজবল খেলার জন্য বিখ্যাত। যদিও ম্যাচের ফল অনেক সময় পক্ষে থাকে না। তবে থোড়াই কেয়ার করা ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়ান বোলারদেরও সেই আগুনে মেজাজেই তুলোধুনো করেছেন।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ছিল নিউজিল্যান্ডের। ২০০৪ আসরে তারা যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ৩৪৭ রান করেছিল। সেই ম্যাচে কিউইদের প্রতিপক্ষ ছিল আইসিসির একটি সহযোগী দেশ। কিন্তু আজ একঝাঁক রেকর্ডগড়া ইংল্যান্ড রেকর্ড গড়েছে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ছয়বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ওপেনার ডাকেটের ইনিংসটি থেমেছে ১৬৫ রানে, এ ছাড়া জো রুট করেছেন ৬৮ রান। আরও কয়েকটি ছোট ক্যামিওতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৮ উইকেটে ৩৫১ রান।
এতদিন ইংল্যান্ডের জার্সিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান ছিল রুটের ১৩৩। আজ সেটিকে ছাড়িয়ে ডাকেট চলে গেলেন অনেকদূর। কেবল তাই নয়, অজিদের বিপক্ষে তার ১৬৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসটি আইসিসির সাদা বলের কোনো বৈশ্বিক ইভেন্টেও ইংল্যান্ডের যেকোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসটি ছিল দুজনের। নিউজিল্যান্ডের নাথান অ্যাস্টল ও জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার সমান ১৪৫ রান করেছেন।
এমন ইতিহাসগড়া ম্যাচের শুরুতে অবশ্য ইংল্যান্ড ছিল নড়বড়ে। দলীয় মাত্র ১৩ রানেই ওপেনার ফিল সল্টকে (১০) দুর্দান্ত এক ক্যাচে ফেরার অ্যালেক্স ক্যারি। পুরো ম্যাচে তিনি এমন ক্যাচ ধরেছেন দুটি। এরপর ওয়ান ডাউনে নামা জেমি স্মিথও (১৫) বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। প্রথম উইকেট নেওয়া বেন দারউইসের বলেই তিনিও ক্যাচ দেন ক্যারির হাতে। অস্ট্রেলিয়ার খুশির মুহূর্ত বলতে এতটুকুই, এরপর ডাকেট-রুট মিলে তাদের হতাশা কেবলই বাড়িয়েছেন। দুজন মিলে গড়েন ১৫৮ রানের জুটি। যা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যেকোনো জুটিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
৭৮ বলে মাত্র ৪টি চারের বাউন্ডারিতে ৬৮ রান করেছেন রুট। অ্যাডাম জাম্পার বলে এলবিডব্লু হওয়ার আগে তিনিও একাধিক রেকর্ড গড়েছেন। এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে বেশি গড় জো রুটের (৫৫.৪৪)। এ ছাড়া আগে ব্যাট করতে নেমে তিনিই ইংল্যান্ডের জার্সিতে সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক (৩৭১৯)। রুটের পর হ্যারি ব্রুকও (৩) বিদায় নেন দ্রুতই। এরপর বাটলার (২৩) এবং লিভিংস্টোনও (১৪) বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি ডাকেটকে। তবে কাজের কাজ তো করেই দিয়েছেন এই বাঁ-হাতি ওপেনার।
৪৮তম ওভারে মার্নাস লাবুশেনের একেবারে স্লো এক ডেলিভারির গতি বুঝতে ভুল করেন ডাকেট। যাতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে থামে তার ম্যারাথন ইনিংসটি। ১৪৩ বলে ডাকেট ১৭টি চার ও ৩ ছক্কায় ১৬৫ রানের ইনিংসটি সাজিয়েছেন। এ ছাড়া শেষদিকে জোফরা আর্চার ১০ বলে ২১ রানের ক্যামিও ইনিংসে নিশ্চিত করেন ইংলিশদের বিশ্বরেকর্ডগড়া ৩৫১ রান। অজিদের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নিয়েছেন দারউইস। এ ছাড়া জাম্পা ও লাবুশেন ২টি করে উইকেট শিকার করেন।